বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার শঙ্কা
অবরুদ্ধ গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলা এবং ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। এই হামলার পারদ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। এতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি জোরালো হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে এবং অর্থনীতিতে আস্থা কমে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ এবং দরপতন ঘটেছে বড় শেয়ারবাজারগুলোতে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ২০ মাস আগে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব যখন ভুগছে, তখন ফিলিস্তিনে নতুন করে যুদ্ধ বেধে যাওয়া পুরো বিশ্বকেই বেকায়দায় ফেলে দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তবে পুরো বিষয় নির্ভর করছে যুদ্ধ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কতটা ছড়িয়ে পড়ে তার ওপর। এ বিষয়ে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টসের জিএম অগাস্টিন কারস্টেনস বলেন, ‘আকস্মিক এ যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের বাজার ও শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
তবে এর প্রভাব কতটা বিস্তৃত হবে তা এত তাড়াতাড়ি বলা কঠিন।’
নর্দান ট্রাস্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্ল টানেনবাম বলেন, ‘অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটে, ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ে এবং বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সংঘাত জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। ফলে তেলের দাম কোন দিকে যায় সেটিও দেখার বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে অস্থিতিশীলতায় থাকা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে এ সংঘাত ভিন্নমাত্রা যোগ করবে। পরিস্থিতি যেদিকে যাবে বাজারও সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’
বিশ্বনেতারা এ সপ্তাহে মরক্কোতে বসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের এ বৈঠকে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ও বিধি-নিষেধ নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, তাতে নিশ্চিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতও আলোচনায় থাকবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অঞ্চলে সৌদি আরব, ইরান ও কাতারের মতো শীর্ষ জ্বালানি উৎপাদক দেশগুলোই শুধু অবস্থান করছে না, সেই সঙ্গে সুয়েজ খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথও রয়েছে। ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরবে।
থ্রি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারিম বাস্তা বলেন, ‘এই যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ঝুঁকি ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল
বিশ্ববাজারে গত সপ্তাহে কমতির দিকেই ছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় বাড়ছে ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ। ফলে বিশ্ববাজারে আবার বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম।
বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গতকাল সোমবার উভয় তেলের দাম প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডাব্লিউটিআই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৩.৯৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয় ৮৬.০৫ ডলার। এর পাশাপাশি লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দামও ৩.৬০ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয় ৮৭.৬০ ডলার।
চলতি বছরের জুন মাসের পর তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। এক পর্যায়ে তা ব্যারেলপ্রতি ৯৫ ডলারে উঠে যায়। তবে এরপর তেলের দাম আবার কমতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৪ ডলারে নেমে যায়। গত সপ্তাহেও তেলের দাম কমেছে।