বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল মিলল প্রশান্ত মহাসাগরে, বয়স হতে পারে ৩০০ বছরের বেশি
প্রবালটির আকৃতি একটি নীল তিমির চেয়েও বড় এবং এটি এতই বিশাল যে মহাকাশ থেকেও একে দেখা যায়। কিন্তু এতদিন এটি একপ্রকার অদৃশ্যই ছিল।
প্রবালটির আকৃতি একটি নীল তিমির চেয়েও বড় এবং এটি এতই বিশাল যে মহাকাশ থেকেও একে দেখা যায়। কিন্তু এতদিন এটি একপ্রকার অদৃশ্যই ছিল।
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। তবে প্রবালটি আসলে কোনো একক প্রবাল প্রাচীর নয়। বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য জীব একসঙ্গে যুক্ত হয়ে এটি বড় আকার ধারণ করেছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, এটি ৩০০ বছরেরও বেশি পুরোনো হতে পারে। খবর বিবিসির।
বিবিসিতে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, গবেষকরা দাবি করছেন এ প্রবালটির আকৃতি একটি নীল তিমির চেয়েও বড়। এটি এতই বিশাল যে মহাকাশ থেকেও একে দেখা যায়। কিন্তু এতদিন এটি একপ্রকার অদৃশ্যই ছিল।
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের এক গবেষক দল। সেই দলেরই এক ভিডিওগ্রাফার, মানু সান ফেলিক্স এ বিশালাকৃতির প্রবালটি আবিষ্কার করেন।
মানু সান ফেলিক্স বলেন, “ম্যাপ অনুসারে এখানে একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থাকার কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু ডুব দিয়ে দেখলাম, এটি আসলে তা অন্যকিছু।”
পাভোনা ক্লাভাস প্রজাতির এ প্রবালিটি চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল।
সেই বিশালাকৃতির বস্তুটি দেখে তিনি তার ডাইভিং সঙ্গী ছেলে ইনিগোকে ডাকেন এবং তারা আরও গভীরে নেমে এটি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জে এ প্রবালটি দেখার অনুভীত প্রকাশ করতে গিয়ে মানু সান ফেলিক্স বলেন, “মনে হচ্ছিল, পানির নিচে যেন বিশাল এক প্রাসাদ। আমাদের জন্য এটি খুবই আবেগঘন একটি মুহূর্ত ছিল। জিনিসটার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করেছিলাম। এটি এখানেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে।”
তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে আরও বলেন, “নেপোলিয়ন যখন বেঁচে ছিলেন তখনও এটি এখানে ছিল।”
অভিযানে গবেষকরা এ প্রবালটির আকৃতি মাপার জন্য একটি বিশেষ ধরনের ফিতা ব্যবহার করেছিলেন। প্রবালটি দৈর্ঘ্যে ৩২ মিটার, প্রস্থে ৩৪ মিটার এবং উচ্চতায় ৫.৫ মিটার।
এক বিশেষ ফিতা দিয়ে প্রবালটির আকৃতি মেপেছেন গবেষকরা। ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা দিনকে দিন বাড়ছে। যার কারণে সামুদ্রিক প্রবালগুলোর উপরও অনেক চাপ বাড়ছে।
প্রবালকে সমুদ্রের স্থপতি বলা হয়। কারণ প্রবাল একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশালাকৃতির প্রাচীর গঠন করে যা মাছসহ অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের মতে, এসব প্রবাল প্রাচীর ব্যবহার করে পর্যটন ও মৎস্য খাতে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ জীবিকানির্বাহ করে।
পাভোনা ক্লাভাস প্রজাতির এ প্রবালিটি চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল। ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
এ বিশালাকৃতির প্রবালটি অন্যান্য প্রবাল প্রাচীরের তুলনায় সমুদ্রের আরও গভীরে পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি বেশ গভীরে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা থেকে এটি রক্ষা পেয়েছে।
এ প্রবালটি এমন সময়ে আবিষ্কার হয়েছে যখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাতিসংঘ আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৯-এর আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী ট্রেভর ম্যানেমাহাগা বিবিসি নিউজকে এ বিষয়ে জানান, এ নতুন আবিষ্কারটি তার দেশের জন্য গর্বের।
তিনি বলেন, “আমরা চাই বিশ্ব জানুক, এটি একটি বিশেষ স্থান ও এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের অর্থনীতি বেশিরভাগই সামুদ্রিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রবাল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাল যাতে নষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য।”
প্রবালটি নিয়ে আরও কাজ করতে চান গবেষকরা। ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মতো ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ম্যানেমাহাগা জানান, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব তার দেশের ওপর সরাসরি পড়েছে। কারণ এখন এখানে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে শুরু করেছে। তাছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের তীর ভাঙতে শুরু করেছে এবং বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জন্য ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে।
ম্যানেমাহাগা বলেন, সলোমন দ্বীপপুঞ্জে আর্থিক সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। কারণ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে এবং মানুষ প্রবালের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজে কম ঝুঁকবে।
বর্তমানে দেশটির অর্থনীতির একটি বড় অংশ কাঠ কাটার উপর নির্ভরশীল। এ খাত থেকে দেশটি বছরে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ রপ্তানি আয় পেয়ে থাকে। কিন্তু এর কারণে পানিদূষণ হয় যা প্রবালের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মহাকাশ থেকেও এটির অস্তিত্ব বোঝা যায়। ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের গবেষণা অভিযানে থাকা প্রবাল বিশেষজ্ঞ এরিক ব্রাউন বলেন, প্রবালটির অবস্থা খুবই ভালো। সমুদ্রের উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে নিকটবর্তী অগভীর প্রবাল প্রাচীরগুলোর অনেকগুলোই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এ বড় প্রবালটি সমুদ্রের কিছুটা গভীরে থাকায় এটি এখনো সুস্থ আছে, যা গবেষকদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে।”
প্রবালটি পাভোনা ক্লাভাস প্রজাতির। এটি চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের বাসস্থান হিসেবে কাজ করে।
এ প্রবালটির বয়স সমুদ্রটির অতীত সম্পর্কে গবেষকদের আরও তথ্য দিবে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষকরা প্রবালটির বৃদ্ধি নিয়ে আরও জানতে এটি নিয়ে কাজ করতে চান।
এই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়নের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার কারণে প্রায় ৪৪ শতাংশ প্রবাল বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০০৮ সালে সর্বশেষ মূল্যায়নের পর এ বিলুপ্তি ঝুঁকি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।