Hot

ভারতের কাছে হেরে গেল চীন : মোংলা বন্দর কূটনীতি

পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে একটি টার্মিনালের অপারেটিং অধিকার সুরক্ষিত করে ভারত কৌশলগত জয় পেয়েছে। বিদেশি বন্দরগুলোর আধা-নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্রতিযোগিতায় বেইজিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে নয়াদিল্লির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই চুক্তিটিকে দেখা হচ্ছে।  মোংলা বন্দর- চট্টগ্রামের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের চাবাহর এবং মিয়ানমারের সিতওয়ের পরে বিদেশি বন্দর পরিচালনার জন্য মোংলা বন্দর চুক্তি  ভারতের তৃতীয় সফল বিড। মোংলা বন্দর চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বন্দর, নৌপরিবহন ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টার্মিনালটি পরিচালনা করবে ইন্ডিয়ান পোর্ট গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল)। ভারতীয় সাবেক নৌ অফিসার কমোডর সি উদয় ভাস্কর  এই সপ্তাহে বলেছেন: মোংলা ভারতের জন্য একটি সম্ভাব্য বড় সুযোগ, যা ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর জন্য একটি যথার্থ  বন্দর অংশীদার হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজের একজন পরিচালক ভাস্কর উল্লেখ করেন যে, ভারত কন্টেইনার ট্র্যাফিকের ভিত্তিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বন্দরে স্থান পায়নি, যেখানে তালিকায় চীনের ছয়টি ছিল। ভারতের ন্যাশনাল মেরিটাইম ফাউন্ডেশনের অনারারি ফেলো ভাস্কর মনে করেন, বিশ্বব্যাপী  বন্দরের ক্ষেত্রে  ভারত কম মনোযোগ এবং বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বব্যাপী ৬৩টি দেশে ১০০টিরও বেশি মূল বন্দরে  আধা-নিয়ন্ত্রণ পেতে চীনের বিনিয়োগ দেখেই স্পষ্ট দেশটি সামুদ্রিক শক্তি  বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে।

ভাস্কর বলেন অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক কারণে ইরান এবং মিয়ানমারে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর  অগ্রগতি সেভাবে হয়নি এবং আশা করি এবার  মোংলা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চল চীনের মেরিটাইম সিল্ক রোড উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন বেইজিং জিবুতিতে ৭৮ মিলিয়ন ডলার থেকে পাকিস্তানের গোয়াদরে ১.৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বন্দর খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে। চীনা কোম্পানিগুলো বর্তমানে ১৭টি ভারত মহাসাগরীয় বন্দরে জড়িত রয়েছে, তার মধ্যে ১৩টি নির্মাণ করছে এবং আটটি প্রকল্পে অংশীদারিত্ব রয়েছে। ভারত মহাসাগরের বাইরে, চীনা কোম্পানিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশে বন্দর বা টার্মিনালগুলোর জন্য ইজারা স্বাক্ষর করেছে। গত মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের ভারত সফরের পর মোংলা বন্দর চুক্তি হয়। সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন। উভয় দেশ সামুদ্রিক সহ বেশ কয়েকটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা চীন সফর করেন এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। দ্য ডিপ্লোম্যাটের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, হাসিনা বাংলাদেশের বাজেট অনুযায়ী বেইজিং থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং পরিবর্তে শুধুমাত্র ১৩৭ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন।

‘বন্দর কূটনীতি’বিশেষজ্ঞদের মতে, মোংলা বন্দর টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা ভারত মহাসাগরের পশ্চিম এবং পূর্বদিকের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অবস্থানগুলোতে ভারতের প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তায় তার ভূমিকাকে শক্তিশালী করবে। ভাস্কর বলেন, বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনা করা হলো ‘বন্দর কূটনীতির’ একটি রূপ-   যা কৌশলগত তাৎপর্য  অর্জন করছে এবং চীন সাফল্যের সঙ্গে এই পথটি অনুসরণ করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট এবং কার্গো শিপিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম ও  মোংলা বন্দরে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার দেয়। মোংলায় টার্মিনালের অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ লাভ করায় ভারতের বাণিজ্য সংযোগ আরও বাড়িয়ে দেবে। ভাস্করের মতে আগামী ২৫ বছরে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে কৌশলগতভাবে অবস্থিত বন্দরগুলো বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলোর কাছে  আরও বেশি গুরুত্ব পাবে। মালদ্বীপ, জিবুতি, পাকিস্তানের গোয়াদর এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় বন্দর বিনিয়োগের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি যোগ করেছেন- ইতিমধ্যেই এসব জায়গায় চীনের  পদচিহ্ন রয়েছে। চীনের জ্বালানি আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশ ভারত মহাসাগর অঞ্চল দিয়ে যায় এবং বন্দরগুলো তার কৌশলগত বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভাস্কর বলছেন- চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ মেগা-প্রকল্প মারফত  বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে  দক্ষ পরিচালনার উপর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে এবং এটি বেইজিংয়ের জন্য একটি উচ্চ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। এসব মাথায় রেখে, ভারতকে তার বন্দর কূটনীতি পর্যালোচনা করতে হবে এবং সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনায় তার দক্ষতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ভাস্কর। তিনি বলেন, ভারত মোংলায়  ডেলিভারি না করলে ঢাকা বেইজিংয়ের দিকে ঘুরে যেতে পারে। হাম্বানটোটার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে।

স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন এবং জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির চায়না স্টাডিজের অধ্যাপক শ্রীকান্ত কোন্ডাপল্লী বলেছেন, ভারত ও অন্যান্য দেশ গত দুই দশকে শুধু ভারত মহাসাগর অঞ্চলেই নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য অংশেও চীনের সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণ কর্মকাণ্ডে বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে। সাধারণভাবে, এ ধরনের অবকাঠামো প্রকল্প বাণিজ্যের জন্য সহায়ক। তবে চীনের উদ্দেশ্যগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
কোন্ডাপল্লী বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত এবং অন্যান্য দেশের কোম্পানিগুলোও বন্দর বিনিয়োগে ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত রয়েছে; যদিও তাদের উদ্দেশ্য বেইজিংয়ের থেকে আলাদা।  আদানি গ্রুপের মতো ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলো আজ ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইসরাইল এবং অন্যান্য দেশে সামুদ্রিক প্রকল্পের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। এগুলো হলো প্রাইভেট কোম্পানিÑ যা কোনো রাষ্ট্র বা নৌবাহিনীর স্বার্থের পরিবর্তে মুনাফার উদ্দেশ্য দ্বারা চালিত হয়। এটি চীন সম্পর্কে বলা যাবে না; কারণ চীনের ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থের  মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’
কলকাতাভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো সোহিনী বোস ভারতের জন্য মোংলা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, এটি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। দ্বিতীয়ত, এটি ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে  সংকীর্ণ এবং ঘনবসতিপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরকে বাইপাস করে কলকাতা বন্দরে বিকল্প প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে সামুদ্রিক বাণিজ্যের সুযোগ করে দেবে। একে অপরের কাছাকাছি থাকার কারণে মোংলা বন্দর এবং কলকাতা বন্দর বাংলাদেশের বেনাপোল শহর এবং সীমান্ত অঞ্চলে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের মধ্যে পণ্যের চালানের সময় কমিয়ে দিতে পারে, যেখানে চালান ১৫ দিন পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। তৃতীয়ত,  মোংলা বন্দরে বিনিয়োগ ভারতকে বঙ্গোপসাগর এবং বিস্তৃত ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিজের পদচিহ্ন রাখার সুযোগ করে দেবে যা ক্রমশ ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ ভি শ্রিংলা বলেছেন, চীনকে মোকাবিলা করার পরিবর্তে, মোংলা চুক্তিকে বাংলাদেশকে তার বন্দর অবকাঠামো উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য ভারতের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত। শ্রিংলার মতে, ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মোংলা  বন্দরটির উন্নয়নে সহায়তা করছে ভারত। এই বন্দর দিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে, অন্যথায় তা সড়কপথে পরিবহন করতে হতো। শিপিং এখন অনেক সহজ এবং সস্তা বিকল্প।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d