Hot

ভারতে জামাই আদরে পলাতক খুনিরা!

ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামে স্বাধীনতাকার্মী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) নেতাদের (ভারতের ভাষায় সন্ত্রাসী) বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ ছিল ভারতের। এ নিয়ে দেশটির উদ্বেগের সীমা পরিসীনার অন্ত নেই। ভারতের সেবাদাস শেখ হাসিনা দিল্লির প্রেসক্রিপশনে বন্দিবিনিময় চুক্তি করে উলফা নেতাদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। সেই ভারতে জামাইআদরে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক খুনি। ১৫ বছরের লুটের টাকায় তারা ভারত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দালালদের বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড় হয়ে তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন। এদের প্রায় সকলেই বাংলাদেশে কয়েকটি করে খুনের মামলায় অভিযুক্ত আসামী। কেউ দল বেঁধে বাসাভাড়া নিয়ে কেউ একাই হোটেলে অবস্থান করছেন; সকাল-বিকেল পার্কে ঘুরছেন। অথচ বন্ধুপ্রতীম দেশের দাবিদার হিন্দুত্বাবদী ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলাদেশের পলাতক খুনিদের গ্রেফতার করছে না। এমনো জানা গেছে, অনেক খুনি ভারতের বিজেপির তদারকিতে সেখানে নিরাপদে অবস্থান করছেন। অবশ্য কয়েকজন সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় বাংলাদেশের বিজিবি ও সাধারণ জনতার হাতে ধরা পড়েছেন। একজন নেতা সীমান্ত দিয়ে পালাতে গিয়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের খুনিরা ভারতে প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ দুই দেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আনুযায়ী সেটা করতে পারেন না। তাদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল। অন্যদিকে ভারতে খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে অপরাধীরা পালাচ্ছে তারপরও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা নীরব। অথচ ভারতের সরকারের চোখে কোনো অপরাধীকে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে দেখা গেলে ভারতের মন্ত্রীরা কঠোরভাবে প্রতিবাদ করে সেই অপরাধীকে ফেরত দিতে চাপ প্রয়োগ করতেন।

ছাত্র জনতার অভ্যূত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। অতপর আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি, বিতর্কিত নেতা, পুলিশের দলবাজ কর্মকর্তা সীমান্ত দিয়ে দালালদের টাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান পর্যায়ক্রমে। এদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও বেশির ভাগ খুনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ হাসিনা রেজিমে মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এমন কয়েকজন খুনিকে গত সাপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার একটি পার্কে ঘুরতে দেখা গেছে। আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছিলেন সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অপু উকিল ও এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম। এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি কয়েকটি খুনের মামলার আসামী সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমান সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান। কিছুদিন আগে তাকে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে দেখা গেছে। শামীম ওসমান দালালদের সহায়তায় রাতের আঁধারে বোরকা পরে ভারতে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে দিল্লি অবস্থান করছেন। দালালদের সহায়তায় গত ৮ সেপ্টেম্বর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া দালালদের সহায়তায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তারা বারাসাত এলাকায় চট্টগ্রামের জন্ম নেওয়া ভারতীয় নাগরিক জনৈক জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ভারতে চিকিৎসাধীন বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া সেখানে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তা ডিবি হারুন ওরফে ভাতের হোটেলের হারুন তথা হারুন অর রশিদ কোথায় লুকিয়েছেন কেউ জানেন না। তবে পুলিশের আরেক বিতর্কিত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। তিনি দালালদের এ জন্য মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমান টাকার বিনিময়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবৈধ পথে দালালদের মাধ্যমে টাকার বিনিমযে ভারত পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি অন্য দেশে চলে গেছেন বলে সুত্রের দাবি। কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা ১ সেপ্টেম্বর ভারতে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার সময় বাবা ও মেয়ে বোরকা পরিহিত ছিলেন। তারা রাতের আধারে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার চরানল সীমান্ত দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পৌঁছান। বর্তমানে বাবা-মেয়ে কলকাতায় এক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে রয়েছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ভারতের আসামে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন বাংলাদেশী পর্যটকরা। দালালদের মাধ্যমে ভারতে পালাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছেন বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় বিজিবি’র হাতে ধরা পড়েন। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরিসহ আরো কয়েকজন সাবেক এমপি ও বিতর্কিত নেতা সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়েন। ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। অবশ্য পান্নার পরিবার থেকে দাবি করা হয় মেঘালয়ের পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে একাধিকবার পালাতে গিয়ে গিয়ে ব্যর্থ হন। সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকও সিলেটের একটি সীমান্ত দিয়ে পালাতে চেস্টা করে ব্যর্থ হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা ভারতে পারিয়ে গেছেন। অনেকে পালানোর সময় ধরা পড়েছেন।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা, শেরপুর, লালমনিরন হাট, সিলেট, ময়মনসিংহ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, খুলনার সুন্দরবনসহ কয়েকটি জেলার সীমান্ত মানব পাচারের জন্য দালালচক্রের স্বগরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এবং বিভিন্ন খুনের মামলার আসামী নেতারা টাকার বিনিময়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন এ সব সীমান্ত দিয়ে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে কোলকাতার পার্কে ঘুরতে দেখার খবর চ্যানেল ২৪ এ প্রকাশের পর এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ডিআইটি প্লট সতীশ সরকার রোডের ৩১ নম্বর বাড়িতে দেখে ওই বাড়ি ঘেরাও করেন স্থানীয় জনতা। অতপর সেনাবাহিনীকে খবর দেয়া হয়। ভোররাত বাসাটি ঘেড়াও করে রাখলেও আসাদুজ্জামান খান কামালকে সেখানে গ্রেফতার করা যায়নি। স্থানীয় জনতা অভিযোগ আসাদুজ্জামান খান কামাল বাড়ির ঘেড়াওয়ের পর পাশের বাড়ির ছাড়ে উঠে পালিয়ে গেছেন। আসাদুজ্জামান খান কামালকে কোলকাতার পার্কে আড্ডা দেয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। তিনি কিভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে গেলেন? এ নিয়ে নেটিজেনরা নানান মন্তব্য করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন এবং লাইক সেয়ার দিচ্ছেন।

প্রশ্ন উঠেছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন কিভাবে? এ ব্যাপারে গতকাল সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহ আলম জানান, তার বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তথ্য নেই। তিনি বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমের খবরে দেখেছি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কলকাতার একটি পার্কে দেখা গেছে। তারা কীভাবে সেখানে গেছেন, সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তথ্য নেই। এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যাদের দেখা গেছে, তারা কেউ ইমিগ্রেশন ক্রস করেননি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইমিগ্রেশনে যেহেতু তথ্য নেই, অবশ্যই অবৈধ পথে গেছেন।’ একই বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস জানান, তাদের কাছেও এ ধরনের কোনও তথ্য নেই। তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈধভাবে গেছেন নাকি অবৈধভাবে গেছেন সে সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে কোনও তথ্য নেই। এখানে র‌্যাবের কোনও উদাসীনতা বা গাফিলতির বিষয় নেই।’

আগে ভারতের স্বাধীনতাকামী তথা ভারতের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অপরাধীদের বাংলাদেশ আশ্রয় দেয় অভিযোগ তুলে সব সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। যার কারণে ২০১৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ বন্দি বিনিময় চুক্তি করা হয়। ২০১৫ সালে এই চুক্তির আওতায় আসামের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াসহ কয়েকজনকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা, ১৬ বছরের শাসনামলে গুম-খুন, অর্থপাচার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যইব্যুনালে স্বৈরাচার পলাতক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুধু শেখ হাসিনাই নয়, ছাত্রজনতার আন্দোলনে খুনসহ ১৫ বছর অনেক খুন করেছেন এমন অসংখ্য খুনি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ভারত তাদের গ্রেফতার করছে না। রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করছে না। এমনকি ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে ‘খুনিদের আশ্রয় দেয়া’ নিয়ে সতর্ক করেনি। অথচ দু’দেশের বন্দী বিনিময় চুক্তিতে রয়েছে এক বছরের সাজা হতে পারে এমন মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেই ভারত বা বাংলাদেশকে পলাতক বন্দি হস্তান্তর করতে হবে। হত্যা, গণহত্যা, বোমা হামলা, গুলি করে হত্যা, সম্পত্তির ক্ষতি, গুম-অপহরণ বা জিম্মি করা এবং হত্যার প্ররোচনার মতো অপরাধের মামলায় পলাতক আসামিকে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ওই চুক্তিতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d