Hot

ভারতের ইন্ধনে জুডিশিয়াল ক্যু’র চেষ্টা

ছাত্র-জনতা-আইনজীবীদের প্রতিরোধ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির পদত্যাগ

নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু অক্ষত থেকে যায় তার দীর্ঘ স্বৈরশাসনের প্রধান সহযোগী প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ। এই বিচার বিভাগে ভারতের প্রত্যক্ষ মদতে ক্যু করার অপচেষ্টা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনুগত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে চেষ্টা হয় এই ক্যু’র। তবে ছাত্র-জনতা এবং আইনজীবীদের সম্মিলিত প্রতিরোধ-সুনামিতে নস্যাৎ হয়ে যায় সেই ক্যু। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ইন্ধনে এই ক্যু করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সে জন্যই গতকাল হঠাৎ করে সজীব ওয়াজেদ জয় ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘মা শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারত পালিয়ে যাওয়ার সময় পদত্যাগ করেননি।’

সূত্রটি জানায়, প্রচার মাধ্যমে শেখ হাসিনার তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘন ঘন আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের পরিকল্পনা, শেখ হাসিনাকে এখনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করা, ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় বেনামি আইডি থেকে এবং বাংলদেশের কিছু ভারতীয় তাঁবেদার গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলা, লুটতরাজের কল্পকাহিনী প্রচার করে। দেশকে একটি অকার্যকর, অস্থিতিশীল, ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণের অপচেষ্টা করে। পৃথিবীর কোনো দেশ যখন এই পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে না, তখন শেখ হাসিনা ভারতের সাদরে গ্রহণ ইত্যাদি একই সূত্রে গাঁথা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূত বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে বাহ্যত পরাস্ত হলেও দেশের প্রায় সকল স্তরে এখনো বহাল তার সহযোগীরা। শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈর যুগে প্রধান সহায়ক শক্তি ছিল বিচার বিভাগ। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেও স্বপদে বহাল ছিলেন তারই বসিয়ে যাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন এবং বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তারাই আকস্মিক ফুলকোর্ট বসিয়ে সকাল ১০টায় আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে এনে গোপনে ক্যু’র চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ছাত্র-জনতা, আইনজীবী ও সংবাদকর্মীরা জড়ো হন। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধে ফুলকোর্ট রেফারেন্স বাতিল হয়ে যায়। দাবি ওঠে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির পদত্যাগের। মুহূর্তেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ভরে যায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতায়। তারা মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বারের সামনে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা।

এর আগে ভারতের ইন্ধনে বিনা নোটিশে আকস্মিক ‘ফুলকোর্ট রেফারেন্স’ বৈঠক ডাকার খবর প্রচারিত হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফুলকোর্ট রেফারেন্স বৈঠক প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়তে ওবায়দুল হাসানকে পদত্যাগের জন্য বেলা ১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। তার আহ্বানে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, শহীদুল্লাহ কলেজ, ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসাসহ কাছাকাছি অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের হাজার হাজার ছাত্র প্রবেশ করতে থাকেন সুপিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। তাদের অহিংস পদচারণা ও মিছিলে সয়লাব হয়ে যায় আদালত প্রাঙ্গণ। গোটা সুপ্রিম কোর্ট যখন বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দখলে তখন ৫/৬ গাড়ি সেনাসদস্য প্রবেশ করেন আদালত প্রাঙ্গণে। তারা মাইকিং করে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস না করার অনুরোধ জানান। এ সময় কয়েকজন ছাত্র সেনাসদস্যদের বলতে দেখা যায়, আমরা গুণ্ডা-সন্ত্রাসী নই। আমরা স্টুডেন্ট। আমাদের ভাঙচুর না করার অনুরোধ জানাচ্ছেন কেন? ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী। তাদের গিয়ে বলুন। আর এখানে মাইকিং না করে ওবায়দুল হাসান ও তার পারিষদকে পদত্যাগ করতে বলুন! এ সময় সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, জানি, আপনারা ভাঙচুর করবেন না। আমাদের তো ডিউটি করতে হয়!

ছাত্র-জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানে যখন সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন প্রকম্পিত হচ্ছিল, বেলা ১টা ৫ মিনিটে খবর আসে, ওবায়দুল হাসান পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে সন্ধ্যার মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করবেন। এ তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্ররা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা এই মুহূর্তে পদত্যাগ দাবি করেন। বেলা আড়াইটার দিকে পদত্যাগের খবর এলে সেনা সদস্যরা ছাত্রদের আদালত কম্পাউন্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। শিক্ষার্থীরা তখন হাইকোর্ট মাজার গেটের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করেন। বিকেল ৪টা নাগাদ বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি কাশেফা হোসেন পদত্যাগ করবেন মর্মে জানান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আইন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। তাদের পদত্যাগের ফলে আপিল বিভাগের বিচারপতি বলতে রইলেন বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম। বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিএনপি সরকার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনি আপিল বিভাগে একমাত্র বিচারপতি।

পদত্যাগপত্রেও ওবায়দুলের ঔদ্ধত্য : এদিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার প্রবল জোয়ারে পদত্যাগে বাধ্য হলেও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তার পদত্যাগপত্রে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ইনিয়েবিনিয়ে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয়ার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনা পরবর্তী পদত্যাগের মৌসুমে প্রত্যেকে পদত্যাগের কারণ ‘ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করলেও ওবায়দুল হাসান উল্লেখ করেন ভিন্ন কারণ। ওবায়দুল হাসান শাহীন শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নানা কটাক্ষ করেন। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল সংক্রান্ত রিটের আপিল শুনানিকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, শেখ হাসিনার সুরে স্বর মিলিয়ে কটাক্ষ করেন। তার এই তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায় পদত্যাগপত্রেও। পদত্যাগপত্রে তিনি ছাত্র বিক্ষোভের কথা চেপে গিযে লিখেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট’ বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডরুমসমুহ রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেস টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিগণকে শারীরিকভাবে হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজ কোর্টগুলো ও রেকর্ডরুমসমূহ রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই সিদ্ধান্ত (পদত্যাগের) নিতে হলো।’ লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পদত্যাগপত্রের প্রতিটি বাক্যে ছাত্র-জনতাকে ধ্বংসোন্মুখ, হামলাকারী, আক্রমণকারী তথা সন্ত্রাসী হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন তিনি। যা দেশ ছেড়ে পালানোর আগ পর্যন্ত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ছাত্রদের আন্দোলন সম্পর্কে এমন বক্তব্যই দিতেন।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির আসনে বসেও ওবায়দুল হাসান ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে আসছেন এজলাসে বসেই। যেমনÑ কোটা পুন:প্রচলন সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ে ওবায়দুল হাসান শাহীন কংক্রিট কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কোটা থাকবে কি থাকবে নাÑ এটি সাব্যস্ত করার এখতিয়ার দেন শেখ হাসিনার সরকারকে। অর্থাৎ এ রায়ে তিনি কোনো সমাধান দেননি। এখতিয়ার দিয়েছেন সরকারকে। অথচ ছাত্রদের আন্দোলনটিই ছিল শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা আপিল বিভাগে এ রায় প্রত্যাখ্যান করেন। তখন ওবায়দুর হাসান গত ১১ জুলাই অপর একটি মামলার শুনানিকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এক আইনজীবীকে বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের আপনারা পরামর্শ দিন। তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এটি যেন ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে বসা এবং ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার কথারই প্রতিধ্বনি।
ওবায়দুল হাসান আপাদমস্তক একজন ভারতপন্থি আওয়ামী পরিবারের সদস্য। নেত্রকোনা মোহনগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আখলাকুল হোসেন আহমেদের পুত্র তিনি। তার ভাই আওয়ামী লীগের টিকিটে নেত্রকোনা-৪ আসনে বিনাভোটের এমপি সাজ্জাদুল হাসান। সাজ্জাদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সিনিয়র সচিব থাকাকালে শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ অনুগ্রহপ্রাপ্ত। ওবায়দুল হাসান শাহীন ছাত্রজীবনে ছিলেন বাকশাল ছাত্রলীগের সভাপতি। ১৯৮৬ সালে নেত্রকোনা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে অন্তর্ভুক্ত হন সুপ্রিম কোর্ট বারে। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অ্যানরোলড হন। ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা যে নজিরবিহীন ভাঙচুর করে তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। এর পুরস্কারস্বরূপ শেখ হাসিনা সরকার ২০০৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত করেন। ভারতীয় দূতাবাসের পরামর্শক্রমে তাকে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল-২ এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনালে থাকাকালে বেশ কয়েকজন জামায়াত নেতাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এ নিষ্ঠুরতার পুরস্কারস্বরূপ ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর ওবায়দুল হাসানকে আপিল বিভাগে উন্নীত করা হয়। এ সময় হাইকোর্ট বিভাগের বেশ ক’জন বিচারপতি সুপারসিটেড হন। আইনজীবী মহলে গুঞ্জন রয়েছে শুধু সকল বেআইনি কার্যকলাপকে বৈধতা প্রদানই শুধু নয়Ñ ভারতের আশীর্বাদ থাকায় ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন।

দায়িত্ব নিয়েই তিনি সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতির মূল জায়গায় হাত না দিয়ে বাহবা কুড়ানোর মতো চটুল বিষয়াদি নিযে ব্যস্ত থাকেন। যার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল শেখ হাসিনাকে তোষণ। সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন আদালতে তিনি বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন শুরু করেন। আদালতে ন্যায়বিচারের কোনো চিহ্ন না থাকলেও উদ্বোধন করতে থাকেন ‘ন্যায়কূঞ্জ’। জেলা আদালতে গাছ রোপণ করেন। সভা- সেমিনারে যোগ দিয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবের স্তূতি গাইতে থাকেন। বিদেশ সফরে যান ঘন ঘন। বিভিন্ন জেলা সফরে গেলে ওই জেলার সমস্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, ডিসি-এসপিকে ব্যস্ত রাখেন তার প্রটোকল প্রদানে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সংস্কারের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করেন। মামলা জট হ্রাসের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে কেবল ‘বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি’র ঢোল বাজাতে থাকেন।

মামলার বিচারের ক্ষেত্রেও তার মাঝে কাজ করতো একচোখা নীতি। তার অপছন্দের আইনজীবীদের মামলা কার্যতালিকার শীর্ষে থাকলেও সেগুলো শুনানি করতেন না। পক্ষান্তরে তার মতাদর্শের আইনজীবীরা মামলা নিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই আদেশ পেয়ে যেতেন। তার সময়ে শুধু হাইকোর্ট নয়Ñ আপিল বিভাগের মামলা জটও বাড়তে থাকে। তার সময় হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগের বিভিন্ন সেকশন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্ররা যখন পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিচ্ছিল, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গুলি এবং হেলিকপ্টার থেকে র‌্যাবের গুলিতে একদিনেই যখন ২৬৬ জনের প্রাণহানি হলোÑ তখন ওবায়দুল হাসান শাহীন ছিলেন সম্পূর্ণ চুপ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন, ওই সময় তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলিং দিতে পারতেন। ছাত্রদের ওপর গুলি চালাতে তিনি শেখ হাসিনাকে নিবৃত করতে পারতেন। সেটি না করে তিনি ছাত্র-জনতার রক্ত পিপাসু শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীদের বিষয়ে তিনি ছিলেন দারুণ রকম একচোখা। বিচারপতিদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ দাবি করলেও সহকর্মী এম ইনায়েতুর রহিমের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। উপরন্তু শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদের পদত্যাগ দাবি করায় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলে ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম নামক এক প্রার্থী সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। রুলের শুনানির আগেই তার আইনজীবী সনদ স্থগিত করে দেন। একইভাবে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, সৈয়দ মামুন মাহবুব, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা রুল জারি করেন। পক্ষান্তরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামীয় আইনজীবী পরিষদের মহাসচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে আদালত থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়ার স্বীকারোক্তি দেন। সেই দম্ভোক্তি উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হলেও ওবায়দুল হাসান সেটি শুনানির কোনো উদ্যোগ নেননি। উপরন্তু কোনো ধরনের ফুলকোর্ট সভা ছাড়া একক সিদ্ধান্তে গত ৭ আগস্ট প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের সকল বিচারিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। নজিরবিহীন এ ঘোষণায় আইনজীবীরা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। এতেও ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যায়। যদিও এর একদিন আগে বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন এবং চেম্বার কোর্টের বিচার কার্যক্রম চলবেÑ মর্মে জানিয়েছিলেন। তার এসব আচরণ অত্যন্ত রহস্যজনক বলে মনে করেন বিচারাঙ্গনের মানুষজন।

একটি বিচার বিভাগীয় ক্যু’র সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া যায় শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি বক্তব্যে। স্বৈরচারী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মায়ের পক্ষে সরব রয়েছেন তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম, কখনো বা ভারত নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এখন এক কথা বলছেন তো পর দিনই বলছেন উল্টো কথা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দিশেহারা আওয়ামী লীগ নেতারা যখন পলায়নপর, দিশেহারা ও আত্মগোপনে, শেখ হাসিনা যখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তখন সজীব ওয়াজেদ জয়কে দিয়ে ভারতই এসব বক্তব্য দেয়াচ্ছে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। যেমন শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান। ৬ আগস্ট সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে বলেন, তার মা শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না, তিনি হতাশ। ৭ আগস্ট তিনি বলেন, ‘ শেখ হাসিনা মরে যাননি, আমরা কোথাও যাইনি’। ৮ আগস্ট জয় বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। ৯ আগস্ট জয় বলেন, আমি রাজনীতিতে যোগ দিতে প্রস্তুত। ৯ আগস্ট বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিলে দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গতকাল ১০ আগস্ট জয় বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী। এখানে তিনি শেখ হাসিনাকে শুধু বৈধ প্রধানমন্ত্রীই দাবি করেননি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রশ্নে তিনি উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়েরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার এ ইঙ্গিতের পরপরই ফুলকোর্ট সভা ডাকেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়কদের ক্ষুব্ধ করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot