Trending

ব্যাংক লুটের দায় চাপছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর

লোকসানী ব্যাংকের মুনাফা বিতরণে কড়াকড়ি

এস আলমের মতো নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান, সামিট গ্রুপসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে আর ফেরত দেননি। ৫ আগস্টের পর তাদের বেশির ভাগই গা ঢাকা দিয়েছেন।

দেড় দশকে লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম দেশের ব্যাংকিং খাত। এ সময়ে ব্যাংক খাত থেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন কৌশলে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়। কেবল এস আলমই নিয়েছে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এগারোটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা। এস আলমের মতো নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান, সামিট গ্রুপসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে আর ফেরত দেননি। ৫ আগস্টের পর তাদের বেশির ভাগই গা ঢাকা দিয়েছেন। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। এতে লুটপাট হওয়া ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই মুনাফা দিয়ে বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। লোকসানের মুখে পড়ছে ব্যাংকগুলো। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশির ভাগ ব্যাংকই লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে ওই ব্যাংক মুনাফা বিতরণ করতে পারবে না। মুনাফা বিতরণ করতে হলে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ফ্যাসিবাদের আমলে আওয়ামী সমর্থক ব্যাংক পরিচালকদের চাপে প্রভিশন ডেফার্ড করা হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হলে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে ঘাটতি প্রভিশন পরের তিন বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ দেয়া হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হলো ১০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর ২০ কোটি টাকা করে পরের পাঁচ বছরে তা পূরণ করার সুযোগ দেয়া হতো। এতে দেখা যেত পরের বছর অর্থাৎ নতুন বছরে প্রভিশন ঘাটতি হলো আরো ১০০ কোটি টাকা। এ ১০০ কোটি টাকার সাথে বকেয়া ২০ কোটি টাকার প্রভিশনসহ ১২০ কোটি টাকা পূরণ করতে হতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারত না। বেড়ে যেত পুঞ্জীভূত বকেয়া প্রভিশনের পরিমাণ। অথচ এ সুযোগ নিয়ে ঠিকই কিছু কিছু ব্যাংক প্রভাব খাটিয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করত। এভাবেই কিছু কিছু ব্যাংকের মূলধন কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার দোসর ব্যাংক পরিচালকরা গা ঢাকা দিয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর দলীয় হস্তক্ষেপ কমে গেছে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকও এ ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করেছে। ফলে এখন আর প্রভিশন সংরক্ষণে ডেফার্ড করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতেই ব্যাংকগুলোর আসল চিত্র বের হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের আকাশছোঁয়া অবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন সেমিনারে ইতোমধ্যে বলেছেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ৩৫ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। আর তা হলে, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছয় লাখ কোটি টাকা হবে। যা এত দিন আড়াল করা হতো। প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রকাশ করা হলে বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেবে। আর প্রভিশন ঘাটতি হলে ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। এতে বঞ্চিত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। অর্থাৎ ব্যাংক লুটেরাদের দায় চাপবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত এক নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত এ নির্দেশনা মোতাবেক কেবলমাত্র বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে। পূর্বের পুঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোনো নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যাবে না। পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনোক্রমেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সেসব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। এ নীতিমালা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্র হতে ব্যাংকগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto