ভয়াবহ মাদক সিন্ডিকেট, আসছে চারদিক দিয়ে ♦ দেশজুড়ে বাড়ছে আসক্তের সংখ্যা
সরকারের জিরো টলারেন্সসহ কঠোর নির্দেশনার পরও মাদকের চোরাচালান থামছে না। যে পরিমাণ কোকেন, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে দেশে আসছে তার ৫ শতাংশও জব্দ করা যাচ্ছে না। মাদক কারবারিরা নৌ, সড়ক, রেল ও আকাশ পথ ব্যবহার করে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার মাদক বিক্রির ক্ষেত্রেও নিত্যনতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফরমকে টার্গেট করেও দেশে মাদকের ব্যবসা জমে উঠছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিকভাবে যতটুকু মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়, তা পাচার হয়ে আসার মাত্র ২০ ভাগ। তবে এ দেশে মাদক উদ্ধারের হার শতকরা ৫ ভাগের বেশি।
এ সর্বনাশা মাদকে ঘরে ঘরে আসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সংস্থাটির ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন জানান, গত ১৬ জুন রাত ১১টায় পশ্চিম রামপুরায় বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের সামনে শৌখিন স্পেশাল পরিবহন থেকে হাসান (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ওই বাসটি চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের তারাগঞ্জে যাচ্ছিল। পরে হাসানের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। আগের দিন রাজধানীর কাকরাইলে এসএ পরিবহনের প্রধান কার্যালয়ে প্যাকেট রুমে অভিযান চালিয়ে চারটি প্লাস্টিকের কৌটায় মোট ৭ হাজার ২৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সীমান্তবর্তী ১৯ জেলার ৯৫ পয়েন্ট দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাদক আসছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের ১৫ রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাতটি নতুন রুট দিয়ে ফেনসিডিল আসছে। সাতক্ষীরার সাতটি পয়েন্ট দিয়ে আসছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের ২৪ পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিলের পাশাপাশি হেরোইন আসছে। এ ছাড়া যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ১৩ পয়েন্ট দিয়ে দেশে ফেনসিডিল ঢুকছে। গাঁজার জন্য পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার নয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয় পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেশি থাকায় মাদকের ঢল থামানো যাচ্ছে না। তবে আমরা এ চাহিদা কমাতে মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করছি। মাদকের কুফল সম্পর্কে সাধারণদের জানাচ্ছি। মাদকাসক্তদের চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাদকের বিস্তার রোধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর তাদের মাদকবিরোধী অভিযানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৪টি ইয়াবা ট্যাবলেট, প্রায় ১৪৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৪৯ বোতল বিদেশি মদ, ৯ হাজার ২৬৩ লিটার বাংলা মদ, ৫৭ হাজার ৮৯৯ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ২২৯ কেজি গাঁজা, প্রায় ৩৩১ কেজি হেরোইন, প্রায় ১৩ কেজি কোকেন, ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৯টি নেশাজাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন, ১ লাখ ৫৩ হাজার ২১০টি অ্যানেগ্রা বা সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৬৫ হাজার ৬৬৪টি ইস্কাফ সিরাপসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।