Trending

বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, বাড়েনি মজুরি: ভোক্তার নাভিশ্বাস

এরমধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। সে তুলনায়, নভেম্বরে নিম্ন আয়সীমায় থাকা দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি হার বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ১০ শতাংশ, যার সাথে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ৫ দশমিক ৭০ শতাংশের মতো ব্যবধান রয়ে গেছে। 

রাজধানীর ইস্কাটনের শাহ ডিপার্টমেন্ট স্টোরের দোকানী আক্ষেপ করে বলছিলেন, “সয়াবিনের সাপ্লাইয়ে দুর্নীতি আছে, বুঝলেন ভাই, একেবারে পুরা দুর্নীতি।’ 

তাঁর দোকানে আসা এক ক্রেতার উদ্দেশ্যেই একথা বলা। সয়াবিনের ছোট বোতল হাতে নিয়ে তিনিও উত্তর দেন, “তাই তো দেখছি, নাহলে কালকেই কিনলাম ৯০ টাকায়, আজকে ১০০ টাকা হয় কেমনে!”  

ক্রেতার এই আক্ষেপে মাথা দুলিয়ে সায় দিলেন দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দোকান মালিক শাহ আলম। 

তিনি বলেন, “তেলের সেই রকম মনে করেন সাপ্লাই নাই। আবার সবকিছুর দাম একসাথে বাড়তাছে। অনেক কাস্টমার আসেন, তাঁরা জিনিসপত্রের দরদাম শুনে ফেরত যায়, কেনাকাটা করে না।”

গত আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে জীবনধারণের জন্য প্রতিনিয়ত এক নীরব সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না তাঁদের মজুরি। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য বলছে, গেল নভেম্বরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আগের মাস অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই হার গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এরমধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। সে তুলনায়, নভেম্বরে নিম্ন আয়সীমায় থাকা দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি হার বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ১০ শতাংশ, যার সাথে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ৫ দশমিক ৭০ শতাংশের মতো ব্যবধান রয়ে গেছে।

নিত্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের এই হিমশিম অবস্থা— আসলে নিম্ন আয় থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবারই প্রকৃত আয় কমে যাওয়াকে তুলে ধরছে।

সমস্যার শুরুটা হয়েছিল বিগত স্বৈরাচারী সরকারের অর্থনৈতিক দুর্ব্যবস্থাপনার সময়েই। ২০২২ সালের মে মাস থেকেই মজুরির চেয়ে দ্রুত বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যা ছিল গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসময় মজুরি বেড়েছিল মাত্র ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।

নভেম্বরে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের ৬৩ ধরনের পেশায় — অক্টোবর মাসের তুলনায় মজুরি ১ শতাংশীয় পয়েন্টেরও কম বেড়েছে। অক্টোবরের ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ থেকে যা নভেম্বরে হয়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে, লাগামহীনভাবে বাড়তেই আছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, যা ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। গৃহস্থের আর্থিক সঙ্গতির ওপর যা আরও চাপ তৈরি করেছে।

একদিকে খাদ্যের মতো মৌলিক পণ্যদ্রব্যের চড়া দাম, অন্যদিকে আয় না বাড়ার এই ঘটনা হয়েছে সবখাতেই – যার প্রভাবই সর্বত্রই লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে ব্যক্তির সামাজিক শ্রেণিভেদে সেই প্রভাবের তারতম্যও রয়েছে।

ইস্কাটনের আরেক দোকানি খায়রুল হকের মতে, সরবরাহের উৎসেই জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, “আমরা পাইকারদের থেকে কার্টন হিসেবে পণ্য কিনি। সেখানে তাঁরা আগের চেয়ে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নিচ্ছে। একইভাবে পণ্য পরিবহনে ভ্যান ভাড়া ৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে। এখন তাঁরা ১৫০ টাকার মতো নেয়।”

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়, বিভিন্ন পেশার মানুষও টাকা বেশি চায়, ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে থাকে। তবে ব্যয়ের তুলনায় মজুরি বা আয় সেভাবে বাড়েনি মানুষের।  

মজুরির নেতিবাচক প্রবণতা 

মজুরির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের আশেপাশেই থাকছে, গত নভেম্বরে যা ৮ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে। 

মূল্যস্ফীতিতে চরম দুর্ভোগের কথা জানালেন বেসরকারি চাকুরীজীবী মনোয়ার ইসলাম। এক বছর আগে তাঁর বেতন বেড়েছিল মাত্র আড়াই শতাংশ। অথচ জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির মিছিল থেমে থাকেনি। যে মাসে তাঁর বেতন বাড়ে, তখন মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১২ শতাংশ হারে। গত বছরের শেষপর্যন্ত টানা হয়েছে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি। কিন্তু, বেতন আর বাড়েনি। 

মনোয়ার বলেন, “অনেক কিছুতে এখন খরচ কমানোর চেষ্টা করি। বিশেষ করে গরুর গোশত খেতে পারি না। খেলেও কম খাই। পরিস্থিতির কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখি না। আমার বেতন আরেকবার বাড়ার আগে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁবে বলে মনে হচ্ছে।” খাবার খরচ ছাড়াও, বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ ও পানির বিল সবই বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

বেসরকারি আরেক চাকুরে, জোতির্ময় চক্রবর্তী অবশ্য কিছুটা আশাবাদী।  তিনি বলেন, “শীতকাল চলছে, তাই শাকসবজির দাম কিছুটা কম। এখানে স্বস্তির একটা জায়গা আছে। গাজরের দাম ১৮০ টাকা থেকে কমে ৯০ টাকা হয়েছে। বেগুনের দামও কমেছে।”

তাঁর বেতন বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে জোতির্ময় বলেন, গতবছর নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নিয়েছি, সেখানে আগের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছি। 

ইস্কাটনে সবজি বিক্রেতা আব্দুল মোতালেব টিবিএসকে বলেন, “তবে কয়েক মাস আগের চেয়ে কম হলেও –  বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের শীতের শুরুতে সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। যেমন গত বছর এই সময়ে নতুন আলুর কেজি ৫০-৬০ টাকা ছিল, কিন্তু এবছর এখন ১১০ টাকা। গত বছরের তুলনায় বিভিন্ন সবজির দাম ১০-৩০ টাকা বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “সবজির দাম বেশি হওয়ায় এখন বেচাকেনাও কম। ক্রেতারা এসে দাম জিজ্ঞেস করে অনেকে চলে যান। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশ ভালো কিন্তু দাম কমছে না। বেচাকেনা না থাকলে আমাদের পেটওতো চলে না।”

দিনমজুর ফজলুল হক-ও হতাশাই ব্যক্ত করেন। ফজলুল বলেন, “সপ্তাহের মধ্যে ২-৩ দিন কাজ পাই, কাজ থাকলে প্রতিদিন ৭০০ – ১,০০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। আগের মতো এখন কাজ পাওয়া যায় না। সপ্তাহে বাড়িতে ১,০০০ টাকাও পাঠাতে পারি না। বাজারে সবজি কিনে খাব- সে উপায়ও নেই। সবজির দামও বেশি। গত দুই মাস ধার করে বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি ঢাকাতে মেসে থাকি, সেখানে একবেলা খাবার খেতে ৯০ টাকা লাগে। ৩ মাস আগেও সেটা ৮০ টাকা ছিল। মাসে একবার মুরগি খেতে পারি। কিন্তু গরুর মাংস বাড়িতে না গেলে খাওয়া হয় না। ২-৩ মাস পরে বাড়িতে গেলে তখন এক কেজি গরুর মাংস কিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাই। জুলাইয়ের আন্দোলনের পরে একবার গ্রামে বাড়ি জামালপুরে গিয়েছিলাম, এখন হাতে টাকা নেই তাই বাড়িতেও যেতে পারছি না।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d