Trending

বিশ্ব অর্থনীতি প্রভাবিত করবেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মাধ্যমে মার্কিন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বের মোড়ল পরিচয় ম্লান করে একতরফা মার্কিন কৌশল নিয়েছিলেন ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করা ও বিশ্বজুড়ে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমানোর চেষ্টা-এসব ছিল সেই কৌশলের অংশ। 
তবে এর আগের মেয়াদে ট্রাম্পের যে আমেরিকা আমরা দেখেছিলাম এবার তার চেয়ে আরও বেশি কট্টর হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। এই কট্টরতা হবে লিবারেল আর প্রোগ্রেসিভ ভাবধারা, হিউম্যান রাইটস, ফ্রি ট্রেড, জলবায়ু পরিবর্তন আর বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে। আর অভিবাসীদের জন্য আমেরিকাকে নরক বানানোর প্রতিশ্রুতি তো ট্রাম্পের নির্বাচনী ইশতেহারেই আছে। এটা শুধু আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটা একটা বৈশ্বিক ট্রেন্ডে পরিণত হবে যা পুরো বিশ্বব্যবস্থা এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্প নীতি
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের দায়িত্ব নিতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি থাকলেও পুরো বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে ‘ট্রাম্প নীতির’ সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এখনই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। নিজ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুরক্ষা দিতে তিনি যেসব নীতি নেবেন বলে এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, তার প্রভাব ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে পড়তে শুরু করছে। চলতি সপ্তাহেই কানাডায় একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং দেশটির সরকারের পতনও আসন্ন বলে এখন মনে হচ্ছে।

অর্থনৈতিক খবরের সাবস্ক্রিপশন

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা পরিকল্পনা করেছিল, তার চেয়ে কমসংখ্যকবার সুদের হার কমাবে বলে জানিয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি পৌঁছে গেছে রমরমা অবস্থায়। আর যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে যেসব দেশ, তারা বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। অটোয়া থেকে শুরু করে ফ্রাঙ্কফুর্ট আর টোকিওতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বছর শেষের বৈঠকে ব্যস্ত ট্রাম্প জমানার আর্থিক নীতি ঠিক করার কাজে। 
নতুন করে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা
নতুন বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৭তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শুরু করলে কী ঘটবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কেবল বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে বুধবার প্রত্যাশামতো মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমিয়েছে। জেঁকে বসা মূল্যস্ফীতি কমাতে ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা সুদের হার হ্রাসের যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, সেখান থেকে তারা যে খানিকটা পিছিয়ে এসেছেন কেবল তাই নয়, বরং তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে এখন চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।

ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ব্যাংকের কেউ কেউ ভাবছেন ট্রাম্পের পরিকল্পিত শুল্ক আরোপ, করহার হ্রাস এবং অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ তাদের নীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করবে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন যে প্রত্যাশার তুলনায় আগামী বছরে প্রবৃদ্ধি বেশি হবে। পাশাপাশি তারা ধারণা করছেন যে  মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। ফলে সুদের হার আরও কমানোর ব্যাপারে ‘সতর্ক’ থাকতে বলেছেন জেরোম পাওয়েল। তবে সে কারণে আবার শেয়ারের দাম কমতে শুরু করেছে।
ব্যবসা কর্মকা-ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
গত সপ্তাহে জাপানি ব্যবসায়ীদের ওপর করা রয়টার্সের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন চতুর্থাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন যে ট্রাম্পের নীতিমালা তাদের ব্যবসা কর্মকা-ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখবে। ব্যাংক অব জাপান সম্ভবত এই বিষয়টি আমলে নিয়েছে। উন্নত বিশ্বে জাপানই একমাত্র দেশ, যারা এখনো সংকোচনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
সর্বশেষ মার্কিন ফেড সুদের হার কমিয়েছে। তার আগে সুদের হার কমিয়েছিল ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংক অব কানাডা। এই দুই কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ২০২৫ সালে কয়েক দফা সুদের হার কমাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কারণ ইউরোপ ও কানাডায় অর্থনৈতিক কর্মকা- দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তীব্র শুল্কযুদ্ধ
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। বিশেষ করে চীন ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহু উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার শাসনে বাণিজ্য সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল- চীনের বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ ও ইউরোপের সঙ্গে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি পরিবর্তন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মতে, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে চীনকে লক্ষ্য করে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং মার্কিন বাণিজ্য নীতির একতরফা পরিবর্তন অব্যাহত রাখতে পারেন। এরইমধ্যে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রশাসন কানাডার রফতানি পণ্যে সম্ভাব্য যে শুল্ক আরোপ করবে, তা কীভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে, তা নিয়ে দুজনের মধ্যে বিশাল মতানৈক্য হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button