Trending

বেনামে শেয়ার ব্যবসা ও কারসাজিতে শিবলী

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি শেয়ার ব্যবসা করেছেন বেনামে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরোর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। হিরোর তথাকথিত ‘হট আইটেম’, অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারই শিবলীর বেনামি অ্যাকাউন্টে ক্রমাগত কেনাবেচা হয়েছে। 

এখানেই শেষ নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ক্ষমতার দাপটে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম। 
সমকালের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার সময়ই অধ্যাপক শিবলী ঋণখেলাপি ছিলেন। অর্থঋণ আদালতে মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই টানা প্রায় ১৬ বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান পদে চার বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রথম দুই বছর চার মাস পর্যন্ত তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন এবং তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল ছিল। 

সমকালের অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাবেদ এ মতিনের হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়া, প্রতারণার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাচার করে আনা এবং এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবলীর প্রত্যক্ষ সহায়তার তথ্য পাওয়া গেছে। পাচার করা অর্থ দেশে আনার সহযোগিতার অংশ হিসেবে শিবলী এর ভাগ নিয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১২ কোটি টাকা নেওয়ার প্রমাণ পায় সমকাল। অর্থ পাচারকারী জাবেদ এ মতিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর প্রথম চার মাস শিবলী রুবাইয়াতের ধানমন্ডির বাসায় ছিলেন। 
আইপিও অনুমোদন, মন্দ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত এবং স্বার্থান্বেষী মহলকে নানা সুবিধা দিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন অধ্যাপক শিবলী। বিএসইসির তদন্তে কারও বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ বা বড় ধরনের আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলে, অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি আটকে দিতেন। দোষীদের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানে চাপ দেওয়া বা প্রতিবেদনে নাম আসার পর নামমাত্র জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, আলোচিত সোনালী পেপার কোম্পানিটিকে অধুনালুপ্ত ওটিসি বাজার থেকে মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে অধ্যাপক শিবলী ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার শেয়ার নেন নিজের বেনামি বিও অ্যাকাউন্টে। 

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দুবাই প্রবাসী এক আতর ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এবং বিদেশে বিনিয়োগ রোডশোর আড়ালে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে উপার্জন করা শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন অধ্যাপক শিবলী। অবশ্য এর সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে ওই আতর ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া, একটি রুগ্ণ কোম্পানির মালিকানা কিনতে সহায়তা করা এবং শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত করাতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। 

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পূর্বসূরি ড. এম খায়রুল হোসেনের মতো নানা অপকর্মের মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারকে ধ্বংস করে গেছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত। ড. খায়রুল বস্তা পচা প্রায় ১০০ কোম্পানির আইপিও এনে শেয়ারবাজারে ক্যান্সার ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন। অধ্যাপক শিবলীও একই কাজ করেছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে খারাপ কাজটি হলো, তিনি নিজ হাতে সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে জুয়াড়ি তৈরি করেছেন এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তিনি যে অপকর্ম করেছেন, তা বিশ্বের আর কোনো দেশের শেয়ারবাজারে এমন নজির নেই। তাঁকে বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে শেয়ারবাজারে বারবারই এমন ঘটনা ঘটতে থাকবে।
অধ্যাপক শিবলীর বিরুদ্ধে পাওয়া দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। মোবাইল ফোনেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালে সাড়া দেননি তিনি। 

যেভাবে শেয়ার ব্যবসা 
অধ্যাপক শিবলী বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন ২০২০ সালের ১৭ মে। এর মাত্র দুই মাস ২০ দিনের মাথায় তাঁর বন্ধু জাবেদ এ মতিন আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন, যার নম্বর- ১২০৪৪৮০০৬৯০২৫৭১১। অ্যাকাউন্টটি জাবেদের নামে হলেও এটি ছিল অধ্যাপক শিবলীর বেনামি অ্যাকাউন্ট। এ অ্যাকাউন্টের শতভাগ নমিনি ছিলেন তাঁর বড় ছেলে যুহায়ের শাহরিয়ার ইসলাম। অ্যাকাউন্টহোল্ডার জাবেদ নমিনি ফরমে যুহায়েরকে ভাগনে হিসেবে পরিচয় দেন। নমিনি ফরমে যুহায়েরের বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হয় বাড়ি নং ৬৮/১, রোড নং ৬/এ, ধানমন্ডি। এটি ঢাকায় শিবলী রুবাইয়াতের বাড়ির ঠিকানা। 
অধ্যাপক শিবলী ২০২১ সালের আগস্টে অ্যাকাউন্টের নমিনি হিসেবে ছেলের নাম তুলে নেন। এর বদলে মো. আমীর হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে নমিনি করেন, যার পিতার নাম আলহাজ সুলতান আহম্মেদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৩৭৩১৭৮২৫৩২। আমীর হোসেন ঢাকার পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা। জাবেদ এ মতিনের সঙ্গে আমীর হোসেনের পূর্বপরিচয় ছিল। নমিনির নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস নামে মার্চেন্ট ব্যাংকে একটি লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ারও সরিয়ে নেন।

নমিনি পরিবর্তনের পরও ওই বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার কেনাবেচা করেন শিবলী রুবাইয়াত। বিও অ্যাকাউন্টটিতে প্রথমে ৩০ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। অধ্যাপক শিবলীর নিজ নামের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের (যার নম্বর ০০৫৩৭৩১০০০০০১০৯) স্টেটমেন্ট পরীক্ষায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ৯ আগস্ট প্রথমে সাউথইস্ট ব্যাংকের সাতমসজিদ রোড শাখা থেকে দেলোয়ার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে নগদে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। দোলোয়ার একসময় অধ্যাপক শিবলীর বাসায় কাজ করতেন। পরে অধ্যাপক শিবলী তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সান্ধ্যকালীন শাখায় অফিস সহকারীর কাজ জুটিয়ে দেন। দেলোয়ার এনসিসি ব্যাংকের ০০০২-০২১০০২৬৮৭০ নম্বর অ্যাকাউন্টে ওই দিন দুই ধাপে ২০ লাখ ও ১০ লাখ টাকা নগদে জমা দেন। এনসিসি ব্যাংকের এ অ্যাকাউন্টটি শেয়ার কারসাজির বহুল আলোচিত হোতা আবুল খায়ের হিরোর। অধ্যাপক শিবলীর বেনামি বিও অ্যাকাউন্ট ও হিরোর এনসিসি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট পরীক্ষায় দেখা যায়, ৯ আগস্ট বিও অ্যাকাউন্টিতে ৩০ লাখ টাকার চেক (সি-৮৯৬৩৮২৮ নম্বর) জমা দেওয়া হয়। ওই চেক পরদিনই ক্লিয়ারিং হয়ে আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজের শিবলির বেনামি বিও অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
নথি পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, হিরো নিজের এনসিসি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে একই বছরের ২৪ আগস্ট সি-৮৯৬৩৮২৯ নম্বর চেকে আরও ৩০ লাখ টাকা, ২৬ আগস্ট সি-৮৯৬৩৮৩১ নম্বর চেকে ২০ লাখ টাকা এবং ১৬ সেপ্টেম্বর সি-৮৯৬৩৮৩৪ নম্বর চেকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা, অর্থাৎ মোট ৭০ লাখ টাকা অধ্যাপক শিবলীর বেনামি বিও অ্যাকাউন্টে জমা দেন।

অধ্যাপক শিবলীর ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেও সরাসরি চেকের মাধ্যমে ওই বিও অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়। ব্যাংক এশিয়ায় অধ্যাপক শিবলীর একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ছিল, যার নম্বর ০২১৩৪০০০৫২৪। এ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ০৫৭৯২৩৯, ০৫৭৯২৫০ এবং ০৫৭৯২৫২ নম্বরের পৃথক তিন চেকের মাধ্যমে যথাক্রমে ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ২০ লাখ টাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২৫ লাখ টাকা এবং ২৪ সেপ্টম্বর ৫ লাখ টাকা জমা হয় শেয়ার ব্যবসার অ্যাকাউন্টে। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১২০২১০০০০৯১২ নম্বর অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৮৯০৪৬১ নম্বর চেকের মাধ্যমে আলোচ্য বিও অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট ২০ লাখ টাকা জমা হয়, যা পরদিনই ক্লিয়ারিং হয়ে ব্রোকারেজ হাউসটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এ অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স নামের এক বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এটি অধ্যাপক শিবলীরই নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ অ্যাকাউন্টের সব নথিতে অধ্যাপক শিবলীর নাম, তাঁর বাসার ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর উল্লেখ রয়েছে।
আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজে ওই বিও অ্যাকাউন্টে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে চারটি চেকের মাধ্যমে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকা, ২৯ অক্টোবর ১ কোটি টাকা, ২ নভেম্বর ২৫ লাখ টাকা এবং ১১ নভেম্বর ২৫ লাখ টাকা জমা হয়। মাত্র তিন সপ্তাহে জমা হয় ২ কোটি টাকা।

বিও অ্যাকাউন্টিতে যেসব শেয়ার মূলত কেনাবেচা করা হয়েছে, সেসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন আবুল খায়ের হিরো। এর মধ্যে সিংহভাগ শেয়ারই ছিল বীমা কোম্পানির। এর উল্লেখযোগ্য হলো– ইস্টার্ন, প্যারামাউন্ট, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া, অগ্রণী, পূরবী জেনারেল, রূপালী, নিটল এবং ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এসব কোম্পানির শেয়ার কেনেন শিবলী রুবাইয়াৎ। এর বাইরে ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো লিমিটেড, ফু-ওয়াং ফুড, সাফকো স্পিনিং এবং সোনালি পেপারের শেয়ার কিনেছিলেন। তিনি ২০২০ সালের ৯ আগস্ট প্রথম ফু-ওয়াং ফুডের ১ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ার ১৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনেন। এর এক সপ্তাহ পর ১৭ আগস্ট সব শেয়ার ১৭ টাকা ১০ পয়সা দরে মোট ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে ৮৮ হাজার টাকা মুনাফা করেন। ২০২০ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত এই অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রমাগত শেয়ার কেনাবেচা করেন অধ্যাপক শিবলী। 

আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজে এ অ্যাকাউন্টের শেয়ার কেনাবেচার দায়িত্বে ছিলেন ব্রোকারেজ হাউসটির প্রতিনিধি আশিক মাহমুদ। তিনি পরে চাকরি ছেড়ে আবুল খায়ের হিরো, জাবেদ এ মতিন এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের যৌথ মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউসে চাকরি নিয়ে চলে যান। ভিন্ন তিন জগতের এই তিন ব্যক্তিকে এক সুতায় গেঁধে শেয়ার ব্যবসায় নামানোর মূল কারিগর ছিলেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দিনে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাইন গার্মেন্টের খেলাপি ঋণের দায়ে পরিচালক ও এমডি হিসেবে ঋণখেলাপি ছিলেন। খেলাপির দায়ে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে অর্থঋণ আদালতে অধ্যাপক শিবলী, তাঁর স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াত এবং অপর দুই ব্যবসায়িক অংশীদার মো. ইকবাল ও রঞ্জন কুমারের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অধ্যাপক শিবলীর চেয়ারম্যান পদে ২০২০ সালের ১৭ মে তারিখে যোগদানের দিন তো বটেই, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল ছিল।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে রাইন গার্মেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অধ্যাপক শিবলী গং মোট ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ঋণ নেয়। তখন ব্যাংকটির এমডি ছিলেন অধ্যাপক শিবলীর বাবা প্রয়াত রফিকুল ইসলাম খান। তবে ঋণ নেওয়ার পর কয়েক মাস কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে কোনো টাকা দেননি। সুদে-আসলে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পাওনা থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর ওই ঋণ অবলোপন (রাইট-অফ) করে ন্যাশনাল ব্যাংক। এর পর পাওনা আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। ওই মামলায় শিবলীর বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল।
জানা গেছে, ২০২২ সালের আগস্টে তিনি ব্যারিস্টার এ এম মাসুমসহ (উচ্চ আদালতে বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী) সরাসরি ন্যাশনাল ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে মাত্র ৩ কোটি টাকায় নিজের ও স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াতের দায়মুক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ব্যাংক সব সুদ ও জরিমানা মওকুফে রাজি হলেও আসল ঋণের অর্থে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত রাইন গার্মেন্টে তাঁর ও স্ত্রীর শেয়ার অনুপাতে ৮ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৪ টাকা পরিশোধে সম্মত হন শিবলী রুবাইয়াত। ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের অনুকূলে পরিশোধের জন্য ওই অঙ্কের একটি পে-অর্ডার করেন। পরদিন অর্থঋণ আদালত-১-এর বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী ও আংশিক বিবাদীর সোলেনামার ভিত্তিতে অধ্যাপক শিবলী ও তাঁর স্ত্রীকে মামলা থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে আদেশ দেন। অধ্যাপক শিবলী ন্যাশনাল ব্যাংকের টাকা পরিশোধের জন্য সিটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। নীল দিগন্ত নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান বানিয়ে তিনি সিটি ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকার গৃহায়ন ঋণ নেন। 

সরকারের নীতি অনুযায়ী, ঋণখেলাপি ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের সুযোগ না থাকার পরও ২০২০ সালের মে মাসে তাঁকে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মার্চে প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে আরও চার বছর মেয়াদে নিয়োগ দেয় শেখ হাসিনা সরকার। দেশের বিদ্যমান আইন ও সরকারের সঙ্গে নিয়োগ চুক্তি অনুযায়ী, বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন অবস্থায় ব্যবসার নামে ঋণ নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আবার ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ঋণের টাকায় ঋণ শোধ করা তো দূরের কথা, এক উদ্দেশ্যে ঋণ নিয়ে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

সোনালি পেপারের পুনঃতালিকাভুক্তিতে দুর্নীতি
এক সময়ের বন্ধ ও রুগ্‌ণ কোম্পানি সোনালি পেপারকে আইনের বহু ধারা পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত করতে রাজি ছিল না। ২০০৯ সালে ৩২ টাকা দর নিয়ে তালিকাচ্যুত কোম্পানিটি ২০২০ সালের ২ জুলাই যখন ২৭৩ টাকা দর নিয়ে অধুনালুপ্ত ওটিসি বাজার থেকে ফিরছিল, তা নিয়ে এ প্রতিবেদক আগের দিন প্রশ্ন তুললে অধ্যাপক শিবলী মৌখিক নির্দেশে তা আটকে দেন। তবে ওই বছরের ২৬ জুলাই পুনঃতালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু হয়। তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির মালিকানার ৯৮ শতাংশ শেয়ার ছিল উদ্যোক্তাদের হাতে। বাকি ২ শতাংশ শেয়ার ছিল ১০ জনেরও কম বিনিয়োগকারীর কাছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৭ জুলাই অধ্যাপক শিবলীর বেনামি বিও অ্যাকাউন্টে এক দিনেই সোনালি পেপারের ৩ লাখ ১৫ হাজার শেয়ার ২১২ টাকা ৬০ পয়সা দরে কেনা হয়েছিল, যার মোট বাজারমূল্য ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ব্লক মার্কেটে এই শেয়ারের বিক্রেতা ছিলেন সানাউল্লাহ শফিক, যিনি কোম্পানির মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্ট। কাগজে-কলমে টাকা দিয়ে অধ্যাপক শিবলী এ শেয়ার কিনলেও তা উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor