Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

বেসরকারিতে বাণিজ্য সরকারিতে নৈরাজ্য

সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ছাড়া মিলছে না মুমূর্ষু রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বরাদ্দ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগছে ঘুষও। আর বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হচ্ছে রোগী ও স্বজনের পকেট। সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। উল্টো বেড়েছে আইসিইউতে নৈরাজ্য।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও বিপৎসংকুল হতে পারে। সরকারের উচিত এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে অচল আইসিইউ সচল করার ব্যাপারে জোর দেওয়া উচিত।

এখন সারাদেশে আইসিইউর শয্যা আছে ১ হাজার ১৯৫টি। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, ৩৪ জেলা শহরেই নেই জটিল রোগীর জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা। ফলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক মুমূর্ষু রোগী ছোটেন রাজধানীর দিকে। শারীরিক পরিস্থিতি বেশ জটিল হলে অনেক রোগীর প্রাণ নিভে যায় পথেই। ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাতে করোনা মহামারিতে প্রতি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার।

 পরে ২৭ জেলায় স্থাপনও করা হয় আইসিইউ ইউনিট। তবে এর মধ্যে ১৮টিই সচল করা যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। আইসিইউ স্থাপন নিয়ে খামখেয়ালিতে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। ফলে ফেরত যাচ্ছে প্রকল্পের ১৪৬ কোটি টাকা। 

দেশে আইসিইউ সেবার কী অরাজক হাল, তা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন সাংবাদিক মাসুমা আক্তার। গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন মাসুমা। আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাতেই কুমিল্লা থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তবে ঢামেক হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকায় বেকায়দায় পড়ে তাঁর পরিবার। স্বজনরা রাজধানীর আরও কয়েকটি হাসপাতালে চেষ্টা-তদবির করেও আইসিইউর ব্যবস্থা করতে পারেননি। অগত্যা নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নেমে চার দিন পর হেরে যান মাসুমা।

এদিকে, মসজিদের ইমাম আশরাফ আলী গত মঙ্গলবার হঠাৎ স্ট্রোক করলে চিকিৎসক তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠান। আইসিইউর খোঁজে রাজধানীতে এসে তাঁরও একই গতি। শয্যা ফাঁকা না থাকায় ঢামেক হাসপাতালে জায়গা হয়নি আশরাফ আলীর। কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলেকে সাফ জানিয়ে দেয়, এক সপ্তাহের আগে মিলবে না আইসিইউ। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর খোঁজ নেবেন– আর্থিক সংগতি না থাকায় সেই পথও রুদ্ধ। অসহায় ছেলে এখন বাবার জীবন-মৃত্যু সঁপে দিয়েছেন আল্লাহর ওপর।

আরও জটিল পরিস্থিতি নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি এ এস এম হাসান। কিডনি, লিভার, হৃদরোগসহ নানা রোগ নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেলে পা রাখেন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। ভর্তির পরপরই চিকিৎসক তাঁকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে আইসিইউ নামের ‘সোনার হরিণ’ দেখার অপেক্ষায় এখনও হাসান। তাঁর স্ত্রী আমেনা খাতুনের অভিযোগ, ‘টাকা ও তদবির ছাড়া এখানে আইসিইউ শয্যা মেলে না। আমাদের পরে কাগজ জমা দিয়েও অনেকে আইসিইউ বরাদ্দ পেয়েছেন। আনসাররা প্রকাশ্যে টাকা চান। টাকা না থাকায় সেই সুযোগটা আমরা নিতে পারিনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালে ৬০ শয্যার আইসিইউর বিপরীতে দিনে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। তবে দিনে আইসিইউর শয্যা খালি হয় মাত্র তিন থেকে চারটি। শুধু ঢামেক নয়, দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই একই পরিস্থিতি। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৫ আইসিইউ শয্যার বিপরীতে গত বৃহস্পতিবার ৭৪টি আবেদন জমা পড়ে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২০ শয্যার বিপরীতে ৪৫টি আবেদন পড়ে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ শয্যার আইসিইউর আবেদন জমা পড়েছে ৩৩টি।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সারাদেশ থেকে এখানে জটিল রোগী পাঠানো হয়। এদের অধিকাংশেরই আইসিইউর প্রয়োজন হয়। আমরা গুরুতর রোগী বাছাই করে আইসিইউ শয্যা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা তো আছেই। একটি আইসিইউ পরিচালনায় যন্ত্রপাতি যেমন লাগে, দক্ষ জনবলও লাগে। তবে আমাদের এখানে আইসিইউর জন্য জনবল ঘাটতি আছে। 
একটি যন্ত্র বিকল হলে ছয় মাসেও মেরামত করা সম্ভব নয় না। এতে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়। নতুন ভবনে ১৫টি আইসিইউর মধ্যে তিনটি যন্ত্র শুরু থেকে নষ্ট। বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো 
হলেও কাজ হচ্ছে না।

৭৫ শতাংশ আইসিইউ শয্যা ঢাকায়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে মোট আইসিইউ শয্যা আছে ১ হাজার ১৯৫টি। ঢাকা মহানগরে ৮২৬টির মধ্যে ৩৮৪টি সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৪৪২টি বেসরকারি হাসপাতালে। আর ঢাকার বাইরে ৩৬৯টি। আইসিইউর প্রায় ৭৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। তাই এই সেবা নিতে রোগীরা সব সময় ঢাকামুখী। 

ক্লিনিকে বাণিজ্য
সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য আলাদা খরচ দিতে হয় না। সাশ্রয়ের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা-তদবির করে স্বজনরা। এ পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে রোগীর লম্বা সারি দেখা যায়। যারা সরকারি হাসপাতালে চেষ্টা করেও আইসিইউর ব্যবস্থা করতে পারেন না, তারা আবার ফিরে যান বেসরকারি হাসপাতালে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দৈনিক আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। চিকিৎসক ফি, ওষুধের দাম এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ এর বাইরে। সব মিলিয়ে দিনে স্বাভাবিক খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। রোগীর অবস্থা জটিল হলে এই খরচা ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। যে হাসপাতাল যত বড়, তার আইসিইউর খরচ তত বেশি। এই খরচ অনেক রোগীর স্বজনের পক্ষে টানা সম্ভব হয় না। মাত্রাতিরিক্ত খরচার নিচে চাপা পড়ে অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। অনেক সময় রোগী মারা গেলেও তা স্বজনকে না জানিয়ে আইসিইউতে রেখেই ‘বিল বাণিজ্য’ করার অনৈতিক পথে হাঁটে কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

গত বুধবার ঢামেক হাসপাতালে শয্যা খালি না পেয়ে আল আমিন নামের এক রোগীকে যাত্রাবাড়ীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচের কথা জানায়। তবে এক দিন না যেতেই ৫৭ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রোগীর স্বজন কোনোমতে বিল পরিশোধ করে দুপুরেই আল আমিনের ছাড়পত্র নেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাওয়ার পথেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ছোট ও মাঝারি গোছের বেসরকারি হাসপাতালে যেসব আইসিইউ শয্যা আছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যথাযথ অনুমতি নিয়ে তারা আইসিইউ সেবা চালু করেনি। তবু এসব হাসপাতাল বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেই অধিদপ্তরের।

৩৪ জেলায় নেই আইসিইউ সেবা
সরকারি হাসপাতালে মোট শয্যার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকা আন্তর্জাতিক নিয়ম। তবে দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ যেন ‘ডুমুরের ফুল’। ৬৪ জেলার ৩৪টি সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা নেই। হাসপাতালে হাসপাতালে আইসিইউর অভাব প্রকট হয়ে ওঠে করোনাকালে। সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২ জুন জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেন। চার বছর পার হলেও সেই নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

এ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী তুহিন বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু জায়গায় আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় আইসিইউর যন্ত্রপাতি সরবরাহে দরপত্রও দেওয়া হয়। তবে সে সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন করে স্পেসিফিকেশন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। এতে দরপত্র উন্মুক্ত করা হলে ট্রায়াল রিভিউ ও এলসি খোলা নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়। এ পরিস্থিতিতে দরপত্র বাতিল করা হলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যায়। 

১৮ জেলায় আইসিইউ অচল
করোনা মহামারির সময় জেলা হাসপাতালে স্থাপিত ২৭ আইসিইউর ১৮টি এখনও অচল। করোনার পর এসব ইউনিট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ডেপুটেশনে চলে যায়। এতে ১৮ জেলা হাসপাতালে ২০২টি আইসিইউ শয্যা অকার্যকর হয়ে পড়ে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অচল আইসিইউ সচলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসারে আইসিইউ সেবা মিলছে না। সেবাবঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, সরকার টাকা খরচ করে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করলেও নানা সংকটে অনেক শয্যা পড়ে আছে শুধু জনবল সংকট ও সমন্বয়হীনতার কারণে। করোনার সময় গড়ে তোলা ১৮ জেলায় আইসিইউ সচল থাকলে বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারত। তবে দুঃখের বিষয়, এর কিছুই হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, যেসব ক্লিনিক আইসিইউ সেবার নামে অনৈতিক বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এটিও মানতে হবে, দেশে আইসিইউ পরিচালনায় লোকবলের সংকট রয়েছে। তাই অনেক জেলায় স্থাপিত আইসিইউ পড়ে আছে। জনবল নিয়োগে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের আইসিইউগুলো সচল করা আমাদের প্রথম লক্ষ্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
toto slot
bacansport
slot gacor
slot toto