Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

বিমানের ঘাড়ে ৫০ হাজার কোটির বোঝা

ইতিহাসের বড় ক্রয় পরিকল্পনায় অর্থের জোগান নিয়ে ধোঁয়াশা

পাল্টা শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে ২৫টি বিমান কিনবে বাংলাদেশ। জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য এই উড়োজাহাজ কেনা হবে। এর মধ্যে কিছু বিমান আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে। তবে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না বিমান।

রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার জন্য এটিই হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান ক্রয় পরিকল্পনা। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এই বিশাল বহরের ভার কিভাবে বহন করবে বিমান, যে সংস্থা এখনো লাভজনক ধারায় স্থিত নয় এবং যাদের অনেক রুটেই ফ্লাইট পূর্ণ হয় না।

সরকার বলছে, নতুন চুক্তি বাংলাদেশের আকাশপথ সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক সংযোগকে আরো গতিশীল করবে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ হিসাবপত্র বলছে ভিন্ন কথা, বিমান বর্তমানে ফ্লাইট পরিচালনায় নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে, লোকসানি রুট বন্ধ করতে পারছে না এবং কর্মী কাঠামো অতিরিক্ত ভারী।

এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেসব উড়োজাহাজ কেনার জন্য বিমানকে অর্থনৈতিক দায় নিতে হবে, সেই প্রতিষ্ঠানকেই অন্ধকারে রেখে এমন বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২৫টি নতুন বোয়িং কেনা নিঃসন্দেহে একটি সাহসী উদ্যোগ। কিন্তু সেই সাহস যেন ভারে ন্যুব্জ এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হয়। বিমানকে একটি সুসংগঠিত, দক্ষ ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আগে প্রয়োজন ছিল।

তা না করে সরাসরি বহর বাড়ানোর পথে হেঁটে সরকার ভবিষ্যতের ঘাড়ে এমন একটি বোঝা চাপিয়ে দিল, যেটি টেনে নেওয়া সহজ না-ও হতে পারে। নতুবা সেগুলো থাকবে হ্যাঙ্গারে চুপচাপ, ধুলায় ঢাকা, কোটি কোটি টাকার বোঝা হয়ে।

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিমানের বহর বাড়াতে হবে, এই পরিকল্পনা সরকারের আগেই ছিল। পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে নতুন করে অর্ডারগুলো দেওয়া হয়েছে। আগে ছিল ১৪টি, এখন ২৫টি।

ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া সবাই দিচ্ছে। অর্ডারের বোয়িং পেতে অনেক সময় লাগবে। যারা আগে অর্ডার দিয়েছে তাদের আগে দেবে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী বিমান সরবরাহ করবে। বাংলাদেশের অতি দ্রুত কিছু বোয়িং দরকার। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে হয়তো কিছু বিমান পাওয়া যাবে। বিমান কেনা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।’
এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এড়াতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নই।’

বিমানের সাবেক পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘বিমানের ফ্লিট প্ল্যানিং কমিটি তথা বিমানকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কয়টি উড়োজাহাজ কিনবে; কোথায়, কিভাবে সেগুলো ব্যবহার করবে। চালাবে তো বিমানই, ঋণের দায়ও তাদের। তাদের না জানিয়ে এমন বড় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি। এখন এই বিশাল বহরের আর্থিক দায় বিমান কিভাবে বহন করবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২১০ কোটি ডলারে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি ছিলেন বিমানের বোর্ডে। সে সময় বোর্ড ও ফ্লিট প্ল্যানিং কমিটি সবকিছু যাচাই করে, দর-কষাকষি করে বোয়িংয়ের কাছ থেকে কিছু বাড়তি সুবিধাও আদায় করে সিদ্ধান্ত নেয়।

খরচ কত হবে?

বোয়িংয়ের নিজস্ব তালিকামূল্য অনুযায়ী, ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের দাম প্রায় ২৯২ মিলিয়ন ডলার এবং ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজের দাম ১২১.৬ মিলিয়ন ডলার। সূত্র বলছে, বাংলাদেশের পছন্দের তালিকায় ১০টি ড্রিমলাইনার ও ১৫টি ম্যাক্স রয়েছে। সেই হিসাবে মোট মূল্য দাঁড়ায় ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও বাস্তবে বড় অর্ডারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়, তবু এই অঙ্ক প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।

অর্থায়নের উৎস কী?

বোয়িং চুক্তির অর্থ কোথা থেকে আসবে, এই প্রশ্নের উত্তরে বিমান সূত্র বলছে, বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ, এক্সিম ব্যাংক ইউএসএর সহায়তা, আংশিক সরকারি ভর্তুকি। কিন্তু এত বড় ঋণ পরিশোধে বিমানের আর্থিক সক্ষমতা কতটা রয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যাত্রী না বাড়িয়ে, রুট না বাড়িয়ে, মুনাফা না বাড়িয়ে যদি নতুন ঋণ নেওয়া হয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতের জন্য ‘ঋণফাঁদ’ হয়ে দাঁড়াবে।

আর্থিক অবস্থা

বিমান বাংলাদেশ ২৩টি আন্তর্জাতিক ও আটটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। যাত্রী পরিবহন ও মালপত্র পরিবহন (কার্গো) বিমানের মূল কাজ। এর বাইরে বিমানের আরো কিছু সেবা আছে। এর মধ্যে আছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার (বিএফসিসি), বিমান পোলট্রি কমপ্লেক্স (বিপিসি) ইত্যাদি।

কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বলে আসছে যে তারা লাভে চলছে। বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা প্রকাশ পাচ্ছে না। এয়ারলাইনসবহির্ভূত বিমানের সাবসিডিয়ারি কম্পানির (নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান) ব্যবসায় যে লাভ হচ্ছে, সেটাই বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এটি সরাসরি এয়ারলাইনস ব্যবসা নয়। তবে এমন খাতের আয় দিয়েই মূলত লাভ দেখাচ্ছে বিমান।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মোট ১০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে নিট মুনাফার পরিমাণ ২৮২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ ৮০০ কোটি ছাড়াবে বলে জানা গেছে।

বর্তমান বহরের বাস্তবতা

বর্তমানে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। ২৫টি অতিরিক্ত বিমান যোগ হলে বিমানকে বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ নতুন ফ্লাইট চালাতে হবে, যা বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে সম্ভব নয়। সংস্থাটিতে পাইলট, ক্রু ও প্রকৌশলীর সংকটও রয়েছে।

বিমানের যাত্রীসংখ্যা প্রতিবছর গড়ে ৪ থেকে ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে, কিন্তু তা দিয়ে বিশাল বহরের ব্যয় পূরণ করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহর বাড়িয়ে যদি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ঢাকতে চায়, তাহলে সেটা আত্মঘাতী হবে।

নতুন বিমান মানেই নতুন সমস্যা?

বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক এক সদস্য বলেন, ‘বিমান যদি ফ্লাইট পরিচালনার সক্ষমতা, ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ না বাড়ায়, তাহলে নতুন বিমান আরো চাপ সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, যতগুলো বিমানই আনা হোক, যদি তা নিয়মিত উড়তে না পারে, যাত্রী না পায়, রুট না খোলা হয় তাহলে সেগুলো স্থবির সম্পদে পরিণত হয়।

সক্ষমতা না থাকলে কেনা হচ্ছে কিভাবে?

সরকার সূত্রে জানা গেছে, বোয়িংয়ের 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমানের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি অলস পড়ে আছে। পাইলটসংকট, রুট সংকোচন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতির কারণে সব উড়োজাহাজ নিয়মিত চলতে পারে না। বর্তমানে বিমানের লোড ফ্যাক্টর মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ আসনের এক-তৃতীয়াংশ ফাঁকা থাকে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট ছাড়া দেশের কোনো বিমানবন্দর বড় মাপের ড্রিমলাইনার পরিচালনায় প্রস্তুত নয়। ফলে অতিরিক্ত বহর কার্যকরভাবে কাজে লাগানো কঠিন হবে বলেই আশঙ্কা।

পুরনো ঋণও বাকি, নতুন দায় চাপছে

বিমান বাংলাদেশ এরই মধ্যে আগে কেনা ১০টি বোয়িং বিমানের ঋণ এখনো পরিশোধ করেনি। ২০০৮-১৪ সালের মধ্যে কেনা ওই বিমানের জন্য প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ছিল, যার সুদসহ পরিশোধ এখনো চলমান। নতুন করে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার ফলে বিমানের ওপর বোঝা আরো কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto