USA

বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে আদালতের বাগড়া, কে সীমা অতিক্রম করেছেন

বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছেন দেশটির একটি ফেডারেল আদালত। গতকাল বুধবার নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক আদালত এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানান। আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন ট্রাম্প।

আদালতের এ রায় ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে এবং আদালতের কর্তৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।

যে দুটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গতকাল ওই আদেশ দিয়েছেন, তার একটি করেছে লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার নামের একটি আইনি সংস্থা। ট্রাম্পের শুল্কের নিশানা হওয়া দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করে, এমন পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তারা মামলাটি করেছে। অপর মামলা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে।

দুটি মামলার একটি করেছে লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার নামের একটি আইনি সংস্থা। ট্রাম্পের শুল্কের নিশানা হওয়া দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করে, এমন পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তারা মামলাটি করেছে। অপর মামলাটি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে।

আদালতের তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল আদেশে বলেছেন, কংগ্রেসকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। দেশের অর্থনীতির সুরক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতার বলে তা বাতিল করা যায় না।

বিচারক প্যানেল আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শুল্ককে চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কতটা বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন বা তা কতটা কার্যকর হবে, এ বিষয়ে আদালত কোনো মন্তব্য করছে না। (ক্ষমতার) এ ধরনের ব্যবহার অননুমোদিত। এর কারণ তা অযৌক্তিক বা অকার্যকর বলে নয়, বরং এটি ফেডারেল আইন অনুমোদন দেয় না।’

ম্যানহাটানভিত্তিক ওই আদালত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শুল্ক আইনসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে। এ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালতে (ওয়াশিংটন ডিসি) আপিল করা যেতে পারে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে বিদেশি পণ্যে শুল্ক আদায়কে ট্রাম্প তাঁর চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নীতি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যপ্রবাহকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং আর্থিক বাজারগুলো অস্থির করে তুলেছে।

পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলা, উৎপাদন, কর্মী ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় থাকা ছোট-বড় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই ট্রাম্পের হঠাৎ শুল্ক আরোপ ও আচমকা নীতিগত পরিবর্তনে সংকটে পড়েছে।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা, যা মার্কিন জনগোষ্ঠীর ভীষণ ক্ষতি করেছে, আমাদের শ্রমিকদের পেছনে ফেলে দিয়েছে এবং আমাদের প্রতিরক্ষাশিল্পের ভীত দুর্বল করে দিয়েছে, যা আদালত অস্বীকার করেননি।

কুশ দেশাই, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই এ বিষয়ে গতকাল বুধবার বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা, যা মার্কিন জনগোষ্ঠীর ভীষণ ক্ষতি করেছে, আমাদের শ্রমিকদের পেছনে ফেলে দিয়েছে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভীত দুর্বল করে দিয়েছে, যা আদালত অস্বীকার করেননি।’

জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলার সঠিক উপায় নির্ধারণ করা অনির্বাচিত বিচারকদের কাজ নয় বলেও বিবৃতিতে মন্তব্য করেন হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা।

এর আগে হোয়াইট হাউসের আরেক কর্মকর্তা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম শীর্ষ উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, বিচারব্যবস্থার অভ্যুত্থান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

যদি বাণিজ্য আদালতের এ রায় বহাল থাকে, ট্রাম্পের বাণিজ্যকৌশলে তা বড় ধরনের ধাক্কা দেবে। ট্রাম্প উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্যিক অংশীদারদের কাছ থেকে ছাড় আদায় করতে চাইছেন। সেই সঙ্গে উৎপাদন খাতের চাকরি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা এবং ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যঘাটতি কমানো তাঁর উদ্দেশ্য। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এগুলো তার অন্যতম।

ম্যানহাটানভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক ফেডারেল আদালত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শুল্ক আইনসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে। এ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালতে (ওয়াশিংটন ডিসি) আপিল করা যেতে পারে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়া যায়।

গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এর বাইরে বাণিজ্যঘাটতিকে কারণ দেখিয়ে অনেক দেশের ওপর মাত্রাতিরিক্ত হারে শুল্ক আরোপ করেন তিনি। এর জেরে বিশ্ববাজারে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto