Bangladesh

ব্যক্তিগত ডাটা জব্দে হাসিনার মন্ত্রী-এমপিরা বিপাকে, ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল

শেখ হাসিনার পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু বাতিল হওয়ায় অন্য কোনো দেশে যাওয়া কঠিন * বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশ ত্যাগ বা তৃতীয় কোনো দেশে যাতায়াতের ওপর কঠোর নজরদারির নির্দেশ

হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে ইস্যুকৃত বিশেষ প্রাধিকারভুক্ত লাল পাসপোর্ট বাতিল এবং সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য (ডাটা) জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা যাতে বাংলাদেশ ত্যাগ বা তৃতীয় কোনো দেশ ভ্রমণ করতে না পারেন সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদক্ষেপের ফলে শেখ হাসিনাসহ ইতোমধ্যে যারা সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন তাদের পক্ষে বিদেশের মাটিতে নির্বিঘ্নে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া হাতে বৈধ পাসপোর্ট বা স্বীকৃত ভ্রমণ দলিল না থাকায় বন্ধ হবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথ।

সূত্র জানায়, সরকার পতনের পরপরই হাসিনার মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও ১৪ দলীয় জোট নেতাদের পাসপোর্টও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক সচিব, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা প্রধান ও পদত্যাগকারী ভিসিদের পাসপোর্ট নবায়নে এখন ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।

এদের মধ্যে যারা লাল পাসপোর্ট জমা দিয়ে সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে অন্তত দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে।

সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাসপোর্ট বাতিল ও অন্য কোনো দেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে ৩ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উক্ত সংসদের কূটনৈতিক পাসপোর্টের প্রাধিকারভুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবর্গ, উপমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ-সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তিবর্গের অনুকূলে ইস্যুকৃত কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। উক্ত বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতে কেউ বাংলাদেশ হতে বিদেশে বা বিদেশ হতে তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণ করতে না পারেন সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

তালিকায় যারা : ইতোমধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২২ আগস্ট পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরপরই দ্রুততম সময়ে লাল পাসপোর্টধারী মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের তালিকা করা হয়।

পরে তালিকার কপি আগারগাঁও বিভাগীয় কার্যালয়সহ দেশের সব পাসপোর্ট অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশের বিশেষ শাখা ও অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা প্রধানদের কাছেও অনুলিপি দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বাতিলের পর কম্পিউটার সিস্টেমে সংরক্ষিত তাদের ব্যক্তিগত তথ্যও (ডাটা) জব্দ করা হয়েছে। ফলে এদের মধ্যে কেউ পাসপোর্ট প্রতিস্থাপন বা নবায়নের চেষ্টা করলে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। এতে দালাল চক্রের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে পেছন দরজা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করলে লাভ হবে না।

বাতিল পাসপোর্টের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট রয়েছে। তার পাসপোর্ট নম্বর ডি০০০১০০১০। দেশে ই-পাসপোর্ট সেবা চালুর পরপরই তিনি তার পুরোনো এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বদল করেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ৬৪ পাতার একটি ই-পাসপোর্ট নেন তিনি। তবে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ৫ বছর মেয়াদি হলেও নিয়ম ভেঙে হাসিনাকে ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাসপোর্ট কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনার হাতে বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় ভারতের বাইরে অন্য কোনো দেশে যাওয়া তার পক্ষে কঠিন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আগে তার অনুকূলে বৈধ ট্রাভেল পাশ ইস্যু করতে হবে। অন্যথায় তিনি ভ্রমণের অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় হাসিনার পক্ষে তৃতীয় কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া কঠিন।

সরেজমিন আগারগাঁও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জানা যায়, আত্মগোপনে থাকা সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা নিজে না এলেও পরিবারের নামে ইস্যুকৃত লাল পাসপোর্ট বদলে সাধারণ পাসপোর্ট পাওয়ার তদবির করছেন তাদের প্রতিনিধিরা।

এছাড়া সাধারণ পাসপোর্ট পেতে বর্তমানে ঢাকার পাসপোর্টের প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছেন সরকার ঘনিষ্ঠ সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন আব্দুল্লাহ সস্ত্রীক নিজে থেকেই লাল পাসপোর্ট সমর্পণ করেছেন। বর্তমানে তারা সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাসপোর্ট কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, নিজে আত্মগোপনে থাকালেও সাবেক একজন মন্ত্রী স্ত্রীসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য পাসপোর্ট নবায়নের চেষ্টা করছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা পাসপোর্ট নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন। বিশেষ করে তারা লাল পাসপোর্ট সমর্পণ করে সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সফল হননি।

বিদেশি পাসপোর্ট : বেশিরভাগ আটকা পড়লেও পতিত হাসিনা সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ইতোমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কুমিল্লার সাবেক প্রতাপশালী এমপি আ ক ম বাহার উদ্দিন ও মেয়ে সাবেক কুসিক মেয়র সূচনা বাহার ৫ আগস্টের পরপরই পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। এছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ভারত হয়ে বর্তমানে বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। এমনকি প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার ভারতীয় পাসপোর্টে দেশ ছেড়েছেন বলে খবর ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ।

সূত্র বলছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বিপদ টের পেয়ে আগেভাগেই দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনার কথিত আত্মীয় এবং এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আরও অনেকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের খোঁজ করছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব বা অন্য কোনোভাবে কেউ বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে থাকলে তার পক্ষে দেশ ত্যাগ এবং বিদেশ ভ্রমণ সহজ। কারণ ইমিগ্রেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছে দেশীয় পাসপোর্টের তথ্য থাকলেও বিদেশি পাসপোর্টের তথ্য থাকে না। ফলে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া বিদেশি পাসপোর্টধারীদের আটকানো কঠিন। এছাড়া সিঙ্গাপুর, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং ও ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের যে কোনো দেশে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে থাকেন। আগে থেকে তাদের ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

প্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও কূটনৈতিক ছাড়াও অন্তত ১৯টি ক্যাটাগরিতে লাল পাসপোর্ট দেওয়া হয়। এর মধ্যে মন্ত্রী পদমর্যাদায় নিযুক্ত ব্যক্তি, সিটি করপোরেশনের মেয়র, সচিব, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল, আইজিপি ও তাদের স্বামী বা স্ত্রী বিশেষ সুবিধার লাল পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। অবশ্য সংশ্লিষ্টদের কেউ ইচ্ছে করলে লাল পাসপোর্টের বদলে সাধারণ পাসপোর্টও নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিতভাবে পূর্ব-অনুমোদন নিতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কূটনৈতিক মর্যাদার লাল পাসপোর্ট কতজনকে দেওয়া হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাসপোর্ট অধিদপ্তর বা অন্য কোনো একক সংস্থার কাছে নেই। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্রসহ একাধিক মন্ত্রণালয় থেকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ইস্যুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে বুকলেট প্রিন্টিংয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। তবে দেশে লাল পাসপোর্টধারীর সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি হতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d