International

ভারতে গণপিটুনিতে মুসলিম হত্যায় বাড়ছে শঙ্কা

লোকসভা নির্বাচনোত্তর ১২ জনের মৃত্যু বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ঘৃণামূলক অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি

ভারতের দুটি শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক সংগঠন বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের পরে ভারতে মুসলিমবিরোধী সহিংসতার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সারা ভারতে মুসলমানদের টার্গেট করে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সম্পত্তি ধ্বংসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যেগুলোর চারটিতে অমুসলিমরা জড়িত রয়েছে।

তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে মুসলিম সংস্থাগুলো সরকারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বিবৃতি এবং মুসলিমদের লক্ষ্য করে লিঞ্চিং এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নসহ অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জামায়াতে ইসলাম হিন্দ তথা জেআইএইচ তার বিবৃতিতে বলেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলো থেকে খবর আসছে এবং রাজস্থানে অনেকগুলো মামলার রিপোর্ট করা হয়েছে’।

সংগঠনের সহ-সভাপতি সেলিম ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস (এপিসিআর) এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে অংশ নিয়েছিলেন যা ৭ জুন থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় ১০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে টর্গেটেড বুলডোজিং ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং হিমাচল প্রদেশে মুসলমানদের সম্পত্তিতে হামলা নথিভুক্ত করেছে।

উল্লেখযোগ্য, এফআইআর দায়ের করা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
মিডিয়ার সাথে প্রতিবেদনটি শেয়ারকালে সংগঠনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার গঠনের প্রায় এক মাস হয়ে গেছে এবং এটি তার সমস্ত নাগরিকদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন বলে মনে হচ্ছে’।

মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক টার্গেট অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়ে দলটি নতুন প্রণীত আইন, ভারতীয় ন্যায়, সংহিতা, ২০২৩-এর কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে, যা জনতার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করে।

প্রেসিডেন্ট সেলিম আল-মুহান্দিস বলেছেন : ‘তিনি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি বিবৃতি চেয়েছেন’। ঘটনাক্রমে, দ্য হিন্দু রিপোর্ট করেছে, অমিত শাহ লোকসভা নির্বাচনের অল্প আগে একটি মুসলিম প্রতিনিধি দলের সাথে তার বৈঠকে লিঞ্চিং মামলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
একইভাবে, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি আরশাদ মাদানিও টার্গেটেড সহিংসতার নিন্দা করেছেন। তিনি মব লিঞ্চিংকে ‘সহিংসতার নিষ্ঠুর রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা কমাতে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিরোধী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

‘আমরা খুশি যে, মি. রাহুল গান্ধী বিরোধী দলের নেতা হিসাবে সংসদে তার প্রথম বক্তৃতায় সহিংসতা এবং ঘৃণার বিরুদ্ধে তার আওয়াজ তুলেছিলেন আমরা আশা করি যে মি. গান্ধীর পরে অন্যান্য বিরোধী নেতারাও সংসদে হিংসা, ঘৃণা এবং অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলবেন’।

জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের পরিচালনা পর্ষদ ভারতে ইসলামবিদ্বেষের অবসান ঘটাতে এবং সহাবস্থানের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষ আইনের দাবি : এর আগে ৫ জুলাই জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের নেতারা একটি বৈঠকে যারা সহিংসতা উসকে দেয় তাদের শাস্তি দিয়ে ইসলামফোবিয়া মোকাবেলায় পৃথক আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছিল।
এসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ আসাদ মাদানী বলেন, দেশ ঘৃণার ওপর ভর করে চলতে পারে না। মাওলানা মাদানী বলেন, ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা আমাদের জাতির ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ’।

তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে অপমানজনক বিবৃতির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন, যেমন দাবি করা যে, তারা ‘অধিক সন্তান আছে’ এবং ‘অনুপ্রবেশকারী’,। এসব বিবৃতিকে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে বর্ণনা করে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বৈঠকটি ‘ক্রমবর্ধমান ঘৃণা প্রচারণা’-এর বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাবও পাস করেছে এবং ভারতে ক্রমবর্ধমান ঘৃণামূলক প্রচারণা, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি সরকারের চলমান গণহত্যা এবং ইসলামিক স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button