Hot

বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনের ঝুঁকি জেনেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি

  • এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু।
  • নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ শিশু।
  • বেশি মৃত্যু কালো ধোঁয়ায়। এক কক্ষ থেকেই ৯ লাশ উদ্ধার।
  • মা ও মেয়ে, মা ও দুই শিশুসন্তান—একই পরিবারে একাধিক মৃত্যু।
  • ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
  • আগুনের উৎস নিচতলা। কোন দোকান থেকে, তা জানা যায়নি।
  • তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

রাজধানীর বেইলি রোডের ভবনটিতে যে আগুনের ঝুঁকি ছিল, তা জানত সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা। তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ভবন কর্তৃপক্ষও গায়ে মাখেনি। মানুষের মৃত্যুর পর বেরিয়ে এসেছে গাফিলতির চিত্র।

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে গত বৃহস্পতিবার রাতের আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা কেউ ‘শঙ্কামুক্ত’ নন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।

আগুনের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন গতকাল শুক্রবার বেইলি রোডে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, ভবনটিতে রেস্তোরাঁ বা পণ্য বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনটিতে থাকা চুমুক নামের একটি খাবার দোকানের দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান এবং কাচ্চি ভাই নামের আরেকটি খাবারের দোকানের ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসানকে আটক করা হয়েছে।

রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। গতকাল শুক্রবার সকালের ছবি

রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। গতকাল শুক্রবার সকালের ছবি

আগুনের ঝুঁকি ও অনুমোদন না থাকার পরও ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ চলছিল বছরের পর বছর ধরে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সেখানে খেতে ভিড় করেছিলেন নগরের বাসিন্দারা। কেউ গিয়েছিলেন শিশুসন্তানদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন স্বজনদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কারও কারও জীবন চলত ওই ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছেন প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, স্ত্রী ও তিন সন্তান। তাঁদের মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারি। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছেন প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, স্ত্রী ও তিন সন্তান। তাঁদের মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারি। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে

রাত পৌনে ১০টায় ভবনটিতে যখন আগুন লাগে, তখন প্রাণ বাঁচাতে মা সন্তানকে নিয়ে, বোন বোনকে নিয়ে, বন্ধু বন্ধুকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভবনের ছাদে, বিভিন্ন তলায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর বের করে আনা হয় একের পর এক নিথর দেহ। রাত দুইটার দিকে ৪৩ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। গতকাল সকালে তিনি জানান, মৃতের সংখ্যা ৪৬–এ দাঁড়িয়েছে।

বিকেলে পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ শিশু। এঁদের মধ্যে ৪৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। ৪০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আমরা (ফায়ার সার্ভিস) একটি তদন্ত কমিটি করেছি, আমরা আসলে দেখতে চাই কারও কোনো গাফিলতি ছিল কি না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী

বেইলি রোডে গত বৃহস্পতিবার রাতে বহুতল একটি ভবনে আগুন লাগার ঘটনার পর স্বজনদের খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে জড়ো হন অনেকেছবি: প্রথম আলো

বেইলি রোড থেকে উদ্ধার করে আহত ব্যক্তিদের নেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ছিল স্বজনদের ভিড়। বেলা যত বাড়তে থাকে, তাঁদের কাছ থেকে ততই জানা যায় মর্মস্পর্শী সব ঘটনা।

মা নাজিয়া আহমেদ (৩২) গিয়েছিলেন তাঁর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে—সাত বছরের আরহান আহমেদ ও তিন বছরের আবিয়াত আহমেদ। শিশু দুটিকে মায়ের সঙ্গে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হলো রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়ে। বেইলি রোডের ভবনে আটকে থাকা অবস্থায় ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বাবাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আব্বু, আগুন! আমাদের বাঁচান…।’ সেই শেষ কথা। পরে মেয়ের মুঠোফোনে শতবার ফোন করেন বাবা। তবে ফোন আর কেউ ধরেনি। বেইলি রোড হয়ে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে গিয়ে মেয়ের নিথর দেহের খোঁজ পান বাবা আবদুল কুদ্দুস। তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘আমি তোমাকে বাঁচাতে পারিনি…মাগো…।’

বেইলি রোডে ভবনে আগুনে মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা। ঢাকায় আগুনে মৃত্যুর খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যম বিবিসি, সিএনএন, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, এএফপি, এপি এবং আল-জাজিরার মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনটিতে থাকা চুমুক নামের একটি খাবার দোকানের দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান এবং কাচ্চি ভাই নামের আরেকটি খাবারের দোকানের ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসানকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা করবে।

এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা (ফায়ার সার্ভিস) একটি তদন্ত কমিটি করেছি, আমরা আসলে দেখতে চাই কারও কোনো গাফিলতি ছিল কি না।’

আটতলা ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বজনদের আহাজারি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বজনদের আহাজারি।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটি নির্মাণে আটতলার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনে দুটি লিফট ও একটি সিঁড়ি রয়েছে। বেজমেন্ট গাড়ি রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ভবনের নিচতলায় স্যামসাং ও গেজেট অ্যান্ড গিয়ার নামে দুটি মুঠোফোন ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান এবং শেখলিক নামের একটি জুসবার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও চুমুক নামের একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় জেসটি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে অ্যামব্রোসিয়া নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।

অবশ্য ভবনের ছবিতে সপ্তম তলায় হাক্কাঢাকা নামের একটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড দেখা যায়, যা ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে আসেনি।

আগুনের সূত্রপাত নিচতলায়

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ বলছে, আগুনের সূত্রপাত হয়েছে নিচতলা থেকে। তবে ঠিক কোন দোকান থেকে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি তারা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনটির প্রতি তলাতেই ৬ থেকে ১০টি করে রান্নার কাজে ব্যবহার করা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। সিঁড়িতেও ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। ভবনের পূর্ব পাশে অন্তত ১২টি গ্যাস–সংযোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যদিও সিলিন্ডার পাওয়া যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের পর গতকাল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ‘ক্রাইম সিন’ দল এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করে। সিটিটিসির উপকমিশনার (ডিসি) মিশুক চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো আলামত তাঁরা পাননি।

সবার মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১০ জনকে আহত ভেবে আনা হয়েছিল। তাঁদের মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর চন্দ্র দাস

এত মৃত্যু কেন

আগুনে মেয়ে ও নাতিদের হারিয়েছেন বাসনা রানী (মাঝখানে)। হাসপাতালের মর্গের সামনে আহাজারি।

আগুনে মেয়ে ও নাতিদের হারিয়েছেন বাসনা রানী (মাঝখানে)। হাসপাতালের মর্গের সামনে আহাজারি।

মারা যাওয়া ৪৬ জনের বেশির ভাগের শরীরে পোড়ার দাগ ছিল না। কারও কারও থাকলেও তা মৃত্যু ঘটানোর মতো মারাত্মক নয়। তাহলে এত মানুষ কেন মারা গেলেন, তা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর চন্দ্র দাস। তাঁরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ‘কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং’, সহজ ভাষায় যাকে বিষাক্ত ধোঁয়া বলা যায়।

প্রবীর চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, সবার মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১০ জনকে আহত ভেবে আনা হয়েছিল। তাঁদের মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের ধারণা, আগুন লেগেছে সিঁড়ির কাছের কোনো দোকান থেকে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সিঁড়ি দিয়ে নামার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভবনে সিঁড়ি একটি। ফলে ওপরের তলায় থাকা মানুষেরা আটকা পড়েন। রেস্তোরাঁর সব কটিই ছিল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। কাচ দিয়ে ঘেরা থাকায় বাইরে থেকে বাতাস আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ ছিল।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির রেস্তোরাঁগুলোতে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় কাঠ ও সমজাতীয় উপকরণ (পার্টিকেল বোর্ড) ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো সহজে পোড়ে। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

আগুনের ঘটনার পর তিনতলার একটি কক্ষ থেকে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের কারও শরীরে পোড়ার দাগ ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ে মারা গেছেন।

কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং কী, তা ব্যাখ্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ গবেষক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, কোথাও আগুন লাগার পর অক্সিজেনের অভাব তৈরি হলে কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এটার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, অক্সিজেনের অভাবেও মৃত্যু হতে পারে।

ভবনে গাফিলতি

রাজধানীতে ভবনগুলো নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়েছে কি না, তা দেখে রাজউক। অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা তদারকির দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিসের।

রাজউকের নগর-পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম গতকাল বলেন, ভবনটির অষ্টম তলাটির আবাসিক অনুমোদন রয়েছে। এক থেকে সাততলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে তা শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই অনুমোদন। রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

অনুমোদন না নিয়ে ভবনটিতে কী কী প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে, তা তদারকি করেনি রাজউক।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন গতকাল ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, এই ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ভবনে একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। দু-একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার (আগুন নেভানোর সরঞ্জাম) দেখা গেছে। মানুষ যে কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে একটি জানালাও ছিল না। এসব কারণেই এত মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকির কথা জানিয়ে তিন দফায় চিঠি দিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেও কোনো কাজ হয়নি।

কোথাও আগুন লাগার পর অক্সিজেনের অভাব তৈরি হলে কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এটার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, অক্সিজেনের অভাবেও মৃত্যু হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ গবেষক আবদুস সালাম

নথিপত্র বলছে, ফায়ার সার্ভিস গত সেপ্টেম্বরে পরিদর্শন শেষে অষ্টম তলার আমব্রোসিয়া রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড মিউজিক ক্যাফে নামের রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। অ্যামব্রোসিয়াকে ২০২২ সালে ফায়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্সের শর্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না, তা জানার জন্যই সেপ্টেম্বরে পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস।

পুরো ভবন পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিস রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বলেছিল, ভবনটি অগ্নি ও জননিরাপত্তার দিক থেকে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে, যা আদৌ কাম্য নয়। সেখানে সব নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকতে হবে এবং দুটি সিঁড়ি নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তা–সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেটি ৯০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের চিঠিতে।

চিঠির পর ৯০ দিনের জায়গায় প্রায় ছয় মাস হলেও ফায়ার সার্ভিস কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কেন নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ টানিয়ে দিতে পারে। মামলা করতে পারে। তবে মামলার রায় পেতে বহু সময় লাগে। তিনি বলেন, আসলে দরকার সরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ ও সমন্বয়।

দুর্ঘটনা ঘটলেই বেরিয়ে আসে গাফিলতি

দেশে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই বেরিয়ে আসে গাফিলতির চিত্র। যেমন ঢাকার সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে গত বছরের ৭ মার্চ ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২৬ জনের মৃত্যুর পর রাজউক বলেছিল, অনুমোদনহীনভাবে ৫ তলা ভবনকে ৭ তলা করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারের ‘রাখি নীড়’ নামের ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পর জানা গিয়েছিল, আবাসিক ভবনটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

সিদ্দিকবাজারের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তে পুলিশ তিতাস গ্যাসের প্রাতিষ্ঠানিক গাফিলতি পেয়েছে। তবে ব্যক্তির দায় নিরুপণ করতে না পারায় অভিযোগপত্র দিতে পারছে না।

বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ঘুরে দেখে গতকাল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সেখানে সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, ভবনের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে ইমারত বিধিমালার লঙ্ঘন দেখেছেন। তিনি বলেন, অগ্নিনিরাপত্তায় নেব, নিচ্ছি করে সময় নষ্ট না করে সরকারের উচিত কাল থেকেই কাজ শুরু করা। বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের চাপে পোশাক খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। জনগণের প্রাণরক্ষায় উদ্যোগ কেন নয়।

কোনো ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ টানিয়ে দিতে পারে। মামলা করতে পারে। তবে মামলার রায় পেতে বহু সময় লাগে। তিনি বলেন, আসলে দরকার সরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ ও সমন্বয়।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d