International

বুদ্‌বুদের কারণেই কি গলছে হিমবাহ, হিমবাহে যতটা বরফ আছে বলে ভাবা হয়, আসলে তা নয়

১০০ বছরের বেশি আগের ঘটনা। ১৯১২ সাল। জ্যাকবশাভ্যন নামের হিমবাহের বিশাল এক অংশ ঘুরছিল গ্রিনল্যান্ডের আশপাশের আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে। সেই হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায় টাইটানিক নামের সেই সময়কার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ।

বিভিন্ন সাগর-মহাসাগরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে নানা আকারের প্রকাণ্ড সব হিমবাহ। এ ছাড়া দুই মেরুতে আছে হিমবাহ, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গলছে। যাঁরা মেরু অঞ্চলে নিয়মিত যান, তাঁরা হিমবাহ বা পাথুরে পবর্তে বিশাল বিশাল বরফখণ্ড ভাঙার শব্দে চমকে যান। দূর থেকে মনে হয়, কোথাও যেন গুলি চলছে। মেরু সাগরগুলোর হিমবাহ বা হিমালয়-কৈলাসের বরফশৃঙ্গের বরফের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বুদ্‌বুদ দেখা যায়। বাতাসের বুদ্‌বুদ বরফখণ্ডে আটকা পড়ে। এসব বুদ্‌বুদের কারণেই হিমবাহ দ্রুত গলছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।

২০১৮ সালের আগে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত ঘটনায় বুদ্‌বুদ নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। প্রথম দিকে গবেষকেরা বরফ ভাঙার শব্দকে ভুট্টা ভাজার শব্দ মনে করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে গবেষণায় জানা যায়, এই শব্দ ১২০ ডেসিবল মাত্রায় রীতিমতো গাড়ির হর্নের চেয়েও বেশি জোরে শোনা যায়। কয়েক বছর ধরে বরফগলা শব্দ রেকর্ড করে তাঁরা গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন। ন্যাচার জিওসায়েন্স সাময়িকীতে বরফগলার শব্দ নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিন পেটিট জানান, ‘হিমবাহ কিংবা পানির নিচের বরফ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গলে যাচ্ছে। আর সেসব বরফখণ্ডে আটকে পড়া পানির বুদ্‌বুদ গুলির শব্দের মতো আমাদের কানে আসে। বরফখণ্ড গলে বাতাস চাপে ওপরে চলে আসে। এতে ওপরের উষ্ণপানির প্রবাহ নিচের দিকে বরফখণ্ডকে আঘাত করে।’

বরফ গলে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানি সমুদ্রের লবণ পানির সঙ্গে মিশে যায়। সমুদ্রের পানির চেয়ে বরফগলা পানির ঘনত্ব কম থাকে। যেসব হিমবাহে বুদ্‌বুদ নেই, তারা ২ দশমিক ২৫ গুণ কম গলে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের সমুদ্র–গবেষক কিথ নিকোলাস জানান, ‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও হিমবাহের গলে যাওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষক পেটিট ও তাঁর দল আলাস্কার হিমবাহ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন। ১৫ বছর ধরে আলাস্কার বিভিন্ন হিমবাহে নজর রাখছেন তাঁরা। বছরে এই অঞ্চল থেকে সাত হাজার টন বরফ গলে। এতে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। শুধু তা–ই নয়, গবেষক দল আলাস্কায় সামুদ্রিক সিল কেন কমছে, তা নিয়েও অনুসন্ধান করছেন।’

খুব সাধারণভাবে আমরা ধরে নিই হিমবাহ মানেই বরফখণ্ড। সাদা সাদা বরফ সবখানে। আসলে তা নয়, হিমবাহের ভেতরে অসংখ্য আটকে পড়া বুদ্‌বুদ থাকে। আমরা যাঁরা রেফ্রিজারেটরে বরফ তৈরির জন্য পানি রাখি, তাঁরা বিষয়টি সহজে বুঝতে পারব। পানি জমাট বেঁধে বরফখণ্ডে পরিণত হলে ভেতরে বুদ্‌বুদ দেখা যায়। এমনটাই হয় বিশালাকার হিমবাহগুলোয়। এটা আসলে বিন্দু বিন্দু হয়ে সিন্ধু তৈরির মতো। হাজার বছর ধরে তুষার জমতে জমতে বরফখণ্ডে পরিণত হয়। তারপর সেসব বরফখণ্ড জমতে জমতে বিশালাকার হিমবাহে পরিণত হয়। একসময় ভারী হয়ে পানির নিচে তলিয়ে যেতে থাকে।

হিমবাহের যতটা অংশ ওপরে ভাসতে দেখা যায়, তার চেয়ে বেশি অংশ পানির নিচে থাকে। এক ঘনফুট হিমবাহের বরফখণ্ডে ৫০ লাখের মতো বুদ্‌বুদ আটকে থাকতে পারে। এসব বুদ্‌বুদে বায়ুর চাপ পৃথিবী পৃষ্টের চেয়েও ২০ গুণ বেশি হতে পারে। এসব বুদ্‌বুদ ফেটে গিয়ে পানির নিচে ১২০ ডেসিবল মাত্রায় শব্দ তৈরি করে। এতেই মনে হয় যেন পানির নিচে গোলাগুলি চলছে। গবেষকেরা পরীক্ষায় দেখেছেন, এসব বুদ্‌বুদের কারণে হিমবাহ দ্রুত গলতে থাকে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d