Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

ভারত নিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান কী পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ

শেখ হাসিনা পালানোয় মানুষের মাথার উপর থেকে জগদ্দল পাথর সরে গেছে। ১৭ কোটি মানুষ নির্বিঘেœ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এখন প্রয়োজন জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। জনপ্রত্যাশা ও রাজনীতির গতি প্রকৃতিতে পরিষ্কার জামায়াত লাফালাফি করলেও ২০২৫ অথবা ২০২৬ সালে যে সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক বিএনপিই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল কী হবে? বিএনপি কী দেশের আমজনতার মনন-চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে রাজনীতি করবে নাকি পর্দার আড়ালে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে দিল্লির অনুকম্পা নিয়ে ক্ষমতায় যাবে? কারণ, চাণক্যনীতির মোদীগংরা ইতোমধ্যে বুঝে গেছে হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে আর বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফেরানো সম্ভব নয়। ৫ আগষ্টের পর ৫ মাস চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নতুন কৌশল নিয়েছে দিল্লি। তারা বুঝে গেছে আগামী নির্বাচনের পর বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। ভারত এখন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও দিল্লি চায় পর্দার আড়ালে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করতে, যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি ক্ষমতায় এলেও ভারতের স্বার্থগুলো অটুট থাকে। এ জন্য দিল্লির প্রত্যাশা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একাট্টা হয়ে বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার ছক আঁকছে। তারা বিএনপির ভিতরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অনুগত নেতাদের এ কাজে ব্যবহার করছে। বিএনপির ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরোধী দেশপ্রেমী সাচ্চা জাতীয়তাবাদী নেতাদের কোণঠাসা করে ব্যবসায়ী ও সুবিধাবাদী নেতাদের সামনে নিয়ে আসছে। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের যে চিন্তা-চেতনা বুঝতে পারেন; দলটির অনেক নেতার মধ্যে সেটা নেই। এখন বেগম খালেদা জিয়ার চিন্তা চেতনা উপেক্ষা করে ভারতের চাণক্যনীতির ফাঁদে বিএনপি পা দেবে নাকি ১৭ কোটি মানুষের চেতনা লালন করে আগামীর রাজনৈতিক কর্মকৌশল নিয়ে এগোবে?

হঠাৎ করে ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে। ভারতের সেনাবাহিনী প্রধানরা সাধারণত রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন না। অথচ বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর একটি রাজনৈতিক বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করা যাবে তখনই, যখন নির্বাচিত সরকার থাকবে’। প্রশ্ন হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কী ভারত কোনো সম্পর্ক রাখছে না? ৫ আগষ্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দিল্লি নানাপ্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করেছে। ঢাকার দিকে একের পর এক ষড়যন্ত্রের তীর ছুঁড়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। আন্তর্জাতিক পরিম-লে ড. ইউনূসের যে ‘ওজন’ ১০ জন নরেন্দ্র মোদীকে একত্রিত করলেও সে ‘ওজন’ সম্ভব নয়। চাণক্যনীতির হিন্দুত্ববাদী ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্করা বুঝে গেছেন প্লান-এ হাসিনাকে ঢাকার ক্ষমতায় ফেরানো এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে দাদাগিরি সম্ভব নয়। এমনকি প্লান-সি জামায়াত-আওয়ামী লীগ ও সুবিধাবাদী দলগুলোকে একত্রিত করে নির্বাচনে প্লান-বি বিএনপিকে টক্কর দেয়া অসম্ভব। নির্বাচন যখনই হোক বিএনপির যেহেতু ক্ষমতায় আসা ঠেকানো যাবে না; ফলে প্লান-বি কৌশল গ্রহণ করে। বিএনপি যাতে ক্ষমতায় গিয়ে ভারতের সঙ্গে হাসিনার করা গোলামীর গোপন চুক্তি বাতিল এবং দিল্লির স্বার্থ বিরোধী কিছু না করেন। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করে ভারত বিএনপির সঙ্গে পর্দার আড়ালে সমঝোতা করতে চাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রাতঃরাশের যে অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ সেটা তারই অংশ। নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া যেহেতু ঠেকানো যাচ্ছে না; সে জন্যই দিল্লি প্লান-বি কার্যকরের চক্করে হাঁটছে। এতোদিন বিএনপির বিরুদ্ধে নানাভাবে বিষোদগার করলেও এখন ভারতের সেনাপ্রধানকে দিয়ে দিল্লির নীতি নির্ধারকরা কথা বলাচ্ছে।

সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো দিল্লি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যৌথ প্রযোজনায় ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেন ঘটিয়ে ফখরুদ্দিন ও মঈন ইউ আহমেদের মাধ্যমে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো হয়। অতঃপর হাসিনা দিল্লির স্বার্থ রক্ষা করে তিনটি পাতানো নির্বাচন করে। হাসিনার মতো ‘দিল্লির পুতুল’ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার দিন নেই। এখন বিএনপি কী দেশের জনগণের প্রত্যাশা ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়? নাকি আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানির মতো দিল্লিকে দাসখত দিয়ে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে চায়? হিন্দুত্ববাদী ভারত ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণের অবস্থান পরিষ্কার। ভারতের আগ্রাসী নীতির কারণে প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক নেই। হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশ ছিল ব্যতিক্রম এবং দিল্লির পায়ের তলায়। সীমান্ত হত্যা, নদীর পানি প্রবাহসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। এ জন্য ভারতের পণ্য বর্জন ও ভারত বর্জন কর্মসূচি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের মানুষের চিন্তা চেতনা বেগম খালেদা জিয়া যে ভাবে ধারণ করেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন তা অন্য কোনো নেতার মধ্যে দেখা যায় না। এখানেই খালেদা জিয়া অনন্য। বেগম জিয়া বর্তমানে অসুস্থ। তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ। তিনি যে কোনো সিদ্ধান্ত নেন জনগণের প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু অসুস্থ হওয়ায় বর্তমান বিএনপির রাজনীতিতে তিনি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়ে আগাম বার্তা দেয়া কঠিন। কারণ, দীর্ঘদিন থেকে তিনি দলটির নীতি নির্ধারণী থেকে দূরে। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয়রা কোন পথে হাঁটবেন? তারা কি জনগণের প্রত্যাশা উপেক্ষা করে ক্ষমতায় আসার জন্য দিল্লির ফাঁদে পা দিবেন? নাকি ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের জনগণের সেন্টিমেন্ট ধারণ করে ভারতের পাঁতানো ফাঁদে পা না দিয়েই রাজনৈতিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন? ভারত নিয়ে মানুষ বিএনপির পরিষ্কার অবস্থান জানতে-বুঝতে চায়। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘দিল্লির ডিকটেশনে বাংলাদেশে আর কোনো সরকার হতে দেয়া হবে না’। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘যদি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতো তাহলে এই নির্বাচনের চিন্তা বিএনপি ২০২৯-৩০ সালের দিকে করতো। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল আশা ছেড়ে দিয়েছিল, এমনকি বিএনপিও তাদের জায়গা থেকে আশা ছেড়ে দিয়েছিল যে, তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা। ২০২৯-৩০ সালের আগে এই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে কিনা। সেই জায়গায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। যেই অভ্যুত্থানের এখনো এক বছর পার হয়নি। সেখানে যদি এটি বলা হয়, ২৫ এর মাঝামাঝিতে অর্থাৎ এক বছরের পূর্বেই তারা তাদের জায়গা থেকে নির্বাচনটি চায় তখন আমাদের মনে হয় তাদের চোখের সামনে শুধু ক্ষমতা’।

হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশকে ভারতের তাবেদার বানিয়ে রাখা এবং হাসিনা পালানোর পর ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশের জনগণ ভালভাবে নেয়নি। দিল্লির শাসকদের উপর ক্ষোভ থেকেই মানুষ ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে মানুষের এই অবস্থান খুবই ন্যায় সংগত ও প্রাসঙ্গিক। দিল্লি দীর্ঘ ১৮ বছর ‘সব আম এক ঝুড়িতে’ (হাসিনাকে সমর্থন) করলেও এখন সে অবস্থা নেই। হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আবার হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ায় তাঁর প্রতি ভারত বিক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ড. ইউনূসের ‘বাংলাদেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স সে প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না’ এবং ‘হাসিনা যতদিন ভারতে থাকবে ততদিন যেন তিনি কথা না বলেন’ বক্তব্য দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা ভালভাবে নেননি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মৌলবাদীদের উত্থান ইত্যাদি প্রচারণা চালিয়ে সুবিধা করতে পারেনি ভারত। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নত দেশগুলো ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি সন্দেহাতীত ভাবে খুশি। তারা মনে করেন আর যাই হোক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হবে না। আবার ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্রমান্বয়ে দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লে এক রাতে ১০ লাখ লোককে ওরা হত্যা করবে’। আওয়ামী লীগ নেতার সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বরং দুর্নীতি-লুটপাট-হত্যাকা- যারা করেছেন তাদের গ্রেফতার ছাড়া অন্যদের গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়াসহ শত শত আওয়ামী লীগের লুটেরা, হত্যাকারী বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে ভারত ড. ইউনূসের ক্যারিশমায় পেরে উঠতে পারছে না।

অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। ২০০৭ সাল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা নানা নির্যাতনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। দলটির প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একজন নেতার বিরুদ্ধে একশ থেকে ৫শ পর্যন্ত মামলা হয়েছে। জেল-জুলুম দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল নিয়তি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিভিন্ন সময় ভয় দেখিয়ে, লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার অফার দিয়েও বিএনপির নেতাকর্মীদের কিনতে পারেননি এবং বিএনপি ভাঙ্গতে পারেননি। দলটির বহু নেতা বছরের পর বছর দেশান্তরিত ছিলেন। শেকড় পর্যায়ের শিক্ষিত নেতারা বছরের পর বছর ঘরছাড়া হয়ে দূর-দূরান্তে সিএনজি, বাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। গ্রেফতার এড়াতে রাতে বনে-জঙ্গলে, নদীতে কলাগাছের ভেলায়, রাস্তার মোড়ে মশারি টানিয়ে ঘুমিয়েছেন। অনেকেই গুমের শিকার হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন কয়েক হাজার। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল বিএনপির মেরুদ- ভেঙ্গে ফেলা যায়নি। অন্যদিকে হাসিনা পালানোর পর আওয়ামী লীগের কোমড় ভেঙ্গে গেছে। দলটির কয়েকশ নেতা পালিয়েছেন এবং কয়েকশ নেতা কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ‘রাজনীতিতে নাই’ হয়ে যাওয়ায় বিএনপি জনসমর্থনের দিক দিয়ে দেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। কিন্তু দলটি এখনো দেশের আমজনতা, আলেম সমাজ, ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, পীর-মাশায়েখ, মুফতি-মুহাদ্দিসদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি। জামায়াত ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী দল ও আলেমদের ফুসলিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করছে। তারপরও বিএনপির নীতি নির্ধারকদের হুঁশ হচ্ছে না। এ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ উঠছে। বিএনপি অভিযুক্তদের কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও গণমাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে। অথচ বিএনপি এই সমস্যাগুলো সুরাহার বদলে সেমিনার সিম্পোজিয়াম নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দলটির ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া নেতাদের কোণঠাসা করে পর্দার আড়ালে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেন এমন নেতাদের নীতি নির্ধারণীতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চলছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সেকেন্ডম্যান অমিত শাহের বৈঠক হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই গুজব নিয়ে বিতর্ক চলছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের প্রাতঃরাশ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আমির খসরু মাহমুদের আমন্ত্রণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা সন্দেহের প্রশ্ন তুলছেন। তাদের বক্তব্য বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খানের মতো জাঁদরেল নেতাদের বদলে ব্যবসায়ী নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণের নেপথ্যে দিল্লির হাত থাকতে পারে। কারণ, ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে আসা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ২০ বছর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে বিএনপির শাসনামলে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নে চীনকে উপেক্ষা করে তাইওয়ানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার চুক্তি করেছিলেন। যার মাসুল বিএনপিকে দিতে হয়েছে। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির বিরুদ্ধে বিএনপি অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতার ভারতীয় কাপড় পুড়িয়ে দেয়ার পর তোলপাড় শুরু হলে দলের স্থানীয় কমিটির বৈঠক করে ‘ভারতীয় কাপড় পোড়ানো ওই নেতার ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত বিএনপির নয়’, বিবৃতি দিয়েছে। এছাড়াও ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের আমরা কে’ ‘ভারতকে ছোট করে দেয়ার উচিত হবে না’ ইত্যাদি বিএনপি নেতাদের বক্তব্য মানুষের মধ্যে ‘দিল্লি-বিএনপি’ সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন সত্যিই কী বিএনপি দিল্লির ফাঁদে পা দিয়েই ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে?

বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াত-আওয়ামী লীগ ও ইসলামী ধারার দলগুলোর সমন্বয় করার চেষ্টা করেছিল দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা। কিন্তু মাঠের অবস্থা দেখে বুঝে গেছে কোনো ভাবেই আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় আসা ঠেকানো যাবে না। বাধ্য হয়েই দিল্লি বিএনপির উপর সওয়ার হতে চাচ্ছে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিএনপিকেই। দীর্ঘ ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি জনগণের চিন্তা চেতনা ধারণ করে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবে; নাকি আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানির মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ফাঁদে পা রেখে ক্ষমতায় যাবে।

বিএনপির প্রতি দিল্লির চাওয়া ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান ইউ টিউব চ্যানেলে দীর্ঘ মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে ভারত। ড. ইউনূস সরকার সীমান্তে হত্যা হলেই প্রতিবাদ, হাসিনা ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এরমধ্যে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে জোরাজুরি করলে ভারত আরো অস্বস্তিতে পড়ে যাবে। তাই ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, সাবেক কূটনীতিক বীনা সিক্রি ও রাজনৈতিক থিঙ্কট্যাঙ্ক শ্রীরাধা দত্ত একযোগে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে একদিকে পুনর্বাসন অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত বিদায় চাচ্ছেন। ভারত বুঝে গেছে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে সে জন্য তারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে এবং বিএনপির ওপর ভর করছে। শুধু তাই নয়, ভারত এতোদিন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, শক্তিশালী, সমৃদ্ধ প্রগতিশীল সরকার দেখতে চেয়েছিল। এখন সেখানে গণতান্ত্রিক শব্দটি যোগ হয়েছে। তারা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচন চায়। তারা ধরে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় তারা স্বস্তি পাবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দিল্লির স্বার্থ দেখবে, এ জন্য দ্রুত নির্বাচন চায়। বিএনপির উচিত ভারতকে ছাড় দেয়া নয়, জনগণ চায় বিএনপি পর্দার আড়ালে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক নয়; ভারতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলুক। বিএনপি কোন পথে হাঁটবে সেটা দেখার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto