Bangladesh

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। সোমবার প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ–ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি দেওয়া, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প–সংক্রান্ত বিষয়।

ওমানের রাজধানী মাসকাটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স) ফাঁকে রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, সেগুলোর সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সাক্ষাতের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, আগামী এপ্রিল মাসে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ হতে পারে। এর পরদিন দ্য হিন্দুকে এই সাক্ষাৎকার দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

দ্য হিন্দু: সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে (ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ সম্পর্কে আমাদের বলুন…

তৌহিদ হোসেন: খোলাখুলি বললে, সম্পর্ক ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ (যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে)। আমি যেমনটি দেখেছি, শুরুটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। কারণ, ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, সে কারণে সম্পর্কে অনেক বৈরী মনোভাব এবং অস্বস্তি অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় ছয় মাসের মাথায় সেটা আসলেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের এমন একটি পরিবেশের প্রয়োজন, যেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায় অবশ্যই আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি।

দ্য হিন্দু: ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি মাত্রই ওয়াশিংটন সফর করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনি কি জয়শঙ্করের কাছে এসব উদ্বেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলে জিজ্ঞাসা করিনি। কারণ, এটা ভারতের ব্যাপার (তারা অন্য দেশের সঙ্গে কী আলোচনা করেছে)।

আমার মনে হয় না খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে বাণিজ্যের কথা বলা যায়। বাণিজ্যে অল্প সময়ের জন্য মন্দা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু আবার তা চাঙা হয়ে উঠেছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ, অন্তত বেসরকারি খাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আগ্রহ আছে। উভয় দেশেরই একে অপরের কাছে স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের তার প্রতি যত্ন নেওয়া দরকার।

দ্য হিন্দু: ভারত বারবার যেসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা নিয়ে। আপনি কি মনে করেন যে আপনার সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে? এবং ভারত কি তাতে একমত? কারণ, এটা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, আমাকে এটা স্পষ্ট করে বলতে দিন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম–অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে, দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া। দুর্ভাগ্যবশত, ৫ আগস্টের ঠিক পরে (২০২৪ সালে, যখন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছিলেন), ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়, যার বেশির ভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। আমি আপনাকে জাতিসংঘের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যগুলো পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না)। তারা আমাদের অনুরোধে এসেছিল, যাতে আমরা পরিস্থিতির ওপর একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সমীক্ষা পাই।

দ্য হিন্দু: আমি জাতিসংঘের কমিটির প্রতিবেদনটি পড়েছি, যাতে আগের হাসিনা সরকারের কিছু বাড়াবাড়ির কথা বলা হয়েছে। তবে এতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাব সম্পর্কেও কথা রয়েছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আপনার সরকার কি কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: অবশ্যই। এমনকি জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আগেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি মনে করি না এই বিষয়ে কথা বলা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য সঠিক। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে কমপক্ষে চারজন সদস্য আছেন, যাঁরা মানবাধিকারকর্মী এবং তাঁরা বহু বছর ধরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে আসছেন। তাঁরা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

দ্য হিন্দু: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে, ভারত কী করবে বলে আপনারা আসলে আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা ভারতকে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার সেটা না করছে, আমরা আশা করব, তারা অন্তত তাঁর ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, যাতে তিনি এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন, যেটা মানুষকে উসকে দেওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কারণ, বিষয়গুলো এখনো খুবই তরতাজা। ১৫ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় ছিলেন এবং মানুষ তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। তাই তাঁরা দেখতে চান যে তিনি যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না করেন।

দ্য হিন্দু: এরপরও শেখ হাসিনার বক্তৃতার কারণে একটি ‘মবকে’ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি তছনছ করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে কীভাবে আপনি যুক্তি দেবেন?

তৌহিদ হোসেন: একটি মব (বিশৃঙ্খল জনতা) কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

দ্য হিন্দু: আপনার সরকার এখন পর্যন্ত কেবল একটি কূটনৈতিক নোট (নোট ভারবাল) পাঠিয়েছে, যাতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কি প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?

তৌহিদ হোসেন: আমাদের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে এবং আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমি মনে করি, ভারত তাঁকে বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে পারে।

দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাকে বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আপনার কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের–এমএলএটি (পারস্পরিক আইনি সহায়তা) জন্য পর্যাপ্ত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কখন এই প্রক্রিয়া শুরু করার আশা করছে?

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কারণ, মামলাগুলো এখন আদালতে। আমরা তাদেরকে (তাড়াহুড়া করে) এটা করতে বাধ্য করতে পারি না। আমরা এ বিষয়েও অবগত যে তিনি ভারতীয় বিচারব্যবস্থারও আশ্রয় নিতে পারেন। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আমরা চাই যে তিনি ভারতে থাকাকালে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য দেবেন না।

দ্য হিন্দু: সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। জেলেদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া কিছু জেলের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাঁদের মারধর করা হয়েছে এবং তাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে?

তৌহিদ হোসেন: আমি তেমনটি মনে করি না। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে সীমান্ত। ২০২৪ সালে সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করা হয়েছে, যার অর্ধেক বিগত সরকারের আমলে। বিশ্বের আর কোথাও এটা হয়নি। আমি মনে করি, আপনি আমার সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, যেহেতু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, সে কারণে এটা ঘটছে। বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি অপরাধ ঘটে, আপনি তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করুন এবং আদালতে নিয়ে যান। কারাদণ্ড হোক বা আদালত যেকোনো রায় দিতে পারেন। কিন্তু আপনি তাঁকে হত্যা করতে পারেন না। সেখানে সীমান্তে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের সময়ে কী ঘটছে। এটা এখনো বন্ধ হয়নি। এটা এমন একটি বিষয়, আমি মনে করি, ভারত যদি চায় থামাতে পারে এবং এটা বন্ধ করা উচিত। অন্য বিষয়গুলো সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত।

দ্য হিন্দু: বাংলাদেশ ও ভারত কয়েক বছর আগে একটি সমুদ্র চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু ধারণা এমন যে, এখনও এক অন্য দেশের জেলেদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে…

তৌহিদ হোসেন: আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। তবে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে, আপনি জানেন জেলেরা মাছের দলকে অনুসরণ করেন। স্থলভাগে আপনার একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে, আপনি জানেন যে এটাই সীমা। কিন্তু সমুদ্রে, এটা এত সহজ নয়। প্রায়ই উভয় দেশের জেলেরা পরস্পরের সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রবেশ করে। আমাদের কিছু জেলে ভারতের হেফাজতে রয়েছে। আবার ভারতের কিছু জেলে আমাদের হেফাজতে রয়েছে। আমরা উভয় দেশই নির্দিষ্ট সময় পর তাদের মুক্ত করে দিই। খারাপ আচরণ করার বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত করতে বলেছি। যদি আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কেউ কেউ আসলেই জড়িত ছিলেন, অথবা তাঁরা যদি আইন ভঙ্গ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমরা তা আমলে নেব। কিন্তু এটা সাধারণত করা হয় না। আমি চার বছরেরও বেশি সময় কলকাতায় কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেছি। জেলে বিনিময় নিয়ে কাজ করেছি। তাঁদের সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। যদি কোনো ব্যতিক্রম হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখব।

দ্য হিন্দু: আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশ সরকার আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ পেতে আলোচনা করছে। আপনি কি নিশ্চিত করতে পারবেন যে, বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তিটি অব্যাহত রাখতে চায়?

তৌহিদ হোসেন : আমি মনে করি যে, আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি, একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, (এবং দ্বিতীয়ত) চুক্তি স্বাক্ষরের পরে আমরা আলোচনা করি। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি, এটা সঠিকভাবে করা হয়নি তাহলে আমরা সর্বদা পারস্পরিকভাবে এটা আবার খতিয়ে দেখার জন্য সম্মত হতে পারি। আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে এটা দেখব এবং এটাকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব। আমি কোনও টেকনিশিয়ান, টেকনিক্যাল ব্যক্তি নই। তাই আমি সঠিকভাবে বিশদ বলতে পারছি না। তবে অন্যান্য চুক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি নিয়ে আবারও সমঝোতা আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা কেনার প্রশ্নে। যেকোনো যৌক্তিক ব্যক্তিই বলবেন যে, বিশ্ববাজারে সম্ভাব্য সর্বোত্তম দামে এই প্রকল্পের জন্য কয়লা কেনা উচিত। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাই এই জায়গাগুলোতে আমরা সম্ভবত ভালো মন নিয়ে আদানির সঙ্গে আলোচনা করতে পারি এবং আমরা তা করতে চাই। আপাতত আমরা বিদ্যুৎ দিতে অনুরোধ করেছি, কারণ আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ভিত্তিতে আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই আমরা চাই, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং তারপর আমরা এর জন্য অর্থ প্রদান করব।

দ্য হিন্দু: আপনি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দুবার সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে এখনও সাক্ষাৎ হয়নি। আপনি কি এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাঁদের মধ্যে একটি বৈঠকের আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই দিনে কোনো একটি জায়গায় ছিলেন না, তাই তাদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ হয়নি। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, উভয়পক্ষেরই সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা এবং মুক্ত মনে ও খোলামেলাভাবে আলোচনা করার আগ্রহ আছে। এটা সহায়ক হয়। আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতিতে, যখন ‘শীর্ষ কর্তারা’ একসঙ্গে বসেন, তখন তাঁরা বছরের পর বছর ধরে আমাদের মতো লোকদের ওপর আলোচনার জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে, কেবল এক কথায় সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আমি মনে করি, এই অর্থে দুজনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়া ভালো হবে। এই সরকারের শুরুতে তাঁরা একবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। বিমসটেকে তাঁরা একই অনুষ্ঠানস্থলে থাকবেন। আমার জানা মতে, অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানেরাও থাকবেন। যদি তাঁরা সেখানে থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ এটা একটি ছোট গ্রুপ। উদাহরণস্বরূপ, সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) শীর্ষ সম্মেলনে, সাত দেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। তাই আমার মনে হয়, এরকম কিছু ঘটতে পারে।

দ্য হিন্দু: আপনি কি এ নিয়ে জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আমি এইমাত্র এটা উল্লেখ করলাম। বৈঠকের ব্যাপারে কোনো মতৈক্য হয়নি। এটা এখনো তেমন পর্যায়ে যায়নি। কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়ে গেলে এবং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, আমরা কয়েক দিন আগে এই বিষয়গুলি ঠিক করি। দেখা যাক কী হয়।

দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রনীতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে, বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকায়, আপনি কি মনে করেন ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কের সেই অবস্থায় ফিরে আসতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: ভালো বলেছেন। আমরা শুধু গত ১৫ বছর কেন দেখব? এমনকি বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ এ আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই দেশের রাজধানীতে যে সরকারই হোক, যে দলই ক্ষমতায় থাক না কেন, তা আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়। কারণ সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল। আমি বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই বুঝতে পারছে তাদের স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d