International

ভারী বর্ষণের জেরে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে বন্যা-ভূমিধস, নিহত ৪৪

ভারী বর্ষণের জেরে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে কমপক্ষে ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক আফগানিস্তানেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩১ জন। এছাড়া দেশটিতে আরও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানে প্রবল বর্ষণের পর ভূমিধস এবং বৃষ্টি সম্পর্কিত নানা ঘটনায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহতও হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। সোমবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট প্রবল বন্যায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। আফগানিস্তানের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তালেবানের নিযুক্ত মুখপাত্র শফিউল্লাহ রহিমি রোববার বলেছেন, ভারী বৃষ্টির পর গত তিন দিনের বন্যায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া বন্যায় আরও ৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আল জাজিরা বলছে, মৌসুমী বৃষ্টির জেরে রাজধানী কাবুল, ময়দান ওয়ারদাক এবং গজনি প্রদেশে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। শফিউল্লাহ রহিমি বলেন, নিহতদের বেশিরভাগই পশ্চিম কাবুল ও ময়দান ওয়ারদাকের বাসিন্দা। বন্যায় প্রায় আড়াইশ গবাদিপশুও মারা গেছে বলে জানান রহিমি।
আফগানিস্তান আগে থেকে অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের মধ্যে ছিল এবং আকস্মিক এই বন্যা দেশটিতে ইতোমধ্যেই আরও দুর্দশার সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা বলেছিল, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি টানা তৃতীয় বছরের মতো খরার মুখোমুখি হয়েছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, কাবুলের পশ্চিমে অবস্থিত ময়দান ওয়ারদাক প্রদেশের জালরেজ জেলায় দ্রুত বাড়তে থাকা বন্যার পানিতে ঘুমের মধ্যে অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, এসময় প্রায় ৪০ জন লোক নিখোঁজ হন এবং শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় উদ্ধারকারী দলগুলো কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন মুজাহিদ। এছাড়া শোকাহত পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সাহায্য গোষ্ঠী এবং কাবুল প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বন্যায় শত শত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ মানুষেরা ধসে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বন্যার কারণে শত শত বর্গমাইল কৃষি জমি ভেসে গেছে এবং ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া কাবুল ও মধ্য বামিয়ান প্রদেশের মধ্যবর্তী মহাসড়কও বন্ধ হয়ে গেছে।

পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধস
পাকিস্তানে বৃষ্টি ও ভূমিধসে ১৩ জন মারা গেছেন। আল জাজিরা বলছে, পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুম অব্যাহত রয়েছে এবং দেশটির বিভিন্ন অংশে ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে ১৩ জন মারা গেছেন এবং সাতজন আহত হয়েছেন।

এর মধ্যে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি সংক্রান্ত ঘটনায় নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।
পুলিশ অফিসার রাজা মির্জা হাসানের মতে, গিলগিট বাল্টিস্তান অঞ্চলের স্কার্দু এলাকায় বিশাল ভূমিধসের ঘটনায় একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন। ভূমিধসের সময় তারা তাদের গাড়িতে ছিলেন।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র তৈমুর খান বলেছেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের কারণে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অন্তত ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ায় প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ চিত্রাল জেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
আল জাজিরা বলছে, গত ২৫ জুন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ১৬ জন নারী এবং ৪২ জন শিশু।
অন্যদিকে আফগানিস্তানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ২০২২ সালে বর্ষা মৌসুমে রেকর্ড বন্যায় সাময়িকভাবে আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল এবং সেসময় প্রায় ১৭০০ লোক মারা যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button