ভরা মৌসুমে চড়া সবজির দাম
শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম এখন। এই সময়ে বাজারে সবজির সরবরাহ সবচেয়ে বেশি থাকে। সবজির পদেও থাকে নানান বৈচিত্র্য। এর পরও সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অথচ দাম এখন কমে আসার কথা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, দুই সপ্তাহ আগে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমেছে। হরতাল-অবরোধে ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এ ছাড়া এবার আলুর দাম বেশি থাকায় অন্যান্য সবজির দামে তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পলাশী, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি, অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই পদের আলুর দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। বাজারে কেবল নতুন আলু এসেছে। মানভেদে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে নতুন আলু বিক্রি হয়েছিল ৬০-৮০ টাকায়।
সবজির দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি। তবে সরবরাহের বড় কোনো ঘাটতি নেই। অবরোধের কারণে পরিবহনভাড়া একটু বেড়েছে। এরপরও মৌসুমের এই সময়ে দাম এত বেড়ে যাওয়ার কথা নয়।
মো. ইমরান মাস্টার, সভাপতি, বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতি
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরে থাকায় এই সময়ে দাম বেশ কমে আসে। কিন্তু এবার আলুর দাম বাড়তি থাকায় সবজির দাম কমছে না বলে দাবি অনেকের। নতুন আলুর দাম কমার সঙ্গে অন্যান্য সবজির দামও কমে। কিন্তু মাঝে এক দফা বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা আলু ওঠাতে পারেননি। সবজিও কম তুলেছেন। তাতে দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া অবরোধকে হাতিয়ার বানিয়ে অনেক পরিবহনচালক ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছেন।
এদিকে বাজারে গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এই পদের বেগুনের দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা। শিমের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে শিমের কেজি ৫০-৬০ টাকা ছিল, তা এখন কিনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। লাউয়ের দাম চড়েছে বেশি। প্রতিটি লাউয়ের দাম পড়ছে ৮০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৭০-৮০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটির দাম ৪০-৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি।
পলাশী বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘সবজি বেশ ভালোই আসছিল। তাতে দামও কমেছিল। সরবরাহ কমায় পাইকারিতে সবজির দাম পড়ছে বেশি। স্বাভাবিকভাবে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। তবে এ সময়ে দাম বাড়ার ফলে ক্রেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বেশ অস্বস্তিতে আছি।’
মৌসুমের এই সময়ে বাজারে টমেটোর কেজি ৫০ টাকার আশপাশে চলে আসে। এবার সেখানে ১০০ টাকার আশপাশে দাম দিতে হচ্ছে। এক কেজি দেশি টমেটোর দাম পড়ছে ১০০-১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টমেটো গত সপ্তাহে ৮০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছিল। সরবরাহ কম হওয়ায় দামও বাড়তির দিকে। পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে এলেও এখনো বড় সুখবর নেই। নতুন দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, সবজির দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি। তবে সরবরাহের বড় কোনো ঘাটতি নেই। অবরোধের কারণে পরিবহনভাড়া একটু বেড়েছে। এরপরও মৌসুমের এই সময়ে দাম এত বেড়ে যাওয়ার কথা নয়।
মৌসুমের এই সময়ে বাজারে টমেটোর কেজি ৫০ টাকার আশপাশে চলে আসে। এবার সেখানে ১০০ টাকার আশপাশে দাম দিতে হচ্ছে। এক কেজি দেশি টমেটোর দাম পড়ছে ১০০-১১০ টাকা।
মাছ-মাংসের দামে পরিবর্তন নেই
বাজারে মাছ-মাংসের দামে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগির কেজি পড়ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি রঙের ডিমের দাম পড়ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ডজন। গরুর মাংসের কেজি পড়ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। চাষের রুই আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আর চাষের তেলাপিয়া, পাঙাশের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে।
সবজির দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি। তবে সরবরাহের বড় কোনো ঘাটতি নেই। অবরোধের কারণে পরিবহনভাড়া একটু বেড়েছে। এরপরও মৌসুমের এই সময়ে দাম এত বেড়ে যাওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার
রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ক্রেতা আনোয়ারা বেগম বলেন, অনেক দিন ধরে চাল-তেল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। শীতের সময় সবজির দাম একটু কম থাকে, এবার তা-ও বেশি। মাঝে শুধু গরুর মাংসের দামটা একটু কমেছে।