ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলকে পাত্তা দিবে না বাংলাদেশ

ভারতের পরিবর্তে আর কোন কোন দেশে তৈরী পোশাক খাতে শিপমেন্ট করা যায় কি না তা নির্ধারণের জন্য আগামী সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সাথে বৈঠকের আয়োজন করা হতে পারে।
– বিনিয়োগ সম্মেলনের সময় ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল দুরভিসন্ধি হতে পারে
– ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশ কোনো সমস্যাবোধ করছে না : বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলকে পাত্তা দিবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করছে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে দেশের ব্যবসার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে না। প্রাথমিকভাবে দেশের রফতানিমুখী তৈরী পোশাক খাতের শিপমেন্টের কিছুটা বিঘœ ঘটলে খুব শিগগিরই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। ভারতের পরিবর্তে আর কোন কোন দেশে তৈরী পোশাক খাতে শিপমেন্ট করা যায় কি না তা নির্ধারণের জন্য আগামী সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সাথে বৈঠকের আয়োজন করা হতে পারে। তবে প্রথমে দেশের বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশ কোনো সমস্যাবোধ করছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একধরনের দাবি উঠেছে যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট বাতিল করা যায় কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এটি তার বিষয় নয়; তার কাজ হচ্ছে সক্ষমতা বৃদ্ধি।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে সময় হুট করে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করা বিষয়টি নীচু মনমানসিকতার পরিচয় বহন করে। এতে তাদের কোনো দুরভিসন্ধী লুকিয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে বাংলাদেশে আসা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছে যে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে এ দেশের রফতানি বাণিজ্য আগামীতে ব্যাহত হবে। ফলে এ দেশ বিনিয়োগের জন্য উপযোগী কোনো দেশ নয়। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা কোনো বিদেশী ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। এ বিষয়টি আমরা কেউ পাত্তাই দিচ্ছি না।
উল্লেখ্য, ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা গতকাল মঙ্গলবার বাতিল করেছে ভারত।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল বাণিজ্য উপদেষ্টা সংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা (ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল) আমাদের ওপর হঠাৎ করে আরোপিত হয়েছে। সাথে সাথেই আমাদের সকল অংশীজন নিয়ে গতকাল (বুধবার) আমি মিটিং করেছি। ইনশাআল্লাহ, এটাতে আমরা কোনো সমস্যাবোধ করছি না। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা, প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় যাতে কোনো ঘাটতি না হয় এবং আমাদের রফতানির ক্ষেত্রে যাতে যোগাযোগের কোনো ঘাটতি না পড়ে সে ক্ষেত্রে আমরা সব ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমি আশা করি এটা আমরা উতরে যাবো।’
কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- এ বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমি এই মুহূর্তে আপনার সঙ্গে শেয়ার করবো না। প্রতিযোগিতায় আমাদের যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেগুলো কিছু কাঠামোগত, কিছু খরচের দিক থেকে- সব জিনিস সমন্বয় করে আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি করবো। আমি এখানে কোনো সমস্যা দেখছি না।
এটা নিয়ে আপনারা ভারতকে কোনো চিঠি দেবেন কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে বিবেচনা করছি না।’
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধায় কী পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়- জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টনের মতো ম্যাটেরিয়াল সড়ক পথে ভারতের বিভিন্ন বন্দর বিশেষ করে দিল্লি, কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি হতো। এই ম্যাটেরিয়ালগুলো বহনের জন্য নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্যা অতি দ্রুত সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ। সাধারণত ইউরোপীয় দেশগুলোতে পণ্যগুলো যেত।’
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভেরি গুড। আমাদের বাণিজ্যের মধ্যে স্থিরতা দেখা দেবে। গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে অনলাইনে। আমরা আমাদের কর্ম সমষ্টিগুলো নিয়ে কাজ করছি। যখন সম্ভব আমরা দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে নিজেরাও যাবো, গিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থগিতাদেশ তো সাময়িক সময়ের জন্য। এ বিষয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদে করণীয় আছে, তাদের আকাক্সক্ষা তো শেষ হয়ে যায়নি। সেই আকাক্সক্ষাগুলোকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে কতটুকু করতে পারবো- সেই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করছি এবং সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’ তিনি বলেন, ‘মূল আকাক্সক্ষা হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কিভাবে সমন্বয় করা। আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কাজ করছি। আশা করছি, এ ক্ষেত্রে শিগগিরই ভালো কিছু হবে।