Hot

ভেজাল অ্যানেসথেসিয়া ওষুধের দায়িত্ব নিচ্ছেন না কেউ

যারা মারা গেছে তারাই দায়ী!

ভেজাল অ্যানেসথেসিয়া ওষুধের শিশুসহ বেশ কিছু সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হলেও এর প্রতিকারের দায়িত্ব নিচ্ছেনা কেউ। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকতাদের কথা বার্তা এমন যে আমরা জানতাম না এমন হবে। তাদের আচরনে এমন ভাব যে যারা মারা গেছে তারাই দায়ী। এর দায়িত্ব কার? 

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নকল ও ভেজাল অ্যানেসথেসিয়া ওষুধ দেশ ব্যাপী বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারী ক্লিনিকে এ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ও ওষুধ প্রযুক্তিবিদরা বলেন, নকল এ ভেজাল ওষুধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চ মুল্যে মুনাফা লোভে বাজার জাত করে আসছে। তারা জেনে শুনে রোগীকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীকে হত্যা করেছে। এ ধরনের ঘটনা হত্যাকান্ডের শামিল।

সাইন্সল্যাবটরি পরিক্ষাগারে প্রমানিত হয় যে, কয়েকজন শিশুর দেহে ব্যবহ্রত অ্যানেসথেসিয়া ওষুধটি ভেজাল ও নকল। এর ভেতরে কোন ধরনের হেলোথিন ছিলোনা। এই হেলোথিন প্রয়োগে পরপর তিন জন শিশু মারা যায়। এছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশ ব্যাপী অপারেশনের সময় রোগীর মৃত্যুর সংবাদ আসতে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। কিছু সংখক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাস থেকে একমাত্র উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান হেলোথিন তৈরি বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও তিন থেকে চারটি কোম্পানী এ ওষুধটি আমদানি করতো। এ কোম্পানীগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চোরাইপথে  ভেজাল এ  অ্যানেসথেসিয়া ওষুধ হেলোথিন নিয়ে আসে। হেলোথেন চোরাইপথে এনে উচ্চ মুল্যে বিক্রি করে। যে হেলোথেন মূল্য ছিলো এক হাজার  থেকে  বারশো টাকা। সেটি তারা চোরাইপথে এনে প্রতি বোতল ছয় থেকে সাত হাজার বিক্রি করে। অপর প্রাপ্ত তথ্য জানা যায়, সিন্ডিকেটের কাছে হেলোথেনের মজুদ ছিলো অনেক। প্রতিটি হেলোথেনের বোতলে সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে দুই থেকে তিনটি বোতল তৈরি করতো। এই ভেজাল ওষুধ তারা একবছর ধরে বাজার জাত করে কোটি কোটি আয় করেছে।  তারা শুধু টাকার লোভে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ রয়েছে। এই ভেজাল ওষুধ প্রয়োগে অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যুর ঘটনায় কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

গতকাল প্রকাশিত ‘ভেজাল অ্যানেসথেসিয়া ওষুধে তিন শিশুর মৃত্যু, অ্যানেসথেসিয়া ওষুধ পরিবর্তন করার নির্দেশ মন্ত্রণললয়ের’ শীর্ষক সংবাদে দেশ ব্যপী চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহলে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করা হয়। তাদের দাবি, জেনে শুনে অধিক মুনাফার লোভে ভেজাল  অ্যানেসথেসিয়া ওষুধে সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে জেনে শুনে ভেজার অ্যানেসথেসিয়া ওষুধ বিক্রি করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ে করা হোক। গত এক বছরে এই ভেজাল ওষুধ ব্যবহারে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতো রোগীর মৃত্যুতে এ নিয়ে চিকিত্সকরাও সন্দেহ পোষণ করছিলেন। চিকিত্সক, অ্যানেসথেসিয়ালজিস্ট, সার্জন, অপারেশন থিয়েটারসহ সব ধরনের ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকলেও কিভাবে এতো রোগীর মৃত্যু ঘটছে সেই বিষয়টি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই চিকিত্সকদেরও দাবি, এই ভেজাল ওষুধ যারা বিক্রি করেছেন সেই সিন্ডিকেটকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। স্বাস্থ্য প্রশাসনের দায়িত্বশীল বিভাগের যে সকল কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনহারা লোকজন।

গত বছরে বেশকিছু রোগী যখন মারা যায় তখন সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিয়ালজিস্টদের সভাপতি অধ্যাপক ডা: দেবব্রত বনিক বলেন, অপারেশনের পর কিছু কিছু রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। ফলে বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হয়। তাদের ধারণা যে অবৈধভাবে আমদানি ও ভেজাল মিশিয়ে হ্যালোথিন বাজারজাত করা হয়েছে। এরপরও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দেয়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button