ব্রিটেনের নির্বাচন নিয়ে কেন উত্তাপ নেই
নানা সংকট ঘিরে ধরেছে ব্রিটেনকে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচনের যে প্রচারণা চলছে, তাতে এসবের মাত্র কয়েকটিই উঠে আসছে। তাই যুক্তরাজ্যের ২০২৪ সালের নির্বাচনটি দেশে ও দেশের বাইরে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে না। বৃষ্টিবিধৌত ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের আকস্মিক নির্বাচন ঘোষণার শুরু থেকেই এটি বিরক্তিকর। সুনাক জানেন আগামী ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে তাঁর রোমাঞ্চকর ইতি ঘটতে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিরোধী দল লেবার পার্টি রেকর্ড বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসছে।
গতকাল মঙ্গলবার পলিটিকোর নিবন্ধে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, জুয়া ক্যালেঙ্কারির জেরে সুনাকের শীর্ষ সহকারীদের বরখাস্ত করা, হঠাৎ করে তার ডি-ডের অনুষ্ঠান বর্জন, ভোটের আগ মুহূর্তে রাজনৈতিক মৃত্যুর মুখ থেকে আবারও দৃশ্যপটে নাইজেল ফ্যারেজের আগমনের মতো ঘটনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এক সময়ের অপরাজেয় দল কনজারভেটিভ পার্টির অস্বাভাবিকভাবে পতন চোখে পড়ছে।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও মোহমুক্ত থাকা ব্রিটেনের জনগণের কাছে এ নির্বাচন ইতোমধ্যে ব্যর্থ। ২০২৪ সালে ব্রিটেন পদ্ধতিগতসহ নানা সমস্যায় জড়িত, গত পাঁচ সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারণায় তার মাত্র কয়েকটিই তুলে ধরা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অর্থনীতি রয়েছে ‘লাইফ সাপোর্টে’; প্রবৃদ্ধি নিচের দিকে ধাবমান। পাশাপাশি ব্রিটেনের ঋণের সুদ প্রদান বেড়ে শত শত বিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছেছে। সরকারি কর এরই মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
জনগণের জীবন ধারণের খরচ বেড়ে গেছে। এ আগুনে ঘি ঢালছে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের দাম। দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তা হলো, ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার সংকট। এতে কর্মী ও তহবিল– দুটোর ঘাটতিই তীব্র। ২০২৪ সালে ব্রিটেন আবাসন, কারাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল সরবরাহ সংকট নিয়েও জর্জরিত। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও বিশেষ সেবা এরই মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশটি আইনগতভাবে আগামী ২৫ বছর জিরো কার্বন নির্গমনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তথাপি হোক কনজারভেটিভ বা লেবার পার্টি– কেউই এসব বিষয় তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জায়গা দেয়নি। আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ সাহসী; কিন্তু তা অস্পষ্ট। ভালো কিছু দেওয়ার অঙ্গীকার করা হচ্ছে; কিন্তু কীভাবে তা দেওয়া হবে, তা বলা হচ্ছে না। নির্বাচনের প্রচারণায় ব্রেক্সিট নিয়েও নেই তেমন আলোচনা। ব্রিটেনের অর্থনীতির মধ্যে থাকা বিশাল কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে কার্যত কেউ কথা বলছে না। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নির্বাচনে ব্রিটেনের প্রধান দুই দলের ইশতেহার প্রসঙ্গে দেশটির প্রভাবশালী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিসের (আইএফএস) পরিচালক পল জনসন বলেন, দুই দলই মূল বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তিনি লেবার ও কনজারভেটিভ– উভয় দলের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে ‘নীরবতার ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ তোলেন। পল জনসন বলেন, কর, কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড, গণব্যয়ের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে সরকার সরাসরি জড়িত। এসব ইস্যুতে দুই দলের ইশতেহারে কথাবার্তা কম। তাই ৪ জুলাই আমরা অজ্ঞতার মধ্যে থেকেই ভোট দেব।
সোমবার প্রকাশিত দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনও ইউরোপের মতো প্রগতিশীল সরকার বেছে নিতে পারে। কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না, অথবা নাইজেল ফ্যারাজকে চ্যালেঞ্জ করছে না।
যুক্তরাজ্যে ৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টি বড় জয় পেতে পারে বলে বিভিন্ন জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে দলটির নেতা কায়ের স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনকে ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে সোচ্চার দেখা গেলেও স্টারমারকে তেমন একটা কথা বলতে দেখা যায় না। এ কারণে লেবার সমর্থকদের মধ্যেও আশাভঙ্গের উদ্বেগ আছে।