ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে

চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করায় ভারত থেকে আইফোনের সরবরাহ জোরদার করেছে অ্যাপল। ফলে ভারতে আইফোনের উৎপাদন বেড়েছে। গত তিন মাসে (মার্চ থেকে মে) ভারতে তৈরি হওয়া প্রায় সব আইফোন ফক্সকনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। খবর রয়টার্সের
ভারতে তৈরি আইফোন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস, চেক প্রজাতন্ত্র, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। তবে এখন প্রায় একচেটিয়াভাবে যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হচ্ছে। অ্যাপলের ফোন তৈরির ঠিকাদার ফক্সকন গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে ভারতে তৈরি ৩০২ কোটি ডলার মূল্যের আইফোন রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে ৯৭ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর ভারত থেকে আইফোন রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের কাস্টমস বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে রয়টার্স জানায়, চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ফক্সকন ভারতে তৈরি ৪৪০ কোটি ডলারের আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। গত বছর ১২ মাসে মোট ৩৭০ কোটি ডলারের আইফোন পাঠানো হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে অ্যাপল কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আর ফক্সকনের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
অবশ্য ভারতে আইফোনের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ট্রাম্প মে মাসে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। তিনি অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুককে বলেন, ‘আমরা চাই না আপনি ভারতে উৎপাদন করুন। ভারত নিজের খেয়াল রাখতে পারে, তারা ভালোই করছে। আমরা চাই আপনি এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) উৎপাদন করুন।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজেদের বিপক্ষে থাকা বাণিজ্যঘাটতি কমাতে এই পদেক্ষপ নেন তিনি। বিভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক বসান ৫৭টি দেশের ওপর। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। আর চীনের ওপর এই শুল্ক গিয়ে পৌঁছায় তিন অঙ্কের ঘরে। চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। যদিও উভয় দেশ বর্তমানে শুল্ক কমানোর আলোচনার মধ্যে রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার বলেন, চীনের ওপর ৫৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যদিও এই পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়নি।
চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে ফোনের দাম অনেক বেড়ে যাবে—মূলত এ কারণেই ভারত থেকে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে অ্যাপল। পাল্টা শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত পেয়ে গত মার্চ মাসে ভারত থেকে আইফোন ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৬ই মডেলের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ফোন চার্টার্ড বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতে আগে ৩০ ঘণ্টা সময় লাগত, সেটি ৬ ঘণ্টায় নামিয়ে আনতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে অ্যাপল। এই বিমানবন্দরই হলো আইফোন রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র।
অ্যাপল প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটিরও বেশি আইফোন বিক্রি করে, যার প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি হয় চীনে। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রচীর সিং বলেন, ‘চলতি বছর বিশ্বব্যাপী আইফোন সরবরাহের ২৫-৩০ শতাংশ ভারতে তৈরি হবে, যা ২০২৪ সালে ছিল ১৮ শতাংশ।
এদিকে ভারতের টাটা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টাটা ইলেকট্রনিকস অ্যাপলের একটি ছোট আইফোন সরবরাহ করে থাকে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে তাদের উৎপাদিত ৮৬ শতাংশ আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। তবে মে মাসের তথ্য পাওয়া যায়নি। গত বছরের জুলাইয়ে আইফোন রপ্তানি শুরু করে টাটা। গত বছর তাদের ৫২ শতাংশ আইফোন রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কারখানায় কেবলমাত্র আইফোনের চূড়ান্ত সংযোজন হয়। এটি কম মুনাফার ব্যবসা হলেও কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। চীনে প্রায় ৩ লাখ এবং ভারতে ৬০ হাজার কর্মী আইফোন সংযোজনের কাজ করছেন।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ হাজার ডলারের একটি আইফোন থেকে কোয়ালকম ও বোর্ডকমের মতো মার্কিন কোম্পানি ৮০ ডলার, তাইওয়ান চিপ উৎপাদনের জন্য ১৫০ ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া ওএলইডি ও মেমোরির জন্য ৯০ ডলার এবং জাপান ক্যামেরার জন্য ৮৫ ডলার আয় করে। জার্মানি, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া পায় ৪৫ ডলার। ভারত ও চীন মাত্র ৩০ ডলার করে পায়, যা মোট মূল্যের ৩ শতাংশেরও কম। তবে মূল্য সংযোজন কম হলেও বিষয়টি ভারতে কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।