Bangladesh

বিপুল ব্যয়ে নতুন রাজধানী গড়ছে মিসর, যা থাকবে এই শহরে

নতুন একটি রাজধানী শহর গড়ে তুলছে মিসর। শত শত কোটি ডলার খরচ করা হচ্ছে এই শহর নির্মাণে। আগে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, রাজধানী শহরের আকার এখন তার দ্বিগুণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত যে কোম্পানি তার প্রধান জানিয়েছেন, কিছু বাসিন্দা এরই মধ্যে শহরটিতে থাকার জন্য চলে এসেছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমান রাজধানী কায়রোর ৪৫ কিলোমিটার বা ২৮ মাইল পূর্ব দিকে মরুভূমির মধ্যে জাঁকালো এই শহরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিসরে যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই নতুন শহর নির্মাণ। প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার।

প্রেসিডেন্ট আল-সিসি আরও মনে করেন, মিসরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাসস্থান নিশ্চিত করতে শহর নির্মাণ জরুরি। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব মেগা প্রকল্প সম্পদ খেয়ে ফেলছে এবং মিসরের ঋণভার বাড়াচ্ছে। আরব এই দেশটির জনসংখ্যা এখন ১০ কোটি ৫০ লাখ।

যেসব মন্ত্রণালয় ও দপ্তর নির্মাণ করা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে সেসবের জন্য গত জুলাই মাসে সরকারি কর্মীদের বদলি করা হয়েছে। আট বছর আগে এই প্রকল্প প্রথম শুরু করা হয়। তখন থেকে এটি পরিচিত ‘নতুন প্রশাসনিক রাজধানী’ হিসেবে।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটাল ফর আরবান ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান খালেদ আব্বাস রয়টার্সকে বলেছেন, প্রতিদিন প্রায় ৪৮ হাজার কর্মী নতুন শহরে কাজের জন্য যাচ্ছেন।
অব্যবহৃত জমিতে শহরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কায়রোর বিশৃঙ্খল পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার এই শহরটিকে মিসরের উচ্চ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার চাইছে, মিসরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটা অংশ এই শহরে বাস করুক। দেশটিতে প্রতিবছর ১ দশমিক ৬০ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, নির্মাণকাজ সম্প্রতি খানিকটা শ্লথ হয়েছে। তবে প্রথম পর্যায়েই শহরে একটি ৭০ তলা টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যা আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে উঁচু। এ ছাড়া তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি হলসহ একটি অপেরা হাউস, একটি বিশাল মসজিদ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ক্যাথিড্রাল।

পূর্ব কায়রো থেকে একটি ইলেকট্রিক ট্রেন গত বসন্ত থেকে নতুন শহরে আসতে শুরু করেছে। খালেদ আব্বাস জানিয়েছেন, একটি মনোরেল চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে চালু করা হবে। মানুষের থাকার জন্য এক লাখের মতো বাসস্থান এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে এবং ১ হাজার ২০০ পরিবার এসব বাসায় থাকা শুরু করেছে।

২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বড় বড় ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রধান কার্যালয় এই শহরে নিয়ে যাবে।

নীল নদের পানি

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটাল ফর আরবান ডেভেলপমেন্ট রাজধানী শহরের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায় গড়ে তুলতে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করবে এবং এ কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে শহরটিতে ১৫ লাখ করে বাসিন্দা যোগ হবে। প্রতিটি পর্যায়ের নির্মাণের জন্য ১৬৮ বর্গকিলোমিটার করে জমি ব্যবহার করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ এই বছরের আরও পরের দিকে শুরু হয়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটাল ফর আরবান ডেভেলপমেন্টের খালেদ আব্বাস বলেন, ‘প্রচুর চাহিদা আসছে আমাদের কাছে। সে কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ আমাদের দ্রুত শুরু করতে হবে। যদি চাহিদা আরও বাড়ে, তাহলে এক বছর কিংবা তার কিছু সময় পরে আমরা তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করব।’

এই শহরে ১০ কিলোমিটার লম্বা একটি পার্ক বা উদ্যান থাকবে, যেখানে সবুজ গাছপালার জন্য সেচের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পানি দেওয়া হবে। এই পার্কের ল্যান্ডস্কেপিং এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। পার্কটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্রিন রিভার’ বা সবুজ নদী।

কায়রো শহরতলির মাদি থেকে প্রতিদিন আট লাখ বর্গমিটার পানি আনা হবে। এই পানি নীল নদ থেকে পাওয়া যাবে। পানি সরবরাহের এই প্রকল্প শুরু হচ্ছে আগামী দুই বছরের মধ্যে। আরেকটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখান থেকে সাত লাখ বর্গমিটার পানি পাওয়া যাবে। এই দুই প্রকল্পের জন্য নীল নদ থেকে মিসরের প্রাপ্য পানির ১ শতাংশ ব্যয় করা হবে।

মিসরের নতুন রাজধানী শহরে থাকবে খেলাধুলার জন্য একটি বিশাল এলাকা। অলিম্পিক সিটি নামে পরিচিত এই এলাকায় থাকবে ৯৩ হাজার আসনবিশিষ্ট একটি স্টেডিয়াম। খালেদ আব্বাস বলছেন, এই স্পোর্টস সিটি চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উদ্বোধন করা যাবে।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটাল ফর আরবান ডেভেলপমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানটির ৫১ শতাংশের মালিক মিসরের সেনাবাহিনী। বাকি ৪৯ শতাংশের মালিকানা আবাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে। খালেদ আব্বাস জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ের অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে ৫০ হাজার কোটি মিসরীয় পাউন্ড খরচ করা হয়েছে।

বর্তমান বিনিময় হারে এই অর্থ ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলাররে সমান। তবে ২০২২ সালে শুরু হওয়া মিসরীয় পাউন্ডের অবমূল্যায়নের আগে এই অর্থ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। খালেদ আব্বাস বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের অবকাঠামো গড়তে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি পাউন্ড খরচ করতে হবে।

২০১৯ সালে নতুন রাজধানী শহর নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

মিসরীয় মুদ্রা অতিমূল্যায়িত থাকার কারণে দেশটির অর্থনীতি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়ে। পাশাপাশি প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে এই চাপ আরও বাড়ে। এর আগে দেশটির সরকার বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ঋণ করে।

অর্থ সংস্থানের জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটাল ফর আরবান ডেভেলপমেন্ট চলতি বছরের মধ্যে তার ৫ থেকে ১০ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। খালেদ আব্বাস বলছেন, এর ফলে ১৫ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড অর্থ হাতে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারবাজারে যাওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

Show More

7 Comments

  1. Hey! I realize this is kind of off-topic but I needed to ask.

    Does running a well-established blog such as yours
    take a lot of work? I am completely new to operating
    a blog however I do write in my diary everyday.
    I’d like to start a blog so I can easily share my
    personal experience and thoughts online.
    Please let me know if you have any kind of ideas
    or tips for brand new aspiring bloggers. Thankyou!

    Also visit my blog post :: vpn coupon ucecf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button