Bangladesh

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রভাব

৫৭ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত

ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না, এতে বাড়ছে খেলাপি ঋণ, কমছে ব্যাংকের আয় -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৫৭ হাজার কোটি টাকার আরোপিত সুদ আয় খাতে নিতে পারছে না। এসব অর্থ স্থগিত সুদ হিসাবে একটি আলাদা হিসাবে রাখা হয়েছে। বৈশ্বিক ও দেশীয় মন্দায় ব্যাংকগুলোর আয় কমছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের কারণে মোটা অঙ্কের সুদ আয় খাতে নিতে না পারায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো যেসব সুদ নগদ আদায় করে এবং নিয়মিত ঋণের বিপরীতে যেসব সুদ আরোপিত হয়, সেগুলো আদায় না হলেও আয় খাতে দেখাতে পারে। কিন্তু কোনো ঋণ খেলাপি হলে তার বিপরীতে সুদ নগদ আদায় ছাড়া আয় খাতে নিতে পারে না। সেগুলোকে স্থগিত সুদ হিসাবে একটি আলাদা হিসাবে জমা রাখতে হয়। কেবল ওইসব সুদ নগদ আদায় হলেই আয় খাতে নিতে পারে। এছাড়া যেসব খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হবে, ওইসব সুদ আয় খাতে নেওয়া যাবে। এছাড়া আর কোনো সুদ আয় খাতে নেওয়া যাবে না। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো মোটা অঙ্কের সুদ আয় খাতে নিতে পারছে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুশানের চরম সংকট। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ক্ষমতাসীনদের চাপে বিতরণ করা হচ্ছে ঋণ। বিতরণ হলেও আদায়ের অঙ্ক অতি নগণ্য। অন্যদিকে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শাস্তির আওতায় না এনে দেওয়া হচ্ছে নীতি সহায়তার আওতায় বিশেষ ছাড়। এ কারণে ক্রমেই বাড়ছে খেলাপি ঋণ। কমে যাচ্ছে ব্যাংকের আয়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীরা। এসব সমস্যা সমাধানে সুশাসন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আরোপিত সুদের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৮৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু এসব সুদ নগদ আদায় না হওয়ায় বা খেলাপি ঋণ নবায়ন না করায় এগুলো আয় খাতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো স্থগিত নামে একটি আলাদা হিসাবে স্থানান্তর করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকেরই আছে ২৫ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা, যা মোট স্থগিত সুদ আয়ের অর্ধেক। এ বিপুল আয় স্থগিত হয়ে যাওয়ায় কমে গেছে ব্যাংকের নিট আয়। এছাড়া সরকারি আরও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের সুদ আয় স্থগিত করা হয় প্রায় ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের কারণে ২৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত রাখা হয়েছে।

খেলাপি ঋণের কারণে আরোপিত এসব সুদ ব্যাংকগুলো আয় খাতে নিতে পারছে না। অন্যদিকে এসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের অর্জিত মুনাফা থেকে প্রভিশন খাতে অর্থ জমা রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো দুভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। এছাড়া খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণেল বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।

নিয়মিত ও খেলাপি ঋণেল বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন রাখার কথা ১ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রভিশন রাখা আছে ৮১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি ২৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো দুর্বলতার তালিকায় স্থান পেয়েছে। কারণ, ওইসব ব্যাংকের একদিকে খেলাপি ঋণ বেশি, অন্যদিকে তাদের আয় কম হওয়ায় রিজার্ভ তহবিলে অর্থ স্তানান্তর কম হচ্ছে। এসব কারণে তারা মুনাফা বা রিজার্ভ তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে প্রভিশন করতে পারছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button