International

বিশ্বে কী আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব কমতে শুরু করেছে?

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে গত এক বছরে বেশ কিছু বাধা বিপত্তির মুখোমুখী হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলো। এখনও পর্যন্ত এই বিপত্তি চরম বিপর্যয়ের আকার না নিলেও, এগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মূল্যবোধের প্রভাব বলয় থেকে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। একাধিক ক্ষেত্রে পশ্চিমা স্বার্থের ঠিক বিপরীতে হাওয়া বইছে। দেখে নেওয়া যাক কেন এই পরিবর্তন আর এর ভবিষ্যতই বা কী?

ইউক্রেন

কৃষ্ণ সাগরে সাম্প্রতিক কিছু সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও, এই যুদ্ধ ইউক্রেনের পক্ষে যায়নি। অর্থাৎ যুদ্ধ যদি আরো চলতে থাকে তাহলে তা ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে তারা (নেটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন) ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালাতে এবং ওই দেশের অর্থনীতিকে লক্ষ লক্ষ ডলার ঢেলেছে।

অথচ গত বছর এই সময় পর্যন্তও নেটো ইউক্রেনের বিষয়ে বেশ আশাবাদী ছিল। তারা ভেবেছিল, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র এবং পশ্চিমা প্রশিক্ষণ পেলে ইউক্রেনের সৈন্যরা রাশিয়াকে হারিয়ে তাদের দখলে থাকা অংশ ফিরিয়ে আনতে পারবে, ঠিক যেমনটা আগে পেরেছিল। তবে বলা বাহুল্য, এবারে ইউক্রেনের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। সমস্ত সমস্যার মুলে ছিল সময় নির্ধারণের বিষয়টা। নেটোর অন্তর্গত দেশগুলো ‘ব্রিটেনের চ্যালেঞ্জার-২’ এবং ‘জার্মানির লেপার্ড-২’-এর মতো অত্যাধুনিক ‘মেন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক’ ইউক্রেনে পাঠানোর সাহস আদৌ দেখাবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছিল।

দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে ছিল একটাই আশঙ্কা- যদি তাদের এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রতিশোধ নিতে প্ররোচনা যোগায়। যদিও শেষ পর্যন্ত পশ্চিমারা ট্যাঙ্ক সরবরাহ করেছিল এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন কিছু করেননি। তবে বেশ কিছুটা সময় চলে যাবার পরে যখন জুন মাসে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত হয়েছে, ততদিনে, রাশিয়ান কমান্ডাররা মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে সঠিক ভাবে অনুমান করে ফেলেছেন ইউক্রেন ঠিক কোন দিক থেকে জোরাল চেষ্টা চালাবে।

রাশিয়া আন্দাজ করতে পেরেছিল, ইউক্রেন জাপোরিঝিয়া ওবলাস্ট হয়ে আজোভ সাগরের দিকে দক্ষিণে এগোতে হতে চায়। তারা এটাও অনুমান করতে পারে, ইউক্রেন চাইছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যুহের মধ্যে দুটি ভাগ করে ফেলতে এবং মূল ভূখণ্ড থেকে ক্রাইমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে কিয়েভ দখল করতে রুশ সেনাবাহিনী বিফল হলেও তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এখনো নজিরবিহীন।

ইউক্রেনের সৈন্যবাহিনী ২০২৩-এর প্রথমার্ধে ব্রিটেন ও অন্য জায়গায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে আর যুদ্ধের জন্য ট্যাঙ্কগুলোকে পূর্ব থেকে সম্মুখ সমরে পাঠাতে যে সময়টা নিয়েছে, ততদিনে রাশিয়া আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ বিস্তৃত প্রতিরক্ষামূলক ব্যুহ তৈরি করে ফেলেছে। সকল সরঞ্জাম নিয়ে ইউক্রেন যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, তখন রাশিয়ান কমান্ডাররা মানচিত্রটি দেখে সঠিকভাবে অনুমান করে ফেলেন যে ঠিক কোথায় ইউক্রেনের প্রচেষ্টা সবচেয়ে জোরাল হতে চলেছে।

ইউক্রেনের পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন, অ্যান্টি-পার্সোনাল মাইন, বাঙ্কার, খাদ, ট্যাঙ্ক ফাঁদ, ড্রোন এবং আর্টিলারি মজুদ করে রাশিয়া ততদিনে যুদ্ধের জন্য তৈরি। ফলে, ইউক্রেনের বহুল আলোচিত পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হয়। ফলে সবমিলিয়ে ইউক্রেন এবং পশিমাদের সমীকরণ ভুল দিকে যাচ্ছে। ইউক্রেনের গোলাবারুদ ও সৈন্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হোয়াইট হাউজের ছয় হাজার কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার প্রচেষ্টাকে আটকে রেখেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, হাঙ্গেরি আটকে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচ হাজার কোটি ইউরোর তহবিল।

এর মধ্যে একটি বা দু’টি সহায়তা প্যাকেজই হয়ত শেষ পর্যন্ত সবুজ সংকেত পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাতে হয়তো ইউক্রেনের জন্য অনেকটা দেরী হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সৈন্যবাহিনীকে রণকৌশল বদলে প্রতিরক্ষামূলক পন্থা নিতে হয়েছে। এদিকে, মস্কোর অর্থনীতি কিন্তু যুদ্ধের বিষয়টাকেই সব চাইতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। রাশিয়া তাদের বাজেটের এক তৃতীয়াংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করেছে ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইনে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করতে আর এবং বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্রের উপর।

স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতি ইউক্রেনের জন্য খুবই হতাশাজনক। তারা ভেবেছিল, এতদিনে হয়ত যুদ্ধের ফল তাদের পক্ষে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, পশ্চিমাদের কাছে কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভ্লাদিমির পুতিন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রায় দুই বছর আগে এই আক্রমণের আদেশ দিয়েছিলেন, বিজয় ঘোষণা করার জন্য যে অঞ্চলটা রাশিয়ার দখল করেছে (ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ) শুধুমাত্র সেটা ধরে রাখতে হবে।

ইতিমধ্যে, নেটো তার মিত্রপক্ষ ইউক্রেনকে সমর্থন করতে অস্ত্রাগার খালি করে দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধের জন্য আর যা যা প্রয়োজন সবই করেছে। তবে রাশিয়ার আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে নেটোরর এই প্রচেষ্টা হয়ত ‘বিব্রতকর ব্যর্থতায়’ পরিণত হতে পারে। এদিকে বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার মতো নেটোর সদস্য দেশগুলো নিশ্চিত যে ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনে সফল হতে পারেন, তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের (নেটোর অন্তর্গত ওই তিনটি দেশ) দিকেও ধেয়ে আসবে।

ভ্লাদিমির পুতিন

থিওরি মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট একজন কিন্তু ‘ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় রয়েছেন। দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং তার শিশু অধিকার কমিশনার ইউক্রেনীয় শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ এর মার্চ মাসে তাকে অভিযুক্ত করেছে। পশ্চিমারা আশা করেছিল এর পর হয়ত আন্তর্জাতিকস্তরে ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘একঘরে’ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে, গ্রেপ্তার এবং দ্য হেগ-এ নির্বাসনের ভয়ে তিনি নিজের দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবেন। তবে তা হয়নি।

এই অভিযোগের পর থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিন বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। কিরগিজস্তান, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সউদী আরবে তিনি সমাদরও পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিক্স-এর শীর্ষ সম্মেলনেও ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন তিনি। মনে করা হয়েছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর তরফে জারি করা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে প্রায় ভেঙে ফেলবে যা মি পুতিনকে তার আগ্রাসন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে।

তবে রাশিয়া যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম তা প্রমাণ করে দিয়েছে। তারা চীন এবং কাজাখস্তানের মতো অন্যান্য দেশের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যও সংগ্রহ করেছে। এটা ঠিক যে, পশ্চিমারা নিজেদের সরিয়ে নিলেও, মস্কো তেল এবং গ্যাসের গ্রাহক হিসাবে অন্যান্যদের পেয়েছে। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ইউক্রেনে পুতিনের আগ্রাসন এবং দখলের সময় দেখানো নৃশংসতা পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ঘৃণ্য হলেও বাকি বিশ্বের কাছে তা মোটেই তেমনটা নয়।

অনেক দেশ এটাকে ইউরোপের সমস্যা হিসেবে দেখছে। কেউ আবার বলেছে রাশিয়াকে উস্কানোর জন্য নেটো দায়ী। এই দেশগুলো অবশ্য রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীর অত্যাচার এবং হেনস্থা পর ইউক্রেনের যে অবস্থা হয়েছে সেদিকে বিশেষ নজর দেয়নি।

গাজা

সম্প্রতি রিয়াদে এক শীর্ষ সম্মেলনে আরবের মন্ত্রীরা বলেছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ‘দ্বিচারী’। তারা বলেছিলেন, “তোমাদের সরকারগুলো সব ভণ্ড।” ”কি আশা করেন আমরা ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য রাশিয়ার নিন্দা করব যেখানে আপনারা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেখানেও তো হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকদের মারা হচ্ছে!”

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ স্পষ্টতই সমস্ত গাজাবাসীর জন্য এবং সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের প্রাণঘাতী আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ইসরাইলিদের জন্য বিরাট বিপর্যয়। পশ্চিমাদের জন্যও এই যুদ্ধ ক্ষতিকারক। এই যুদ্ধ বিশ্বের মনোযোগ নেটো মিত্র গোষ্ঠী ইউক্রেনের উপর থেকে সরিয়ে নিয়েছে। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আগ্রাসান থামাতে ইউক্রেন এখন হিমশিম খাচ্ছে। কিয়েভ থেকে মার্কিনদের সামরিক সহায়তা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আবার ইসরায়েলের পক্ষে গিয়েছে।

কিন্তু সর্বোপরি বিশ্বের অনেক মুসলমান এবং অন্যান্যদের দৃষ্টিতে আমেরিকা এবং ব্রিটেনকে গাজার ধ্বংসাত্মক পরিণতির অংশীদার বলেও অভিযোগ তুলেছে। কারণ তারা ইসরায়েলকে জাতিসংঘে সুরক্ষা দিয়েছে। রাশিয়ার যাদের বিমান বাহিনী সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করেছে, তারা কিন্তু গত সাতই অক্টোবর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছে। যুদ্ধ ইতিমধ্যে দক্ষিণ লোহিত সাগরে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ইরান সমর্থিত হুতিরা জাহাজগুলিতে বিস্ফোরক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। এর ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কারণ বিশ্বের প্রধান শিপিং সংস্থাগুলো তাদের যাত্রাপথ আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ইরান

ইরানকে নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এই অভিযোগ যদিও তারা অস্বীকার করেছে। এই প্রেক্ষিতে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইরানকে ‘একঘরে’ করা সম্ভবই হয়নি বরং ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং গাজা জুড়ে ‘প্রক্সি মিলিটারি’ মোতায়েনের মাধ্যমে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি প্রসারিত করেছে যাকে তারা অর্থ যোগায়, প্রশিক্ষণ দেয় এবং অস্ত্র সরবরাহও করে।

ইরান এই বছর মস্কোর সাথে একটি ঘনিষ্ঠ জোট তৈরি করেছে, যা স্পষ্টতই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ড্রোন হামলা চালানোর জন্য বিশাল ভাণ্ডারের যোগান দেবে। গাজায় যুদ্ধ থেকে ইরান কিন্তু উপকৃত হয়েছে। ‘ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের’ কথা বলে এই দেশ মধ্যপ্রাচ্যে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।

আফ্রিকার সাহেল

পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের একের পর এক দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের কাছে নতি স্বীকার করছে, যার ফলে ইউরোপীয় বাহিনীকে ওই অঞ্চল থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। ওই অঞ্চলগুলোতে জিহাদি বিদ্রোহ মোকাবিলা করতে সাহায্য করছিল ইউরোপীয় বাহিনী।

মালি, বুরকিনা ফাসো এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সাবেক ফরাসি উপনিবেশগুলি ইতিমধ্যে ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। এর কারণ গত জুলাইয়ে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের সময় নাইজারে পশ্চিমাপন্থী রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ইতিমধ্যে, ফরাসি সৈন্যরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে, যদিও দু’টি ঘাঁটিতে এখনও ৬০০ মার্কিন সেনা রয়ে গেছে।

ফরাসি এবং আন্তর্জাতিক বাহিনীর পরিবর্তে ওয়াগনার গোষ্ঠীর ভাড়াটে রাশিয়ান সৈন্যরা এসেছে। গত আগস্টে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের রহস্যজনক মৃত্যু সত্ত্বেও তার লাভজনক ব্যবসায়িক চুক্তিগুলি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এই গোষ্ঠী। এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা যাকে এক সময় পশ্চিমাদের মিত্র হিসাবে মনেকরা হত, তারা রাশিয়া ও চীনের যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া চালিয়ে আসছে।

উত্তর কোরিয়া

নিষিদ্ধ পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়ার উচিৎ কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা। তবে এ বছর তারা রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে, কিম জং উন রাশিয়ার একটি স্পেসপোর্ট পরিদর্শন করেছেন, এরপরই উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর কাছে ১০ লক্ষ আর্টিলারি শেল পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, তারা (উত্তর কোরিয়া) বেশ কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মহাদেশীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অংশে আঘাত হানতে সক্ষম বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চীন

সান ফ্রান্সিসকোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও শি’র মধ্যে একটি সফল শীর্ষ বৈঠকের পর বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ‘সমস্যা’ কিছুটা কমেছে। কিন্তু চীন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশের উপর তাদের দাবি থেকে সরে আসার কোনও লক্ষণ দেখায়নি। বরং তারা একটা নতুন “স্ট্যান্ডার্ড” মানচিত্র জারি করেছে যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশের উপকূলরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে, তাইওয়ানের ওপর তাদের দাবিও চীন ছাড়েনি। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে ‘ফিরিয়ে নেওয়ার’ অঙ্গীকারও করেছে তারা।

এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে আশার আলো দেখা সম্ভবত কঠিন। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলের পক্ষে যে বিষয়টি রয়েছে, তা হল – ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বন্ধ করতে গিয়ে নেটোর অন্তর্গত দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষামূলক লক্ষ্য আরও একবার আবিষ্কার করেছে। পশ্চিমা ঐকমত্য অনেককে বিস্মিত করেছে; যদিও এতে কিছু ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে।

তবে এ বিষয়ে উন্নতির সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এর আংশিক কারণ হল গাজা-ইসরাইল সীমান্তের দু’পাশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা। ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়ে তোলা প্রশ্নের সমাধান সাতই অক্টোবরের আগে প্রায় পরিত্যাগ করা হয়েছিল। ইসরাইল ভেবেছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সমস্যার সমাধান হতে পারে, এর জন্য পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই।

এই ধারণা কিন্তু ইতিমধ্যে মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক নেতা বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা যদি শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করতে না পারে তাহলে ইসরায়েলের পক্ষেও সেটা সম্ভব হবে না। এই সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি এটা সফল হয় তবে উভয় পক্ষকেই ‘কষ্টদায়ক সমঝোতা’ এবং আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এখন অন্তত এটা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে-এটা নিশ্চিত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d