International

ভারতে বিতর্ক নিয়ে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় দফার ভোট

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট হতে চলেছে তুমুল বিতর্ককে সঙ্গী করে। ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেবে জানিয়ে সেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই। কদিন ধরেই ওই বিতর্ক ঘিরে ভোটের রাজনীতি সরগরম। এই বিতর্ক দ্বিতীয় দফার ভোটে হিন্দুত্ববাদীদের বেশি করে ভোটদানে উৎসাহিত করে দেশব্যাপী ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটায় কি না, সেটাই হতে চলেছে প্রধান দ্রষ্টব্য।

প্রথম দফার ভোটের শতাংশের হার বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে। সেই চিন্তা দূর করাই ওই ‘অনাবশ্যক’ বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্য বলে বিরোধীদের অভিযোগ। শুক্রবার ভোট হবে ৮৯টি কেন্দ্রে, যেগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছিল ৫৬টি, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ২৪টি।

দ্বিতীয় দফার ভোট হবে কেরালার ২০ আসনে, যেখানে লড়াই প্রধানত বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের। বিজেপি দক্ষিণের এই রাজ্যে তৃতীয় শক্তি হিসেবে মাথাচাড়া দিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো আসন জিততে পারেনি। কংগ্রেস ও বামপন্থীরা রাজ্যে পরস্পরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সর্বভারতীয় স্তরে দুজনই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক ও বিজেপিবিরোধী। অতএব কেরালায় যারাই জিতুক, তা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পাওনার ঘরই ভারী করবে।

কেরালার লাগোয়া কর্ণাটকের ১৪ আসনেও ভোট হবে শুক্রবার। রাজ্যের মোট আসন ২৮। তার মধ্যে আগের লোকসভা ভোটে বিজেপি জিতেছিল ২৫টি। বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে কংগ্রেস ওই রাজ্য শাসন করছে গত বছর থেকে। মরিয়া বিজেপি হাত মিলিয়েছে রাজ্যের তৃতীয় শক্তি জেডিএসের সঙ্গে। আসন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে গেলে বিজেপির কাছে কর্ণাটকে ভালো ফল করা জরুরি। সেই লক্ষ্যমাত্রা প্রধানমন্ত্রীই ঠিক করে দিয়েছেন। বিজেপি ৩৭০, এনডিএ ৪০০ পার।

গত শুক্রবার প্রথম দফায় ভোট হয়েছিল রাজস্থানের ১২ আসনে। শুক্রবার বাকি ১৩ আসনে ভোট। এই রাজ্যেও বিজেপি গেলবার সব কটি আসন জিতেছিল। সেই রেকর্ড ধরে রাখা এবার তাদের চ্যালেঞ্জ। ভোট হবে মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের ৮টি করে আসনেও। সেই সঙ্গে ভোট মধ্যপ্রদেশের ৭, বিহার ও আসামের ৫টি করে আসনেও। ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের ৩টি করে আসনেও ভোট শুক্রবার। এর বাইরে মণিপুর, ত্রিপুরা ও জম্মু-কাশ্মীরের একটি করে আসনে ভোট গ্রহণ হবে। কেরালা, কর্ণাটক ও পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিলে বাকি সব রাজ্যেই বিজেপি হয় একা অথবা সঙ্গীদের নিয়ে ক্ষমতায়।

‘চার শ পার’ স্লোগান সার্থক করার অর্থ প্রতি রাজ্যে আগেরবারের চেয়েও বেশি আসন জেতা। সে জন্য প্রয়োজন হাওয়ার। প্রথম দফার ভোটে সেই হাওয়ার দেখা পাওয়া যায়নি। ভোটের হার ছিল তুলনায় কম। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতেও ভোট নিয়ে উৎসাহ–উদ্দীপনা চোখে পড়েনি। কোনো কোনো রাজ্যে ৮ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কম পড়েছে। বরং ভোটের লাইনে মুসলমানদের উপস্থিতি বেশি নজরে পড়েছিল। এসব লক্ষণ মোদি-বিরোধিতার নমুনা বলে বিরোধীরা প্রচার শুরু করা মাত্র প্রধানমন্ত্রী ‘কংগ্রেস-মুসলমান আঁতাত’ নিয়ে সরব হন। একের পর এক জনসভায় তিনি বলতে থাকেন, কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের অর্জিত সম্পত্তি দখল করে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, ‘দেশের সম্পদের ওপর প্রথম অধিকার মুসলমানদের। মোদি বলেন, ঘরে ঘরে মা–বোনদের সোনা–রুপা কংগ্রেস কেড়ে নেবে। দেবে তাদের, যারা শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি সন্তান উৎপাদন করে। যারা অনুপ্রবেশকারী। জনতার উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, তাঁরা এই কাজ হতে দেবেন কি? মা–বোনদের গলার মঙ্গলসূত্র কাড়তে দেবেন কি?’

প্রথমে রাজস্থান, তারপর উত্তর প্রদেশের জনসভায় মোদির এই ভাষণ বিতর্কের জন্ম দেয়। গণমাধ্যমে শুরু হয় চর্চা। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটালে ভোট মেশিনে তারই প্রতিফলন ঘটবে বলে বিজেপির বিশ্বাস। ২০০২ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি গুজরাটের প্রতিটি নির্বাচনে এই বিভাজনকেই হাতিয়ার করে চলেছে। ২০১৪ থেকে লোকসভা নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে সেই প্রতিফলন। ১০ বছর রাজত্বের পরও সরকারের ‘সাফল্যের খতিয়ান’ ছাপিয়ে নরেন্দ্র মোদি বড় করে তুলে ধরছেন কংগ্রেসের ‘মুসলমান প্রীতি’ ও ‘তুষ্টিকরণের রাজনীতি’।

বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করছে। তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। অভিযোগ, ধর্মের আধারে তিনি ভোট চাইছেন। কমিশন এখনো নিরুত্তর। মোদিও নির্বিকার। যত বিতর্ক তত মেরুকরণ। মোদিসহ বিজেপির সবাই তাই কংগ্রেসের ‘মুসলমান তোষণের রাজনীতি’ নিয়ে সরব। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, বেহাল অর্থনীতি, নির্বাচনী বন্ড ঘিরে দুর্নীতি, বিরোধী দমনে ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া যা এত দিনের প্রচারে উঠে এসেছিল তা চাপা পড়ে গেছে। দ্বিতীয় দফার ভোটের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এটাই।

শুক্রবারের ভোটের পর কেরালা, রাজস্থান ও ত্রিপুরার ভোট শেষ হয়ে যাবে। প্রথম দফায় তামিলনাড়ু (৩৯), উত্তরাখন্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মেঘালয় (২), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), পদুচেরী (১), সিকিম (১) ও লাক্ষা দ্বীপের (১) সব ভোট সাঙ্গ হয়েছিল।

কেরালার ওয়েনাড কেন্দ্র থেকে এবারও ভোটে লড়ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি রাজা ও বিজেপি কে সুন্দরম। ওই রাজ্যেরই তিরুবনন্তপুরমের প্রার্থী কংগ্রেসের শশী থারুর। তাঁর চ্যালেঞ্জার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। এখান থেকে গত তিনটি নির্বাচনেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন শশী থারুর। উত্তর প্রদেশের মথুরা থেকে এবারও বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী হেমা মালিনী। মীরাটে বিজেপির প্রার্থী অরুণ গোভিল, যিনি দূরদর্শনে প্রচারিত রামায়ণ ধারাবাহিকে রামের ভূমিকায় নেমেছিলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor