Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

ভারতীয় এজেন্ডা নিয়ে মাঠে জামায়াত

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ চার দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা যুগপৎ আন্দোলনে নেই এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ :: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সমঝোতার পথে সরকার এটা নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র, এ ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকতে হবে :সালাহউদ্দিন আহমেদ পিআর ভারতীয় একটি এজেন্ডা, এটা বাস্তবায়ন এবং জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে আন্দোলন সব মিলিয়ে একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র :ডা. জাহেদ উর রহমান

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ চারদফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের নায়বে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। যদিও এই দাবিতে ৮দল নিয়ে তাদের যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সাথে এই যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে গেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) এবং গণঅধিকার পরিষদ। অন্যদিকে একই দাবিতে পৃথকভাবে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস। তাদের এই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের নতুন তৎপরতা বলে মনে করছেন। আবার কেউ কেউ এটাকে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য চাপ তৈরীর কৌশল বলেও মনে করছেন।

জুলাই জাতীয় সনদ ও পিআর পদ্ধতিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ গণদাবি আদায়ে চলতি মাসে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল, ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল। ৫ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম ও গণহত্যা, দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। গতকাল একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধী দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং আহমদ আব্দুল কাদেরের দল খেলাফত মজলিশ।

জামায়াতসহ ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত এ দলগুলোর ঘোষিত এই আন্দোলন কর্মসূচিকে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের নতুন কর্মতৎপরতা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সেবাদাসী ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন সে দেশ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তারা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রথমে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুতে এ সরকারকে অস্থির করতে চেয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে এ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে হেয় করতে ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এরপর শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে অস্থির করতে চেয়েছে। আনসার বিদ্রোহ, সচিবালয়ে বিদ্রোহসহ আরও অনেক ইস্যু তৈরী করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পতনের চেষ্টা করেছে ভারত। তবে ভারতের এসব ষড়যন্ত্র সরকার বেশ সফলতার সাথে মোকাবেলা করে টিকে আছে। তবে ভারত তাদের ষড়যন্ত্রের জাল এবার ভিন্নভাবে বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেছে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর ইন্ডিয়া এ নির্বাচন বানচালের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য সে দেশে আশ্রিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাথে পরামর্শ করে তারা নতুন কৌশল নিয়ে অগ্রসর হতে চাচ্ছে। এ কৌশলের মধ্যে রয়েছে, ব্যাপক নাশকতা সৃষ্টি করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনের মাঠে নামানো। ভারতের যে প্রথম কৌশলের অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ও দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপর হামলা শুরু হয়েছিল। তবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নেয়ায় এনিয়ে আর অগ্রসর হতে পারছে না। তবে আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নাশকতা তৈরীর পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারও সতর্ক অবস্থানে আছে। ভারতীয় ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় যে কৌশল তা হলো বিভিন্ন দাবি নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনের মাঠে নামানো। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামিক রাজনৈতিক দল আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সেটি এই কৌশলেরই অংশ বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, দেশে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পর জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার তৎপরতা কোনো স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়। বরং মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তোলার ষড়যন্ত্র। পিআর ভারতীয় একটি এজেন্ডা। এটা বাস্তবায়ন এবং জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে আন্দোলন সব মিলিয়ে একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে নির্বাচন বানচালের জন্য। এ বিষয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সবাইকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে রাজনীতিতে বড় ধরনের দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।

জামায়াতসহ চারটি দল যেসব দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। এছাড়া রয়েছে জাতীয়পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষেধ করা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেকদিন ধরে আলোচনা চলছে। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর যে আলোচনা হয়েছে তাতে যে সব বিষয় নিয়ে মতবিরোধ ছিল তা অনেকটাই দূর হয়েছে। বিএনপি তাদের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণের ভার সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তবে সরকার চাইছে এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতা বা ঐকমত্য। এবিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই সনদের ব্যাপারে আমাদেরকে সমঝোতায় আসতেই হবে। এ থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই। অর্থাৎ তিনি জুলাই সনদের বাস্তবায়নের বিষয়ে সকল দলের ঐকমত্যের ব্যাপারে আশাবাদী। এ অবস্থায় আন্দোলনে যাওয়া মানে এর পিছনে অন্য কোন সূক্ষ্ম উদ্দেশ্য কাজ করছে এটাই প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে দাবি করছে তা ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন আগেই বাতিল করে দিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগই নেই। পিআর পদ্ধতি সুস্পষ্ট ভারতীয় এজেন্ডা বলে আখ্যায়িত করেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়টি জামায়াতের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠে নিয়ে এসেছে। এখন আরও কয়েকটি দল তার সাথে সুর মেলাচ্ছে। জামায়াত যদি সত্যি এটাকে মিন করে আন্দোলনে নামে তাহলে সেটা তাদের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করেন পিনাকী ভট্টাচার্য। আর যদি চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য দাবি তুলে থাকেন তাহলে সেটা নিয়ে কতদূর অগ্রসর হবেন সেটাও তাদের ভাবতে হবে। কেননা সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তাই সবাইকে এখন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অগ্রসর হতে হবে। যে কারো সামান্য ভুল হলে তার জন্য দলের এবং দেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

শুধু পিআর পদ্ধতি নয় ভারত এখন আরও একটি নতুন রাজনৈতিক চাল নিয়ে মাঠে খেলতে চাচ্ছে। সেটা হলো জাতীয়পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি। এ দাবিতে ইতোমধ্যে বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণ অধিকার পরিষদ এবং এবি পার্টি। সম্প্রতি এ দাবির সাথে একাত্ম হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ দাবিতে আন্দোলন শুরু করা নুরের উপর ইতোমধ্যে ব্যাপক হামলা হয়েছে। এটাকে তার দল প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা বলে দাবি করছে। অন্যদিকে অনেকে এর পিছনে অন্য কোন ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করছেন। অনেকে বলছেন, নুরের উপর এই হামলায় যারা জড়িত ছিল তারা শুধু আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ছিল না। বাইরের আরও অনেকে জড়িত ছিল। তাই এখন জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল যখন আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে তখন তৃতীয় পক্ষ নাকশতা তৈরীর সুযোগ নিতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। আর তাতে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরি। একই সঙ্গে ঘোষিত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনেরও তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন রাজনৈতিক সমঝোতা এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে যে পরিস্থিতি সৃষ্ট হবে তাতে ফ্যাসিবাদী শক্তিই লাভবান হবে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এ সংস্কারের দাবিগুলো বাহ্যিকভাবে যতই যৌক্তিক মনে হোক না কেন, এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, নির্বাচন বিলম্বিত করার ‘ষড়যন্ত্র ও কৌশল’ হিসেবেই এসব ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, সেই ঐক্যে কোনো না কোনো পক্ষ ফাটলের চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা তর্ক-বিতর্ক করছি, সংস্কারের জন্য আলাপ-আলোচনা করছি। কিন্তু নির্বাচনকে নিয়ে যেন দুয়েকটা পক্ষ ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। এটা নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র। এ ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকতে হবে।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে, তারা যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। আমরা যারা পিআর চাই, আমরা যারা সংস্কার চাই, যারা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই, সবাই মাঠে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করব।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button