Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

বিদ্যুৎ জ্বালানিতে যথেচ্ছ লুট

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুচরায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ, গত সাড়ে ১৫ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৪২ শতাংশ। ২০০৯ সালে গ্যাসের দুই চুলার মাসিক বিল ছিল ৪৫০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ গেল সাড়ে ১৫ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। এই সময়ে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান ঠেকেছে ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। বিপরীতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিপুল লোকসানের জন্য বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও দায়মুক্তি আইনের আড়ালে দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানকে দায়ী করেন। পাশাপাশি ওই সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন মহলের দুর্নীতি এ খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করেন তারা।

দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিকে পুঁজি করে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধান পাস করা হয় ২০১০ সালে। এই আইনে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এর পর দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার অবাস্তব প্রাক্কলন করে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রকল্প দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ ‍উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রকল্পের কাজ পান।

সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাক্যাট, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন, বারাক, সিনহাসহ বেশ কিছু কোম্পানি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। যদিও এত বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ফলে অনেক কেন্দ্রই নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শত শত কোটি টাকা আয় করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি ও রিলায়েন্সকে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ব্যবসা। রাশিয়া ও চীনের কোম্পানিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়া হয় বেশি দামে। জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনঘেঁষে ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশীয় উৎপাদন ও অনুসন্ধানের দিকে নজর না দিয়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্যে এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পছন্দের কোম্পানিকে এলএনজি ব্যবসায় যুক্ত করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

চার সিন্ডিকেটের দাপট
অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে মোটা দাগে চারটি সিন্ডিকেট লুটেপুটে খেয়েছে। শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিদ্যুতের চেয়ে জ্বালানি খাতে তাঁর প্রভাব ছিল বেশি। বিশেষ করে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়া, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি ও এলপিজি ব্যবসায় সুযোগ বৃদ্ধি, কূপ খননসহ বিভিন্ন কাজে উপদেষ্টা প্রভাব বিস্তার করতেন বলে জানা গেছে।

গ্যাস সংকটের কারণে সরকার দীর্ঘদিন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখে। তবে বিশেষ বিবেচনায় শিল্পে কিছু গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তৌফিক-ই-ইলাহী ছিলেন এ-সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রধান। এই কমিটির বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তবে তাঁর প্রভাব বেশি ছিল বিদ্যুতে। জ্বালানিতে নানা কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টার মতবিরোধ ঘটে।

স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে বাধা সৃষ্টি করায় নাজিম উদ্দিন চৌধুরীসহ জ্বালানি বিভাগের একাধিক সচিবের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস, যিনি পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হন; তাঁর সঙ্গে নসরুল হামিদের বিরোধ ছিল সচিবালয়ে আলোচিত ঘটনা। নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এক ভাতিজা ও কেরানীগঞ্জের শাহীন চেয়ারম্যান মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ নেতাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে স্থান দিয়ে সিন্ডিকেট করারও অভিযোগ রয়েছে। সিলেটের বিভিন্ন গ্যাসকূপ খননে চীনের সিনোপ্যাককে কাজ দেওয়ায় নসরুল হামিদের প্রভাব ছিল বলে জানা যায়। তাঁর ছোট ভাই ইন্তেখাবুলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে জোট করে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে– ডিপিডিসি, পিডিবি, ডেসকো, আরইবি ও নেসকোর অ্যাডভান্স মিটারিং, মিটার স্থাপন, বিলিং প্রকল্প ও নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি-সংক্রান্ত প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। যেমন– পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি বিদেশি দুটি কোম্পানির সঙ্গে একটি এলপিজি প্রকল্পের কাজ পায়। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি আলোর মুখ না দেখলেও অভিযোগ আছে, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারধারী কামরুজ্জামান চৌধুরী সম্পর্কে নসরুল হামিদের মামা।

গত দুই বছরে ২৭টি সোলারভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের অধিকাংশই সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি। তাদের মধ্যে নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া আছে নাহিম রাজ্জাকের একটি, বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুসের একটি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের একটি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ছোট ভাইয়ের একটি, আবদুস সালামের একটি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একটি, টাঙ্গাইলের তানভীর হাসানের (ছোট মনি) একটি, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুর রহমানের একটি, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপির একটি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এক এমপির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসেবে আখের গুছিয়েছেন একাধিক আমলা। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল নামে বিতর্কিত প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখে তৎকালীন বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস, অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবীর ও খালিদ মাহমুদ, আইপিপি সেলের বিভিন্ন সময় পদে দায়িত্বে থাকা গোলাম কিবরিয়া, মাসুদ আল বিরুনী ও মাহবুবুর রহমান হাত ধরে। আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস পরে মুখ্য সচিব হয়ে বিদ্যুতের অনেক প্রকল্প নয়ছয়ে ভূমিকা রাখেন। এই কর্মকর্তারা সুবিধা নিয়ে অতিরিক্ত দামের বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি করতে ভূমিকা রাখেন। বিশেষ আইনে প্রকল্পের দরদাম ঠিক করতে যে নেগোশিয়েশন কমিটি থাকে, তার প্রধান হন বিদ্যুৎ সচিব। জানা যায়, একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো।

অবসরের পর বিতর্কিত এস আলম গ্রপের বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরামর্শক হন আলমগীর কবীর। বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে সুবিধাভোগী সামিট গ্রুপের মুখ্য অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব নেন আবুল কালাম আজাদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে চাহিদা না থাকলেও কয়েকটি কোম্পানিকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেয় সরকার। এই প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত করতে ভূমিকা ছিল কায়কাউসের। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে যে অবৈধ লেনদেন ঘটে, তার অধিকাংশ হয় বিদেশে।

বিদ্যুতের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন ২০১৫ সালের মে মাসে এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আলমের বিরুদ্ধে ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। এপিএসসিএলের ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্পেনের দুটি কোম্পানি টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকের কাছ থেকে এই ঘুষ নেন তারা।

সমঝোতার মাধ্যমে দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্রয় চুক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। বলা হয়, টেন্ডার না করার ফলে বেশি দামে অধিকাংশ প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। বিশেষ করে সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে। ভারতের চেয়ে কয়েক গুণ দামে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট এক সময় ২৩ টাকা পর্যন্ত দাম ধরে চুক্তি করা হয়। বেক্সিমকোকে ২০০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেওয়া হয় ১৪ টাকা দরে। আর ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে গড়ে ৫ টাকা ৮১ পয়সা এবং পাকিস্তানে ৩ টাকা ৫১ পয়সা।

হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট
সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১১২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সামিট গ্রুপের আয়ও প্রায় একই।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশই গেছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে, প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা। 

সামিট ছাড়াও বিদ্যুৎ খাতের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ, বাংলাক্যাট, হোসাফ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, বারাকা, এনার্জিপ্যাক ইত্যাদি।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার পছন্দের ব্যবসায়ীদের বিদ্যুতের ব্যবসা দিয়েছে প্রতিযোগিতা ছাড়াই। এ খাতে কোথায়, কত টাকা খরচ করেছে– তা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ রাখেনি। আইন করে দায়মুক্তি দিয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto