Bangladesh

বিদ্যুৎ চোরেরা বেপরোয়া

ঢাকার ফুটপাত ও বস্তির পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইকে যাচ্ছে চুরির বিদ্যুৎ

ঢাকার অলিগলি ও ফুটপাতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন পণ্যের দোকানে আলো জ্বলছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে। বিদ্যুতের মূল লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে এসব দোকানির কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। এ ছাড়া ঢাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চালকরা চুরির বিদ্যুতে নিজেদের যানের ব্যাটারি চার্জ করছেন। আইনে বিদ্যুৎ চুরির জন্য জেল-জরিমানার বিধান থাকার পরও বিদ্যুৎ চোরেরা বেপরোয়া। তারা প্রতি সপ্তাহে অবৈধ এই বিদ্যুতের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। চুরির এই বিদ্যুৎ থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার ভাগ যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে সমন্বিতভাবে পুলিশ, সিটি করপোরেশনসহ সব স্টেক হোল্ডারকে একসঙ্গে নজরদারি করতে হবে।

তথ্য বলছে, ১ হাজার ৫২৯ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত রয়েছে। এসব ফুটপাতের সাড়ে ৩ লাখ দোকানে প্রায় ৫ লাখ অবৈধ বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে। বাতি প্রতি গড়ে ৩০ টাকা হিসাবে দিনে আদায় হয় দেড় কোটি টাকা। সে হিসাবে মাসে ৪৫ কোটি আর বছর শেষে অঙ্ক দাঁড়ায় ৫৪০ কোটিতে। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার এ টাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির অসাধু কর্মচারী এবং এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পকেটেই যাচ্ছে। তবে ফুটপাতের দোকানে বিদ্যুৎ খরচের বেশির ভাগ হিসাব নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। এ বিষয়ে  তথ্য নেই ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) কর্তৃপক্ষের কাছেও। সরেজমিন ঘুরে রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর-২ নম্বর থেকে শুরু করে মিরপুর-১০, মিরপুর ১৪ নম্বর, ফার্মগেট, পীরেরবাগ, মতিঝিল, গুলিস্তান এবং মোহাম্মদপুরসহ অন্যান্য এলাকায় চুরির বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেখা যায়। ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানের ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ এলাকার অবৈধ বিদ্যুৎ চোর চক্রের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক চুক্তিতে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। প্রায় সব অবৈধ সংযোগই সরাসরি বিদ্যুতের মূল লাইন থেকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন বস্তি এলাকা, রিকশা ও ইজিবাইক চার্জের গ্যারেজও চলছে চুরির বিদ্যুতে। বিভিন্ন এলাকার এসব অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এসব অবৈধ সংযোগের জন্য প্রতি সপ্তাহে টাকা দেন। এক-একটি বাতির জন্য তাদের ২০ থেকে ৩০ টাকা করে দিতে হয়। ফলের দোকানের ব্যবসায়ীরা দিনের বেলাতেও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বাতি জ্বালিয়ে রাখছেন। এতে প্রচুর বিদ্যুতের অপচয় হয়। ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাত বা রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে বাহারি পণ্যের দোকান। শীতে গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর ভ্যান বা প্লাস্টিক বিছিয়ে নতুন করে দোকান দিয়েছেন। সেখানে দুই-তিনটি করে এলইডি বাতি জ্বলতে দেখা যায়। বিদ্যুতের গ্রাহকরা বলছেন, ডিপিডিসি ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুৎ চুরির বিষয়গুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই ওপেন সিক্রেট। দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এলাকার চিহ্নিত দালালচক্র ইচ্ছামতো আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুতের লাইনে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগিয়ে আয় করছে। এ জন্য দালালরা নিজেরাই মই বানিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের ইচ্ছামতো যখন যেখানে লাইন দেওয়া দরকার সেভাবেই দিয়ে দিচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের যখন যা দিয়ে ‘খুশি’ করা দরকার সেভাবেই খুশি করছে বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ। এদিকে ফুটপাতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে, তার প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার চার্জ করতে গচ্চা যাচ্ছে। অথচ এ বিদ্যুৎ বাবদ খুবই সামান্য রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে। জানা যায়, ঢাকা ও আশপাশে কমপক্ষে ৩ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলছে। সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ ওয়াট হিসেবে ৫ থেকে ৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। আর এসব যানের চার্জ হয় বেশিরভাগই অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগে। যদিও বিদ্যুৎ আইন-২০১৮ তে বিদ্যুৎ চুরির জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ড বা চুরি হওয়া বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করলে পাঁচ বছরের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

কিন্তু এরপরও বিদ্যুৎ চোরদের ঠেকানো যাচ্ছে না।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ফুটপাতে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি অস্বীকার করব না। এটি আগের তুলনায় কমেছে। আমরা নিয়মিত সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু চুরি ঠেকানো যায় না। এ ছাড়া ইজিবাইকের চার্জের ক্ষেত্রে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে চার্জ নির্ধারণ করেছি। কিন্তু এরপরও ইজিবাইক চালকরা চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এটি ঠেকানোর জন্য আমাদের নির্ধারিত টাস্কফোর্স কাজ করছে। এই টাস্কফোর্স গোপন ভিত্তিতে কোনো বিদ্যুৎ চুরির সংবাদ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। আমাদের তিনটি বিদ্যুৎ কোর্ট আছে। সেখানে আমরা বিদ্যুৎ চুরির বিচারগুলো করি। তবে বিদ্যুৎ চুরির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির লাইনম্যানদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি বলতে পারছি না। ফুটপাতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য অনেক স্থানে মিটারিং ব্যবস্থা আছে উল্লেখ করে বিকাশ দেওয়ান বলেন, এরপরও কোনো বড় শপিং মল কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন তাদের লাইন থেকে বিদ্যুৎ অন্যকে দেবেন তখন আমাদের কিছু করার নেই।

Show More

7 Comments

  1. Unquestionably believe that which you said.
    Your favorite reason appeared to be on the net the easiest thing to be aware of.
    I say to you, I certainly get annoyed while people think about worries that they just do not know about.
    You managed to hit the nail upon the top and defined out the
    whole thing without having side-effects , people can take a signal.

    Will probably be back to get more. Thanks

    my site vpn coupon code ucecf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button