International

ভারতের মণিপুর নতুন সহিংসতায় নিহত ৬

নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে ভারতের সংঘাতময় মণিপুরে। রাজ্যের জিবিরাম জেলায় শনিবার সকালে সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িসহ দুটি স্থানে রকেট হামলা চালিয়েছে কুকি বিদ্রোহীরা। উত্তেজনার মধ্যে শনিবার রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যটিতে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে।

গোটা রাজ্যকে সেনাসদস্য দিয়ে মুড়ে ফেলা হলেও সহিংসতার লাগাম টানা যাচ্ছে না। শুক্রবার ময়রাং শহরে রকেট হামলা চালায় আততায়ীরা। সেনার মিউজিয়াম থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে চলে ওই হামলায় মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। পাশাপাশি ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর এলাকায় আরও একটি ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। এরপর গতকাল শনিবারও রক্তাক্ত হয় ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যটি। এদিন এক ব্যক্তিকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে জিরিবাম জেলায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে শুক্রবারের রকেট হামলার পরপরই রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং হামলাকারীদের ধরতে চলছে চিরুনি অভিযান। কয়েক দিন ধরে কয়েক দফায় ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়ে আসছিল বিদ্রোহীরা। এর মধ্যে গতকাল চলতি বছরের প্রথম রকেট হামলা চালানো হলো। অতীতে এমন রকেট হামলার নজির থাকলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ইতিহাসে আগে কখনও এত ব্যাপক পরিমাণে ড্রোন হামলা চালায়নি কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী। 

মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি লঞ্চার ব্যবহার করে ময়রাং শহরে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মাইরেম্বাম কোইরেং সিংয়ের বাড়িতে রকেট হামলা চালানো হয়। রকেটটি সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সীমানায় আঘাত হানে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বাড়ি থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে রকেটটি আছড়ে পড়ে। 

এর আগে শুক্রবার ভোরে বিষ্ণুপুর জেলার ত্রংলাওবি গ্রামে আরও রকেট হামলা চালানো হয়। সেখানে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুকি বিদ্রোহীরা এসব হামলা চালিয়েছে।

কুকি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুরের পাহাড় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের কোনো এলাকা থেকে রকেটগুলো ছোড়া হয় বলে জানান এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন, ড্রোনের ব্যবহার প্রমাণ করে যে রাজ্যে ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে এবং সন্ত্রাসী হামলা চলছে। রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিস্ফোরক বহনকারী ড্রোন ব্যবহার করে আক্রমণের বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

২০২৩ সালের মে মাসে মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কুকি সম্প্রদায়ের সংঘাত শুরু হয়। এই সাম্প্রদায়িক সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত ২২৫ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়েছেন ৬০ হাজার বাসিন্দা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button