Bangladesh

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশের নির্বাচন, দিল্লিতে পিটার হাস

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে বার্ষিক ‘২+২ সংলাপ’ আজ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে। সংলাপ উপলক্ষে নয়াদিল্লি সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা।

ভারত সফরের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এক ব্রিফিংয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগের পাশাপাশি এই অঞ্চল এবং অবাধ, উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক গড়তে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা হবে।যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তার জন্য চীনকে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখে। তাই চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ ক্ষেত্রে মিত্র হিসেবে আছে কোয়াড সদস্য রাষ্ট্র ভারত। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ ধরনের বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করে থাকেন।

এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, চীনের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার মতো বিষয় আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা জানানোর পাশাপাশি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। মার্কিন প্রতিনিধিরা নয়াদিল্লি সফরকালে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আবারও তুলে ধরার পাশাপাশি ভারতের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।

নয়াদিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ‘২+২ সংলাপ’ নিয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে।সিএসআইএসের এশিয়া কর্মসূচির ইউএস-ইন্ডিয়া পলিসি স্টাডিজের সভাপতি রিচার্ড এম রোজো বলেন, এবারের সংলাপ শেষে হয়তো খুব বড় ও চমকপ্রদ ঘোষণা দেখা যাবে না। তবে যা ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, পারস্পরিক আস্থার বীজ বপন হচ্ছে। এর ফল ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে।

রিচার্ড এম রোজোর মতে, এ ধরনের বৈঠকে বৈশ্বিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হবে এটি নিশ্চিত।হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও অনেক কিছু ঘটছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে যদি আমরা সঠিকভাবে উদ্যোগ নিতে না পারি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হতে পারে।’

সিএসআইএসের বিশ্লেষক রোজো ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই নির্বাচন কিভাবে হবে সে বিষয়ে ভারত তত উদ্বিগ্ন নয়।

রিচার্ড এম রোজো মিয়ানমারের জান্তাকে মোকাবেলা, মালদ্বীপে চীনপন্থী সরকারের উত্থান, শ্রীলঙ্কায় অব্যাহত অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগগুলোর বিষয়ে এ অঞ্চলের বড় রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের অস্বস্তি আছে। মতপার্থক্য বা উদ্যোগের ভিন্নতা থাকলেও তা যেন সম্পর্ক নষ্ট না করে তা ২+২ সংলাপের মতো ফোরামে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়।

সিএসআইএসের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পছন্দ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্নটি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের অবস্থান বুঝতে পারছে না, নাকি এ ক্ষেত্রে ভারতের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না?

জবাবে রোজো বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমাদের (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের) মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত সচেতন ছিল না। এখন আমরা বাংলাদেশে কী ঘটছে তাতে অনেক গুরুত্ব দিই।’

রোজো বলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলমান চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন কখন কিভাবে দেখে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। এটি সম্ভবত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন স্পষ্ট। চীনপন্থী মালদ্বীপের নতুন সরকারের তুলনায় মিয়ানমারের জান্তাকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ধরন অবশ্যই অনেক আলাদা।’

বাংলাদেশ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিবাচক উদ্যোগগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থামিয়ে দিতে চায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও সিএসআইএসের ভিজিটিং ফেলো ক্যাথরিন বি হাড্ডা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই তা করবে না।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গত বুধবার রাতে ওয়াশিংটনে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও অংশীদারি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেছেন, গত জুনে ওয়াশিংটনে এবং সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ভারত-মার্কিন অংশীদারির জন্য ভবিষ্যৎ রূপরেখার কথা বলেছেন, তার অগ্রগতির ব্যাপারেও আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে। ভারত তার সীমান্তে চীনকে কিভাবে মোকাবেলা করছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাইবে।

লু বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং আগামী সপ্তাহে সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়েও ভারতের জানার আগ্রহ থাকতে পারে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দিল্লি সফর

বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার পূর্বনির্ধারিত সফরে নয়াদিল্লি গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন তার ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ, ১ নভেম্বর জাতীয় পার্টি এবং ২ নভেম্বর বিএনপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করেছে। এসব সাক্ষাতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে সব অংশীদারকে সহিংসতা ছাড়ার এবং অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টিতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor