Bangladesh

ভারতের বিদ্যুৎ করিডোর চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীই হলেন দুর্নীতির শ্বেতপত্রের ফোকাল কর্মকর্তা

দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতকে একতারফাভাবে বিদ্যুৎ করিডোর দিতে সম্মত হয়েছিলেন খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। শেখ হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই ভারতে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তিনি এককভাবে সম্মতি দিয়ে এসেছিলেন এ বিষয়ে। আর এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এখন ভারতের স্বার্থে কাজ করা অতিউৎসাহী সেই সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরীকেই বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, যেখানে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার জন্য তিরস্কার পাওয়ার কথা, সেখানে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ আসলে কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটা নিয়েই এখন প্রশ্ন করেছেন দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভারতের প্রয়োজনে ভারতের বরনগর হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পারবর্তীপূর হয়ে ভারতের অপর অংশ কাতিহারে ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয় নয়াদিল্লি। ২০১৬ সালে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারিগরি ও আর্থিক বিবেচনায় এ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে বাংলাদেশের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আদানি থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এজন্য আলাদা আলাদা সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে আলাদা আরেকটি সঞ্চালন লাইন স্থাপনের তেমন কোনোই প্রয়োজন নেই। আর এ কারণে বাংলাদেশ থেকে এ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে কালক্ষেপণ করা হচ্ছিল।

প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল এ সঞ্চালন লাইনের কাজ ভারত নিজেই করবে। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ ভারত যৌথ কোম্পানি গঠন করে ওই কোম্পানির মাধ্যমে এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ-ভারতের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাসংক্রান্ত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির ২১তম এ সভা অনুষ্ঠিত হয় খুলনায়। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়, দুই দেশের সঞ্চালন কোম্পানির অংশীদারত্বে একটি যৌথ বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি গঠিত হবে। তারা ভারতের কাতিহার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে আবার দেশটির বরানগর পর্যন্ত ৭৬৫ কেভির (কিলোভোল্ট) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাহিদা না থাকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না দেশটি। বিদ্যুৎ করিডোর পেলে ভারতের এ অংশের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপর অংশে নেয়া সহজ হবে। তাই দেশটি দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিদ্যুৎ মূলত নদীতে বাঁধ দিয়ে উৎপাদন করা হবে, যাতে ভাটির দেশ বাংলাদেশে পানির প্রবাহ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য বরাবরই মরিয়া ছিলেন। বিদ্যুৎ সিস্টেমকে ধ্বংস করার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন তারা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। তাকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে জনপ্রশাসন থেকে আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বহাল তবিয়তেই বিদ্যুৎ বিভাগে পড়ে রয়েছেন। এর আগেও তাকে এনআইডি প্রকল্পের ডিজি করা হয়েছিল। কিন্তু সিলেটের কানেকশনে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে ধরে বদলি আদেশ বাতিল করতে তিনি সক্ষম হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পিজিসিবি এক সমীক্ষা করেছে, ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপনে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপনে ব্যয় হবে ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। ভারতের প্রয়োজনে এ লাইন স্থাপনে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এ অর্থ ঋণ দেবে। বাংলাদেশকে ঋণের দায় বহন করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটিতে বাংলাদেশ অংশে তিনজন সদস্য রয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলেন সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে পাওয়ার গ্রিডের সঞ্চালন সিস্টেমকে (পাওয়ার গ্রিডের জন্য ক্ষতিকারক হলেও) ভারতের চাহিদা মোতাবেক তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করছিলেন তিনি। পাওয়ার গ্রিডের কারিগরি মতামত উপেক্ষা করে এবং ৭৬৫ কেভি বরনগর (ভারত)-পার্বতীপুর (বাংলাদেশ)-কাতিহার (ভারত) সঞ্চালন লাইন নির্মাণে কারিগরি ও আর্থিক বিবেচনায় পাওয়ার গ্রিডের কোনো প্রয়োজন না হলেও পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করার একতরফা সিদ্ধান্ত ভারতকে দিয়ে এসেছে ভারতে অনুষ্ঠিত গত ১৮-২১ জুলাই যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির (ঔঝঈ/ঔডএ) সভায়। এ জন্য কোনো প্রকার কারিগরি স্টাডি সম্পন্ন করা হয়নি। এতে বাংলাদেশের পক্ষে তিনজন সদস্য স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও তিনি একাই প্রাথমিক এ সিদ্ধান্ত স্বাক্ষর করে এসেছেন। বাংলাদেশকে করিডোর হিসাবে ব্যবহার করে ভারতের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে এ সঞ্চালন লাইনটি প্রথমে ভারত তাদের নিজস্ব টাকায় করতে রাজি থাকলেও আলোচ্য সভায় এ কাজটি পিজিসিবি করবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে আসেন এই কর্মকর্তা। এটা পিজিসিবিকে দেউলিয়া হিসেবে প্রমাণ করা এবং প্রাইভেট কোম্পানিকে দেওয়ার প্রচেষ্টা মাত্র বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d