Trending

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত!

২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা গেছে, বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা এবং চলমান বিভিন্ন সংঘাতের কারণে। এসব ঘটনা ২০২৫ সালের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলবে।

২০২৪ সাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে এ বছর ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার প্রভাব আগামী বছর এবং তার পরেও বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে।

এই বছর গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ নতুন করে শুরু হয় এবং তা লেবানন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, যা শেষ পর্যন্ত গত মাসে একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে থেমে যায়।সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই মাসে দ্রুত আক্রমণ চালিয়ে বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করে এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে এ বছর তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে।

তবে, এ বছর সবচেয়ে বড় চমক দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের ভোটারদের সিদ্ধান্তে। ২০২৪ ছিল বিশ্বজুড়ে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে রেকর্ড বছর। বিশেষ করে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়া বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে ২০২৫ সালে।

সিটি ব্যাংকের বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ নাথান শিটস বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে অনেক হতাশা আছে।” তিনি আরও বলেন, “এই বছর ৬০টির বেশি নির্বাচনে শাসক দলগুলোর বাজে পারফরম্যান্স দেখা গেছে।”

তিনি সিএনএনকে বলেন, “রাজনৈতিক পরিবেশ এখন আমার কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি অনিশ্চিত মনে হচ্ছে।”

অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, এই অনিশ্চিত পরিবেশের মূল কারণ ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফিরে আসা এবং বিশেষভাবে শুল্ক নিয়ে তার ভাবনা।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন এবং চীনা পণ্যের ওপর অন্তত ৬০ শতাংশ শুল্ক বসাবেন। নভেম্বরের শেষ দিকে কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর তিনি বলেন, তিনি মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসাতে চান এবং চীনের ওপর “অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক” আরোপ করবেন।

বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ভাবনার কারণে অন্যান্য অর্থনীতিতে কি ধরনের ক্ষতি হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছেন। তবে ক্ষতি হবে তা নিশ্চিত।

গত মাসে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দেকে সাংবাদিকরা ট্রাম্পের ইউরোপীয় পণ্যের ওপর সম্ভাব্য শুল্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমি এখনও মনে করি, বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য উপকারী নয়।”

উচ্চ শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির [বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি] ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করে, ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করবে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ভোক্তা মূল্য আমেরিকানদের খরচ কমিয়ে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও নির্ভর করবে, বিশেষ করে অন্য দেশগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তার ওপর। উদাহরণস্বরূপ, তারা আমেরিকান পণ্যের ওপর নিজেদের শুল্ক বাড়ালে তার প্রভাব মার্কিন অর্থনীতির ওপর পড়বে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিক্স একটি সাম্প্রতিক নোটে লিখেছে, “এটি একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধে পরিণত হতে পারে, যা বিভিন্ন রূপ নিতে পারে। তবে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে এটি বিশ্বের মোট উৎপাদন ২ থেকে ৩ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে।” তারা লিখেছে, বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী বিশ্বের উৎপাদনে ৩ শতাংশ ক্ষতি হলে, বেশিরভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুছে যাবে।

কিন্তু কোম্পানিগুলো অনিশ্চয়তা পছন্দ করে না এবং ট্রাম্প যদি সব দেশ বা শিল্পের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ নাও করেন, তবুও কিছু দেশ বা শিল্পের ওপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা ব্যবসা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে। এবং এর ফলে আমেরিকার বাণিজ্য অংশীদারদের অর্থনীতিতে ক্ষতি হবে।

এমনটাই মনে করেন গোল্ডম্যান স্যাকস এবং জে.পি. মরগান-এর মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষকরা। উভয় ব্যাংকই আগামী বছর ইউরোপীয় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পরিবর্তন করেছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের ২০২৫ সালের পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়ে গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা গত মাসে লিখেছিলেন, “চীনের ক্ষেত্রে প্রভাব সরাসরি হবে, যেটি প্রায় নিশ্চিতভাবে (উচ্চ) শুল্কের মুখোমুখি হবে।”

ট্রাম্পের নতুন আমদানি শুল্ক বৈশ্বিক অর্থনীতিকে অন্যভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে একটি নতুন মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে। ট্রাম্প তার প্রচারণায় যা বলেছেন তাই যদি করেন, তাহলে আমেরিকায় দাম বাড়বে আরও দ্রুত। তিনি যদি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করেন, সেটি শ্রম ঘাটতি এবং উচ্চ মজুরি বিল তৈরি করতে পারে।

অরাজকতা এবং স্থবিরতা

এই বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, আরও অনেক দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ গ্রীষ্মে এক জরুরি পার্লামেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন। এর ফলে সংখ্যালঘু সরকার গঠিত হয়, যা এই মাসের শুরুর দিকে ভেঙে পড়ে।

একইভাবে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানির শাসক জোট গত মাসে ভেঙে যায়। এর ফলে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে এক জরুরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

প্যারিসে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে, তা পূর্ববর্তী সরকারের মতোই শাসন করতে সংগ্রাম করবে কারণ পার্লামেন্টে কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এর ফলে দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল থাকবে এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও ভোক্তা খরচ কমে যাবে।

ইউরোপীয় ব্যাংক আইএনজি একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, “রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আগামী বছর ফ্রান্সের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে। যেকোনো সরকারকে ভেটো দেওয়ার হুমকি, বাজেট পাসের অক্ষমতা এবং আরও নির্বাচনের সম্ভাবনা দেশটির পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।”

ফ্রান্সের জন্য এই অনিশ্চয়তা অন্তত পরবর্তী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে, কারণ ফরাসি সংবিধান অনুযায়ী সেখানে পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচন তখনই হবে।

জার্মানির ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। প্রধান প্রশ্ন হলো, নতুন সরকার কি বেশি ঋণ নেবে, বিনিয়োগ করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য কাঠামোগত সংস্কার করবে?

আইএনজি বলেছে, “যদি তা না হয়, তবে স্থবিরতা হবে নতুন স্বাভাবিক ঘটনা।”

আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক জার্মানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ জার্মানির শিল্প খাত বড় এবং আমেরিকা [চীন বাদে] জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী।

যুদ্ধের প্রভাব

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার জন্য প্রভাবিত হতে পারে। তবে অর্থনীতিবিদরা এখন সেখানকার চলমান সংঘাত সত্ত্বেও তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে খুব চিন্তিত নন।

সিটি গ্রুপের নাথান শিটস সিএনএনকে বলেছেন, “বর্তমান সংঘাতের পরিসীমা সরাসরি তেলের প্রবাহকে বিপদে ফেলছে না।” তিনি বলেন, এটি ছড়িয়ে যেতে পারে, তবে “মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান দেশগুলো আঞ্চলিক সংঘাত চায় না। যদি তারা এমন কিছু চায়, তবে আমরা ইতোমধ্যেই তা দেখতাম।”

তেলের দাম অক্টোবর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর অনেক বেড়ে গেলেও, এখন তা গত বছরের জুন মাসের পর্যায়ে চলে এসেছে।

২০১১ সালে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সিরিয়া বিশ্বব্যাপী তেলের উৎপাদনে বড় কোনো ভূমিকা রাখত না। যুদ্ধের কারণে দেশটির তেল অবকাঠামো অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ক্যাপিটাল ইকোনোমিকস। তারা আরও জানিয়েছে, “সিরিয়ার পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতিতে খুব কম প্রভাব ফেলবে।”

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম অনেক বেশি রয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই যুদ্ধটি দ্রুত শেষ করতে চান। সমাধান যা আসবে, সেটি যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব নির্ধারণ করবে।

সিটি গ্রুপের বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান শুলজ এবং জিয়াদা গিয়ানি জানিয়েছেন, “একটি সুষ্ঠু যুদ্ধবিরতি” ইউরোপে ব্যবসায়িক আস্থা বাড়াতে এবং জ্বালানি শক্তির দাম কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে “একটি অস্থিতিশীল পতন” বড় ধরনের শরণার্থী প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং “রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত ছড়িয়ে যেতে পারে।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d