Bangladesh

ভোটের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে: আল জাজিরার রিপোর্ট

ভোটাভুটির বিতর্কের মধ্যে পঞ্চম মেয়াদের জন্য জয় পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করা ও নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ফাঁকা থাকায় সরকারি হিসাবে শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘শেখ হাসিনা উইন্স ফিফথ টার্ম ইন বাংলাদেশ অ্যামিড টার্নআউট কন্ট্রোভার্সি’ শীর্ষক রিপোর্টে এসব কথা অনলাইন আল জাজিরায় লিখেছেন সাংবাদিক ফয়সাল মাহমুদ। তিনি আরও লিখেছেন, নভেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করায় এবং প্রধান বিরোধী দল (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করায় এই নির্বাচনের ফল কি হবে তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। 

বিস্ময়কর হলো এই নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে কে!
কোনো রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে মোট ৬৩ আসন নিশ্চিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ২২২ আসনে বিজয়ী হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন। এতে পার্লামেন্টে একটি বিরোধী দল পাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে মাত্র ১১টি আসন নিশ্চিত করতে পেরেছে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। স্বতন্ত্র সব বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে বিশ্বের সামনে প্রতিযোগিতামূলক দেখানোর জন্য তাদেরকে ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয় দলীয় নেতৃত্ব থেকে। বাংলাদেশের সুপরিচিত মানবাধিকারকর্মী ও ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম আল জাজিরাকে বলেছেন, এটা হলো উদ্ভট এক নির্বাচনের উদ্ভট ফল।

বিজ্ঞাপন ডামি নির্বাচনের ডামি প্রার্থীরা এখন ডামি পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দেবেন। 

এই নির্বাচন বর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তারা আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ। শেখ হাসিনার প্রশাসনের পরিবর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নির্দলীয় ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন দাবি করেছে বিএনপি। বিশ্লেষকরা বলেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে রোববার অনুষ্ঠিত একপক্ষীয় একটি নির্বাচন ছিল শুধুই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরানোর। পশ্চিমা সরকারগুলো শেখ হাসিনার সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়ার পর এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল একমাত্র সাসপেন্স। রোববার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ বন্ধের পর নির্বাচন কমিশন বলে, ভোটার উপস্থিতি ছিল শতকরা ৪০ ভাগ। 

কিন্তু এত বেশি উপস্থিতির হিসাব নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। 
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একজন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ ইউসুফ আল জাজিরাকে বলেন, দেশের বাকি অংশের কথা আমি জানি না। কিন্তু বহু বছরের মধ্যে ঢাকাকে এত ফাঁকা কখনো দেখিনি। মনে হচ্ছিল কোভিড মহামারির প্রথম দিনগুলোর মতো। দুপুরে আমি দুটি নির্বাচন কেন্দ্র অতিক্রম করেছি। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, যারা ছিলেন ব্যাজ পরা, তাদেরকে ছাড়া খুব কম মানুষই দেখেছি। নির্বাচন কমিশন শতকরা ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে যে দাবি করেছে, তা পুরো উদ্ভট ব্যাপার। 

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় বিভ্রান্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন কিছু বিশ্লেষক। 
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, শতকরা ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বিশেষ করে যখন মিডিয়াকে ব্রিফিংকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজে প্রথমে শতকরা ২৮ ভাগের কথা বলেন এবং তারপরই আকস্মিকভাবে তা বদলে শতকরা ৪০ ভাগের কথা বলেন। 

ওই ব্রিফিংয়ের বেশ কয়েক ঘন্টা পরেও নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের ড্যাশবোর্ডে দেখা যায় শতকরা ২৮ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এর একটি ছবি দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে তীব্র সমালোচনা হয়। বিষয়টি আল জাজিরা পরীক্ষা ও যাচাই করেছে। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার এক ঘন্টা আগের ঘোষণায় বলে যে, শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। শেষ এক ঘন্টায় রাজধানীর কমপক্ষে ১০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন আল জাজিরার সাংবাদিক। কিন্তু সেখানে কোনো ভোটার দেখতে পাননি। সুপরিচিত নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান শারমিন মুরশিদ আল জাজিরাকে বলেন, এক ঘন্টার মধ্যে শতকরা ২৭ ভাগ থেকে লাফিয়ে ৪০ ভাগে উঠে যাওয়া হাস্যকর ব্যাপার। এতে নির্বাচন কমিশনের সুনাম মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিতভাবে তারা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আরও হারিয়েছে, যা তারা শুরুতে করেনি। এটা কোনো নির্বাচন ছিল না। এটা ছিল এক দলের জন্য একই দলের ভোট চর্চা। 

অন্যদিকে শতকরা ২৮ ভাগ ভোটকেই বেশি বলে অভিহিত করছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, সারাদিন দেশজুড়ে বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা। বিরোধী দল আগেই ৪৮ ঘন্টার হরতাল আহ্বান করে। শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় এই হরতাল। মনে করা হয়, এর ফলে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে। নির্বাচনের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেসব ছবি ও ফুটেজ শেয়ার হয়েছে, তাতে আপনি দেখতে পাবেন ভোট কেন্দ্রের সামনে কুকুর দাঁড়িয়ে আছে, শুয়ে আছে অথবা পুলিশ এবং দু’চারজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে খেলা করছে রোদে। সেখানে কোনো ভোটার নেই। তিনি বলেন, জনগণ নির্বাচন বর্জনে তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং নির্বাচনকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। মঈন খান বলেন, যেহেতু নির্বাচনে কোন প্রার্থী বিজয়ী হবেন তা জানা, এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে যাননি ভোট দিতে। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, হরতাল ও আগুন হামলার মধ্য দিয়ে, বর্জনের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি। তাদের সেই ডাকে সাড়া মেলেনি। জনগণ ভোট দিয়েছে। নির্বাচনে পরিষ্কার নেতৃত্ব দেখতে পাওয়ার পর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ‘এই বিজয় আমাদের জণগন্ত্রের বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ব্যালটের মাধ্যমে বিএনপির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে উচিত জবাব দিয়েছে জনগণ।  কোনো রকম ভয়ভীতি অথবা ভোটে হস্তক্ষেপ ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। তিনি আরও বলেন, দেশের ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটি। 

গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু ও ভয়াবহ সহিংসতার কালিমা লেগেছিল। সেই তুলনায় রোববারের নির্বাচনে মাত্র একজন নিহত হয়েছেন। খুবই কম সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটি ছিল এই নির্বাচন। নির্বাচনে বিদেশি যেসব পর্যবেক্ষক ছিলেন তাদের অন্যতম সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশন অব প্যালেস্টাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিশাম কুহেইল। তিনি নির্বাচনের পর ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এমন একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য এ দেশের মানুষের গর্বিত হওয়া উচিত। তবে ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন তিনি। বলেছেন, তিনি শুধু নির্বাচন প্রক্রিয়ার টেকনিক্যালিটিজকে মূল্যায়ন করেছেন। অর্থাৎ ভোটারকে ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে কিনা। নিয়ম অনুযায়ী ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা। তিনি বলেন, এখানকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। সেটা করতে হলে এখানে আমাকে কমপক্ষে এক মাস থাকতে হবে। 

রাশিয়ান পর্যবেক্ষক অ্যান্দ্রে শুতোভ বলেন, ভোট গ্রহণ হয়েছে নিয়ম অনুযায়ী এবং শান্তিপূর্ণভাবে। এই নির্বাচন বৈধ। 
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণ হয়েছে ভোট এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কোনো ভোটার ছিলেন না। ফলে স্পষ্টতই এটা বৈধ নির্বাচন নয়। 
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই বিজয় বেআইনি ও অবৈধ। কারণ, ভোটের মাধ্যমে জনগণ বৈধতা দেয়নি।

Show More

7 Comments

  1. Hey there I am so thrilled I found your weblog, I really found you by mistake,
    while I was looking on Digg for something else, Nonetheless I am here now and
    would just like to say thank you for a marvelous post and a all round thrilling
    blog (I also love the theme/design), I don’t have time to read it all at the minute but
    I have saved it and also included your RSS feeds, so when I have time I will be back to read a great deal
    more, Please do keep up the great work.

    my web site; vpn special coupon code

  2. An outstanding share! I’ve just forwarded this onto a friend who had been doing
    a little research on this. And he actually ordered me lunch because I found
    it for him… lol. So allow me to reword this….
    Thanks for the meal!! But yeah, thanx for spending the time to
    discuss this issue here on your internet site.

    my web site; vpn coupon code ucecf

  3. An impressive share! I’ve just forwarded this onto a co-worker who had been doing a little research on this.

    And he actually ordered me dinner because I discovered it for him…
    lol. So let me reword this…. Thank YOU for the meal!!
    But yeah, thanks for spending some time to talk about this issue here on your web page.

    My web blog; nordvpn special coupon code

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button