ভোট উৎসবে বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ
- অগ্নিপরীক্ষায় ৯ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী
- নির্বাচনে পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে: সুপ্রিম কোর্ট
ভারতে আজ প্রথম দফার নির্বাচন। শুরু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের উৎসব। দেশের ১৭টি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ভোট হবে ১০২টি আসনে। সাত দফার মধ্যে প্রথম দফাতেই সবচেয়ে বেশি আসনে ভোট হচ্ছে। প্রথম দফায় অগ্নিপরীক্ষা হবে ৯ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীর। এদিকে ভোটের আগের দিনে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ব্যথিত বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে ভোটে পবিত্রতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রথম দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনে ভোটগ্রহণ হবে। পাশাপাশি প্রথম দফায় অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার ৬০টি এবং সিকিমের ৩২টি আসনেও ভোটগ্রহণ হবে। ভারতের ৫৪৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৫৪৩টি লোকসভা আসনে (উল্লেখ্য, দুটি আসনের কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতে) ৪৪ দিন ধরে সাত দফায় ভারতে ভোটগ্রহণ হবে। ৪ জুন ফলাফল ঘোষণা। ৫৫ লাখেরও বেশি ইলেকট্রনিং ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে এবার ভোট দেবেন ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভোটার। প্রধান লড়াই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের।
প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ভোট হবে অরুণাচল প্রদেশ (২), আসাম (৫), বিহার (৪), ছত্তিশগড় (১), মহারাষ্ট্র (৫), মণিপুর (১), মেঘালয় (২), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), রাজস্থান (১২), সিকিম (১), তামিলনাড়ু (৩৯), ত্রিপুরা (১), উত্তর প্রদেশ (৮), মধ্যপ্রদেশ (৫), উত্তরাখণ্ড (৫), আন্দামান ও নিকোবর (১) জম্মু-কাশ্মীর (১) লাক্ষাদ্বীপ (১) পুদুচেরির (১) মতো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। নির্বাচন কমিশন মণিপুরের ভোট নিয়ে চিন্তায় আছে। সেখানে সহিংসতা হয় কি না সেটাই উদ্বেগের বিষয়। কারণ রাজ্যটিতে বেশ কিছুদিন ধরে সহিংসতা অব্যাহত আছে।
অগ্নিপরীক্ষা যাদের
প্রথম দফার নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের নাগপুর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ভারতের সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী নিতীন গড়করি। অরুণাচল ওয়েস্ট আসন থেকে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজেজু। আসামের ডিব্রুগড় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ভারতের জাহাজ ও জলপথ পরিবহন মন্ত্রী, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগর আসন থেকে লড়ছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জিব বালিয়া। জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ভারতের আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। রাজস্থানের আলওয়ারে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। আইনমন্ত্রী অর্জুন লাল মেঘওয়াল লড়ছেন রাজস্থানেরই বিকানির কেন্দ্র থেকে। তামিলনাডুর নিলগিড়ি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ভারতের মৎস্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগান। ত্রিপুরা ওয়েস্ট কেন্দ্র থেকে লড়ছেন ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি, কংগ্রেস ৫১টি, ডিএমকে ২৩, তৃণমূল কংগ্রেস ২২, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২, সমাজবাদী পার্টি পাঁচটি, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, সিপিএম তিনটি, টিডিপি দুটি আসনে। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস দুটি আসনে। বামফ্রন্ট ছিল শূন্য।
এবার প্রাক নির্বাচনি সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ২১টি আসন জিততে পারে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি ২০ এবং জাতীয় কংগ্রেস একটি। পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোট দেবেন ৭ কোটি ৬৯ লাখ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৯৮১ জন। নারী ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৯৬০ জন। রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ১ হাজার ৮৩৭ জন। লোকসভায় যে সাত দফায় ভোট হবে তার মধ্যে প্রথম দফায় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিজেপির জন্য। ২০১৯ সালে ১০২টি আসনের মধ্যে মোট ৪৫টিতে জিতেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। বিজেপির একার স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৯ শতাংশ। ৪০০ আসনের টার্গেট পূরণ করতে হলে এই পর্বেই স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে বেশি বাড়াতে হবে গেরুয়া শিবিরকে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ঘোষণা করেছিলেন প্রথম দফার নির্বাচনের সময় তিনি কোচবিহারে যাবেন। ভারতের নির্বাচন কমিশন তার যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভারতে নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটের কাজে যুক্তরা ছাড়া ঐ এলাকার ভোটার নন এমন কেউ সেখানে থাকতে পারবেন না। সেই নিয়ম অনুসারেই রাজ্যপালকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ব্যথিত কমিশন
লোকসভা নির্বাচন শুরুর আগেই ইভিএম-ভিভিপ্যাট মামলার শুনানি শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। গতকাল এই মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয় বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চে। শুনানির সময়েই বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘এটা নির্বাচন। তাই সেখানে পবিত্রতা বজায় থাকা উচিত। কারোর যেন এটা মনে না হয়, যেরকম হওয়া উচিত ছিল সেরকমটা হয়নি।’ কিন্তু শীর্ষ আদালতের এই মন্তব্য মোটেও ভালোভাবে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। তাদের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, বেঞ্চের মন্তব্যে তারা ব্যথিত।
উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগেই বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগও উঠেছে। কেরালার কাসারগোড় কেন্দ্র ইভিএমের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখার জন্য মক পোল করা হয়। সেই সময়েই ধরা পড়ে বিজেপির পক্ষে অস্বাভাবিক বেশি ভোট পড়েছে। সেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখতেও কমিশনকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।