International

ভারতে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার ৮৬ নারী

ভারতে নারী নির্যাতন খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যেই ধর্ষণকাণ্ডে বিক্ষোভে দেশটি উত্তাল হয়ে উঠলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে ৩১ হাজার ৫১৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ হিসাবে দৈনিক গড়ে ৮৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নারীর প্রতি নৃশংসতা প্রতিরোধে দেশটির বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ধর্ষণের শিকারদের জন্য এবং যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা– তা বিশ্লেষণ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিকেল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ। এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ২৩ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় ২০১৩ সালে নারীদের নিরাপত্তায় তহবিল এবং সেখানে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমা হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। 
আর জি কর মেডিকেলের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, স্থানীয় থানায় এফআইআর নথিভুক্ত করতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছে পুলিশ। যদিও আইন অনুসারে ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে এফআইআর দায়ের করতে হয়। কারণ মামলা না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত শুরু করা যায় না। আদালতে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) জানায়, সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল ভুক্তভোগীকে দাহ করার পর।

যৌন হয়রানির শিকার নারী ও শিশুদের আইনি পরামর্শ দেওয়া প্রতিষ্ঠান মজলিসের পরিচালক অড্রে ডি’মেলো বলেন, পুলিশ এফআইআর নিতে গড়িমসি করেছে, এটা আমাদের সবসময়ই শুনতে হয়। গত ১০-১২ বছরে আড়াই হাজার ধর্ষণের মামলা নিয়ে মজলিস কাজ করেছে। এগুলোর ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এফআইআর বিলম্বিত হয়েছে। তিনি বলেন, এমনিতেই থানায় যেতে ভুক্তভোগীর অনেক সাহস ও সংকল্প লাগে। তবুও সেখানে তাদের অপমানিত হতে হয়, দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় এবং বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

এর জন্য পুলিশের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা পিএম নায়ার। তাঁর মতে, মাত্র ২০ শতাংশ পুলিশ কর্মকর্তা যৌন নিপীড়নের মামলা পরিচালনায় প্রশিক্ষিত। এটি একটি বিশাল শূন্যতা। 
নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর পুলিশ সদস্য ও রাষ্ট্রীয় আইনজীবীদের প্রশিক্ষণে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে মূল শহরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও বেশির ভাগ জায়গায় আগের মতোই রয়ে গেছে। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষ কর্মকর্তাদের জেন্ডার সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ নেওয়া যথেষ্ট নয়। পুলিশ বিভাগগুলোয় আরও নারী কর্মকর্তা প্রয়োজন। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, ভারতীয় পুলিশে নারীর অনুপাত মাত্র ১৫ শতাংশ। 

২০২২ সালে দেশটির আদালতে প্রায় ২ লাখ ধর্ষণ মামলা বিচারের অপেক্ষায় ছিল। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সেই বছরের ৯০ শতাংশেরও বেশি মামলা এখনও সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আদালতের এই মামলাজট ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি কঠিন করে তোলে। 

নতুন আইন করা সত্ত্বেও মানসিকতার পরিবর্তন না হলে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভারত সরকারের নিজস্ব থিংকট্যাঙ্ক নীতি আয়োগ এমন মতামত দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নারীদের সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভুক্তভোগীদের কথা শোনার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ বৃহত্তর সমাজের পরিবর্তন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্ভয়া মামলার এক আইনজীবীর মন্তব্যটি সত্য প্রমাণিত হতে থাকবে– ‘আমাদের সংস্কৃতিতে, একজন নারীর কোনো স্থান নেই।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d