Bangladesh

ভর্তির আড়াই দিনেই মারা যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগী

গতকাল মৃত্যু ১২, ভর্তি ২৭১১

হাসপাতালে ভর্তির আড়াই দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। চলতি বছর গত জানুয়ারি থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগে মারা গেছে ২৭৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যতো রোগী মারা গেছে এদের ৫৪.৪১ শতাংশই মারা গেছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। এই মৃতদের দেহে প্লাজমা লিকেজ (রক্তনালী ফুটো হয়ে যাওয়া) হয়েছিল বলেই তারা মারা গেছে গড়ে আড়াই দিনের মধ্যে। আবার মৃতদের ৩২.৫৭ শতাংশ মারা যাচ্ছে এক্সপান্ডেড সিনড্রোমে।

এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৭১১ জন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ১৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৫৮১ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, মৃতদের ১২ জনই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরের কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।

গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গুবিষয়ক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক ডা: শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে, ঢাকার বাইরে বাড়ছে।’ কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, এরই মধ্যে ঢাকার বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ডেঙ্গু আক্রান্ত। যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ তাতে মনে হচ্ছে, ডেঙ্গু মৌসুম শেষে ঢাকার এক কোটি মানুষই আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেন এমন একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের ৮০ শতাংশই ডেঙ্গু পজিটিভ অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত। এটা ঠিক যে ঢাকার বাইরে ধীরে ধীরে ডেঙ্গু বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকায় ডেঙ্গুর ভালো চিকিৎসা থাকলেও গ্রামে অথবা মফস্বল শহরে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় চলে আসছেন তারা। অন্য দিকে হাসপাতালে আসতে দেরি হচ্ছে বলে ভর্তির এক অথবা দুই দিনের মধ্যে অনেকে মারা যাচ্ছে।’

অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তরা হাসপাতালে দেরি করে আসছেন বলে তাদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে এবং গড়ে তারা হাসপাতালে ভর্তির ২.৬১ দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। চিকিৎসা পেতে দেরি হচ্ছে বলে তাদের ব্লাড ভেসেল লিকেজ হয়ে যাচ্ছে এবং রোগীরা শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

ব্লাড ভেসেল লিকেজ মানে কী? এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন ও শিশু সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল জানান, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিবডি রোগীর রক্তনালীকে ফুটো করে দেয় আর তখনই রক্তনালী থেকে রক্তের জলীয় অংশ, প্রোটিন বের হয়ে পড়ে এবং রোগী দ্রুত শক সিনড্রোমে চলে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে।’
ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ডা: শাহাদাত হোসেন ডেঙ্গুতে মৃতদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, যারা মারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ৩২.৫৭ শতাংশ রোগী এক্সপান্ডেড সিনড্রামে মারা যাচ্ছে। অর্থাৎ ডেঙ্গু হওয়ার পর এই রোগীদের দেহের কিছু প্রয়োজনীয় অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে এবং দ্রুত মৃত্যুবরণ করে। তিনি বলেন, অন্য দিকে যে ২৭৩ জন রোগী মারা গেছে তাদের মধ্যে কেবল ৯.৯৬ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত হেমোরেজিকে অর্থাৎ রক্ত ক্ষরণে মারা যায়।

অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই আসে যাত্রাবাড়ী থেকে। এরপর আসে জুরাইন, মুগদা, মিরপুর ও উত্তরা থেকে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি। অন্য দিকে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে। এ ছাড়া মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়াদী হাসপাতাল অতিরিক্ত বেড রয়েছে। রোগীরা ইচ্ছা করলে সেখানে গিয়ে ভর্তি হতে পারেন। তবে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন যে, রোগীরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি না হতে পেরে ফেরত আসছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অতিরিক্ত বেড রয়েছে। তিনি খোঁজ নিয়ে পরে জানাবেন, রোগীরা কেন ফেরত চলে এসেছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button