বিলিয়ন ডলার রফতানির সম্ভাবনা
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রস্তুত বিপুল তরুণ-তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আইডিয়া :: বিদেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার ও নির্ভরশীলতা কমানো, দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প স্থাপনে সহায়তার দাবি :: বিদেশি বিনিয়োগে রাজনৈতিক ও রেগুলেশনের স্থিতিশীলতা চান উদ্যোক্তারা
তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হচ্ছে, তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ দিনের পর দিন এই খাতে কেবল লিপ-সার্ভিসই পেয়েছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সময়ে ১৫ বছরে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখানো, প্রচুর অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এর সুফল পায়নি মানুষ। ফলে আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স, স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সূচক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচক, সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স, ডিজিটাল জীবনমান সূচক, ই-গভর্নমেন্ট সূচক, ই-সিকিউরিটি র্যাংকিং, ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতাসহ প্রায় সব সূচকেই রয়েছে পেছনের সারিতে। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ তরুণ জনগোষ্ঠী, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিঙ্গাপুরের মতো তথ্যপ্রযুক্তির বড় কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ। সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে দ্রুতই তিন বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা, দেশীয় প্রযুক্তিকে প্রধান্য দেয়া, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা।
তারা বলেন, দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করে একটি সম্পূর্ণ স্বনির্ভর আইটি শিল্প গড়ে তোলা উচিত। এর মাধ্যমে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে নতুন প্রযুক্তির বিকাশ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য উন্নত গবেষণা এবং উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একটি নিরাপদ এবং কার্যকর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি শক্তিশালী আইসিটি এবং টেলিযোগাযোগ খাত দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সেক্টর দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি লাভ করবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, এক দশকে প্রযুক্তি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এতে শুধু কিছু দালানকোঠা তৈরি হয়েছে। কোনো কর্মসংস্থান হয়নি। নতুন সরকারের উচিত কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্ব দেয়া; বরং এই সময়ে কেবল লিপ-সার্ভিস দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত দিনে এই খাতে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা ব্যক্তি উদ্যোগে হয়েছে, নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে করেছে। আর সরকার যেসব প্রকল্প নিয়েছে তা লুটপাটেই খরচ হয়েছে। ফাহিম মাশরুর বলেন, আমরা এখনো এক বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে পারিনি, কিন্তু যদি বিনিয়োগগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, জনশক্তিগুলোকে কাজে লাগানো যায় তাহলে পাকিস্তানের মতো তিন বিলিয়ন ডলার রফতানি অর্জন করা আমাদের অল্প কিছু সময়েই অর্জন করা সম্ভব।
বাংলাদেশকে প্রযুক্তির হাব হিসেবে গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে জানিয়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী বলেন, সিঙ্গাপুর এখন প্রযুক্তির হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশেও একইরকম হাব তৈরির সুযোগ রয়েছে। যেমনÑ সেখানে (সিঙ্গাপুর) নতুন করে কোনো ডাটা সেন্টার করা হচ্ছে না, অন্যদিকে বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার করলে বাংলাদেশসহ আশপাশের ৫৫ কোটি মানুষকে এর সাথে সংযুক্ত করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের উদ্যোগ, সঠিক নীতিমালা ও সহযোগিতা। এছাড়া এখানে বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীও রয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি বিভাগ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। এরপরও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৬২। সূচকে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। ওকলা স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স মে, ২০২৪ এর ইন্টারনেট গতির তালিকায় ১৪৭ দেশের মধ্যে ইন্টারনেট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এ ক্ষেত্রে কেনিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮, তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের উপরে। আইএমএফের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচকে জুন, ২০২৪ এ ১৭৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম, তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২৩-এর ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১২১ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়েছে পাঁচ ধাপ। সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। ই-গভর্নমেন্ট সূচকে বাংলাদেশ তালিকার ৭৩-এ যা বৈশ্বিক গড়মানের নিচে, ই-সিকিউরিটি র্যাংকিংয়ে ৮৫তম স্থানে এবং ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতার হিসাবে ৭৭তম অবস্থানে। মার্কিন সাময়িকী সিইও ওয়ার্ল্ডের এপ্রিল ২০২৪-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সিংয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেখানে সেরা গন্তব্যের ৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯ নম্বরে। তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো একই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ শুরু করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ফিলিপাইন। এই সময়ে এই এসব দেশ এই খাত থেকে এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রফতানি করছে। প্রচুর পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখনো এক বিলিয়ন ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারেনি। জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভারত বছরে ১৯৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করে। ভিয়েতনাম এই খাতে ৩০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৮ বিলিয়ন, পকিস্তানও তিন বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। অথচ বাংলাদেশ এই খাতে এখনো এক বিলিয়ন ডলারও আয় করতে পারেনি।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতে দক্ষ লোকের ঘটতি রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ, ইউরোপে ২৫ লাখ, যুক্তরাজ্যে ১০ লাখ, জাপানে পাঁচ লাখ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পরিমাণ দক্ষ জনগোষ্ঠীর ঘাটতি রয়েছে তার যদি ১ শতাংশ পূরণ করা যায় তাহলে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া আফ্রিকা থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়া প্রশান্ত মহাসগারীয় দেশগুলোতে সফটওয়্যার রফতানি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রযুক্তিবিদরা বলেন, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে মোবাইল ডেটার দাম, কলরেট যৌক্তিকীকরণ ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পর্যালোচনা; স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি; সরকারি ও জরুরি সেবায় টোল-ফ্রি ও ডেটা-ফ্রি করা; সাইবার নিরাপত্তার পর্যালোচনা ও নিশ্চিতকরণ; ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা সমাধানে টাস্কফোর্স তৈরি ও পদক্ষেপ গ্রহণ; অনলাইন জুয়ার প্রসার ও অন্যান্য সাইবার অপরাধ ঠেকাতে সমন্বয়; প্রাতিষ্ঠানিক আইসিটি সার্ভিস রফতানি বৃদ্ধি; বিদেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার ও নির্ভরশীলতা কমানো; জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন ও আইওটি কৌশল এবং রোডম্যাপ; সরকারি প্রযুক্তি-সংক্রান্ত টেন্ডারিং সিস্টেম সংস্কার; আইসিটি বিভাগের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির ব্যাপক পরিবর্তন; সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বা ক্যাশলেস পেমেন্ট ও ট্রান্সফার প্রচলন; অ্যাপ মনিটাইজেশন সহজীকরণ; দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প স্থাপনে সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর বলেন, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম এখনো অনেক বেশি। মোবাইল ফোনের পেনিট্রেশন ৪০ শতাংশ। উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাইলে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের দাম কমাতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পটা এখনো কেবল জবের ওপরই নির্ভরশীল। বিভিন্ন ব্যাংক, প্রতিষ্ঠানে চাকরির এখনো প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই এই খাতে বড় কিছু অর্জন করতে হলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এখানে জুনিয়র অনেক প্রযুক্তিবিদ আসছে কিন্তু তাদেরকে যারা গড়ে তুলবে বা নেতৃত্ব দেবে সেরকম টিম লিডারের সংখ্যা নেই বললেই চলে। যাও দু’-চারজন তৈরি হয় তারা বিদেশে চলে যায়। আবার ভারতে নন-রেসিডেন্স ইন্ডিয়ানরা বাইরে থেকেও তাদের দেশের উদ্যোক্তাদের গড়ে তুলে এবং কাজ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশিরা এখনো সে পর্যায়ে পৌঁছেনি যে, কাজ দিতে পারবে। ফলে বাংলাদেশের যারা কাজ করছে তারা বড় কাজ ধরতে পারছে না। যা হচ্ছে তা ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে ছোট ছোট কিছু কাজ।
তিনি বলেন, আমাদের লোকাল মার্কেট এখনো আউটসোসিং-নির্ভর। তবে আমাদের লোকাল মার্কেটটি নিজেদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি অন্তত দুই বছর দেশীয় প্রযুক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর জোর দেয়া এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করা।
তিনি আরো বলেন, এত দিন সরকার যেটি ব্যয় করেছে সেটি কোনো পরিকল্পিত ছিল না; বরং সেই অর্থ যদি ৫০-১০০টি কোম্পানি তৈরি করতে ব্যয় করা হতো তাহলে হয়তো মার্কেটটি বড় করা সম্ভব হতো।
আরেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞা সুমন আহমেদ সাবির বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এত দিন যে কাজগুলো হয়েছে তা ছিল বিক্ষিপ্ত। সেগুলো মানুষের কোনো কাজে লাগেনি। এর কয়েকটি কারণ হচ্ছেÑ যারা এটির সাথে জড়িত ছিল তাদের হয়তো সেরকম নলেজ ছিল না, মূল কাজের চাইতে ব্যবসা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য এবং সমন্বয়হীনতা ছিল সর্বত্রই।
তবে এই খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মানুষ আছে, বিপুল সংখ্যক তরুণ প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করে বের হচ্ছে, তাদের নতুন নতুন আইডিয়া আছে। সেগুলোকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় বসাতে হবে, জনবান্ধব সার্ভিস তৈরি করতে হবে।
সুমন আহমেদ আরো বলেন, বাংলাদেশে অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু এখানে রেগুলেশন অনেক বেশি অসামঞ্জস্য ও পরিবর্তনশীল। এ কারণে বিদেশিরা বিনিয়োগে ভয় পায়। এছাড়া ওয়ান-স্টপ সার্ভিস বলা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাজ করে। তাই অনেকে আগ্রহী হলেও চলে যায়। এগুলোকে ঠিক করতে হবে এবং রাজনৈতিক ও রেগুলেটরি স্থিতিশীলতা আনতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাত যেভাবে অবদান রাখার কথা ছিল বিগত সরকারের আমলে সেভাবে সম্ভব হয়নি। কারণ ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ এর সুফল পায়নি; বরং এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। প্রায় সব জায়গায় দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হয় না। এক-দুবার সময় বাড়ানোর পর আবারো সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকার সবার আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে কাজ শুরু করেছে। এটি শেষ হলে তরুণদের সম্পৃক্ত করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করতে আরো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে এখনই সেগুলো আমরা বলতে চাচ্ছি না। কিছু দিন পরেই আপনারা সেগুলো দেখতে পারবেন।
বাংলাদেশের যুবসমাজকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজে লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। যেটিকে কেন্দ্র করেই মূলত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। আমাদের একটি বড় কমিটমেন্ট হচ্ছে কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সারদের একটি বড় ভূমিকা আছে কিন্তু অবকাঠামো না থাকায় আমরা সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না। ডিজিটাল সেক্টরে কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে আমরাও আগ্রহী। প্রয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন তাদের সমন্বয়ে অ্যাডভাইজরি টিম করা হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তরুণদের কাজে লাগানো হবে।