বিশ্বের সবথেকে ক্লান্ত কর্মীদের তালিকায় শীর্ষে ভারত, তৃতীয় বাংলাদেশ
বৈশ্বিক কর্মশক্তি বিভিন্ন স্তরে চাপের সম্মুখীন, কিছু দেশে অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কাজের সময় অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি কাজ করা দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান কর্মচারীদের সুস্থতা, উৎপাদনশীলতা এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) অনুসারে, ভারত বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি কাজ করা দেশগুলির মধ্যে একটি হিসাবে স্থান পেয়েছে। গড় ভারতীয় কর্মচারী প্রতি সপ্তাহে ৪৬.৭ ঘণ্টা কাজ করে, ৫১% কর্মী সাপ্তাহিক ৪৯ ঘণ্টার বেশি লগিং করে। এই নিরলস বর্ধিত কর্মঘণ্টার জন্য বিশ্বব্যাপী ভারতকে দ্বিতীয় অবস্থানে রাখে, যেখানে শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। শুধু ভারত নয়, দীর্ঘ কর্মঘণ্টার জন্য অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশও একই রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে পড়শি দেশ ভুটান, যেখানে ৬১ শতাংশ কর্মীই ৪৯ ঘণ্টার বেশি কাজ করে। স্বাভাবিকভাবেই কর্মীদের ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হওয়ার হারও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ২০২৩ সালে ম্যাকিনসে হেলথ ইন্সটিটিউটের সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতীয় কর্মীদের ৫৯ শতাংশের মধ্যেই ‘বার্নআউট’ উপসর্গ দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রেও ক্লান্তির হার ৬২ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক শ্রম প্রতিষ্ঠান, দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করা উচিত নয় বলেই সুপারিশ করে। তবে এশিয়ার অধিকাংশ দেশই, তা ভারত হোক বা বাংলাদেশ-পাকিস্তান কিংবা ভুটান, এই নিয়ম মানে না।
দেশ গড় সাপ্তাহিক ঘণ্টা কর্মশক্তি
ভুটান ৫৪.৪ ৬১%
ভারত ৪৬.৭ ৫১%
বাংলাদেশ ৪৬.৫ ৪৭%
পাকিস্তান ৪৬.৪ ৪০%
সংযুক্ত আরব
আমিরাত ৫০.৯ ৩৯%
লেসোথো ৫০ ৩৬%
কাতার ৪৮ ৩২%
চীন ৪৬.১ ২৮%
কঙ্গো ৪৮.৬ ২৬%
দক্ষিণ কোরিয়া ৪০.৬০ ২৪%
করোনাকালে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু হওয়ার পরই অফিস আর বাড়ির সীমানা মুছে গিয়েছে। অফিসের বোর্ড রুম বেডরুমে ঢুকে পড়তেই কাজের চাপও বেড়েছে। কর্মীদের অভিযোগ, অফিসের কাজ বাড়ি বয়ে আনায় নিজস্ব সময় বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মিলছে না। এর উপরে বসদের চাপ তো রয়েছেই। আপাতদৃষ্টিতে এটা সাধারণ বলে মনে হলেও, গবেষক-চিকিৎসকরা বলছেন করোনার মতোই নতুন এক মহামারি জন্ম নিচ্ছে এভাবেই। অতিরিক্ত কাজের চাপে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি থেকে অল্প বয়সেই মারণ ব্যাধি বাসা বাঁধছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, সপ্তাহে যারা ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করেন, তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ বেশি হয়। হার্টের অন্যান্য ব্যাধিতেও মৃত্যুর হার ১৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত কাজের চাপে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, আর্থারাইটিস, ক্রনিক লাং ডিজিজ এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতিরিক্ত কাজ, মানসিক চাপ, ক্লান্তিভাব আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়তে পারে। জাপানে যেখানে কর্মীরা ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করেই অভ্যস্ত, তারা অনেক সময়ই কাজের চাপে বাড়ি যান না। অফিসের আশেপাশেই কোনও ক্যাফে বা স্লিপিং পডে ঘুমান। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার অফিস চলে যান। কাজের চাপে মানসিক অবসাদ ও তার জেরে আত্মহত্যা- জাপানে এখন বড় ব্যাধির আকার নিয়েছে, যাকে বলা হয় কারোজিসাতসু মনোবিদদের আশঙ্কা, ভারতেও ধীরে ধীরে রোগের আকার নিচ্ছে এই আত্মহত্যা প্রবণতা।