Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

ভ্রমণ ভিসার আড়ালে মানবপাচার

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বমুবিল ছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাফফর আহমদ। কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যেতে না পারলেও ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে তিনি কর্মী হওয়ার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন। তাই দালালের কথায় চার লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু কাজ না পেয়ে উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়ে আরো এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ১০ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

কালের কণ্ঠকে মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘আমার এলাকা থেকে আগে এক লোক মালয়েশিয়া গিয়েছিল। সে আমাকে নানা ধরনের প্রলোভন দেখায়। তার প্রলোভনে পড়ে রাজি হয়ে যাই। সে আমাকে জানায়, ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কর্মী ভিসা করে দেবে।

এরপর সে আমার সঙ্গে চার লাখ ৮০ হাজার টাকায় চুক্তি করে। কথা ছিল, অর্ধেক টাকা প্রথমে দেব, বাকি অর্ধেক দেব কাজ শেষ হওয়ার পর। কিন্তু বিমানবন্দরে যেতেই আমার কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে নেওয়া হয়।’

মোজাফফর কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় নিয়ে কাজ তো দেয়ইনি, উল্টো নির্যাতন শুরু করে।

নির্যাতন করে আর বলে বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসতে। এভাবে আরো এক লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়। পরে আমাকে পুলিশে দেয়। প্রায় তিন মাস জেল খাটার পর আমাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আমি পুরো নিঃস্ব হয়ে গেছি।

এখন কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি আর দেনা শোধ করছি।’

শুধু মোজাফফর আহমদই নন, মালয়েশিয়ায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে ভ্রমণ ভিসা দিয়ে দেশটিতে রীতিমতো মানবপাচার শুরু করেছে একটি চক্র। আর এতে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ রকম মানবপাচারের শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি কর্মী। লাখ লাখ টাকা খরচ করে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়ে সব হারিয়ে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে তাঁদের।

জানা যায়, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও বাজারটি পুনরায় চালু করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। এর ফলে অবৈধভাবেই দেশটিতে একটি চক্রের মাধ্যমে বহু কর্মীকে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তবে কতসংখ্যক কর্মী এখন পর্যন্ত এই মানবপাচারের শিকার হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা এবং বিমানবন্দর থেকে পাঠানোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,   গত সাত মাসে চার শতাধিক কর্মী ভ্রমণ ভিসার নামে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মধ্যে কাউকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, আবার কাউকে বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার করে সাজা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করা সম্ভব না হলে কর্মীদের এভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করতে হলে সিন্ডিকেটের শর্ত মেনেই চালু করতে হবে। এর ফলে বাজারটি সহজেই চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অবৈধভাবে মানবপাচারের শিকার হয়ে কর্মী যাওয়া বন্ধে মন্ত্রণালয় থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে আগামী ১১ আগস্ট শ্রমবাজার ইস্যুসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, এই বৈঠকের পরই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও উন্মুক্ত হতে পারে। তবে শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত করতে গত ১৫ মে মালয়েশিয়া সফর করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এরপর ২১ ও ২২ মে ঢাকায় দুই দেশের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই দুই বৈঠকের পরও সিন্ডিকেটসহ আরো কয়েকটি শর্তের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হয়নি।

প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে আগের সরকার চুক্তি করে রেখেছে যে তোমরা রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দেবে, আমরা নির্ধারণ করব। এটি দুই পক্ষের আনুষ্ঠানিক চুক্তি, যেটিকে আমরা সিন্ডিকেট বলি। এখন সিন্ডিকেট না করতে হলে চুক্তি পরিবর্তন করতে হবে। সেটি আমাদের মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদি মালয়েশিয়া সরকার চুক্তি পরিবর্তন না করে তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে, তাদের কথা অনুযায়ী ২৫, ৫০ কিংবা ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো। আরেকটি পথ হচ্ছে, মালয়েশিয়া সরকারকে বলে দেওয়া যে আমরা কোনো কর্মী পাঠাব না।’

বৈধভাবে শ্রমবাজার চালু না হলে এই ঘটনাগুলো চলমান থাকবে বলে জানান অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী। কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো আমাদের বাজার বন্ধ থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি বৈধভাবে শ্রমবাজার চালু না হয় তাহলে অবৈধভাবে এই ঘটনাগুলো চলতে থাকবে। আমাদের সরকার কিন্তু সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে বাজারটা খুলতে। কিন্তু মালয়েশিয়া বাজার দুজন ব্যক্তি আর্টিফিশিয়ালি বন্ধ করে রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত সব রাজনৈতিক দলের ভেতর একটি ঐকমত্য আনার চেষ্টা করা যে এই বাজার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই মিলে একত্রে চেষ্টা করি বাজারটি খোলার। এ রকম একটি জায়গায় যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’

৭ মাসে চার শতাধিক বাংলাদেশি ফেরত

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর ভ্রমণ ভিসার আড়ালে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যাচ্ছেন। এর ফলে বিভিন্ন সময় কর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন এবং দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ও ফেরত আসা কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সাত মাসে ৪২৬ জন বাংলাদেশি কর্মী ফেরত এসেছেন।

এই ৪২৬ জন বাংলাদেশি কর্মীর তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরের বিমানবন্দর থেকেই ফেরত এসেছেন ৩৫৬ জন। আর এই সাত মাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে সাজা ভোগ করে ফেরত এসেছেন ৭০ জন বাংলাদেশি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ৭০ জনের কেউ কেউ জানুয়ারির আগেই মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছেন। বাজার বন্ধ থাকলেও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মীদের ভ্রমণ ভিসার নাম করে মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছে।

বিমানবন্দর থেকেই ৩৫৬ বাংলাদেশি ফেরত

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর ভ্রমণ ভিসার আড়ালে যাতে কেউ অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ সতর্ক অবস্থান তৈরি করে। তাদের এই সর্তক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার করতে পারলেও বেশির ভাগ কর্মীকে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর পার করতে পারেনি। এর ফলে সাত মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া ৩৫৬ বাংলাদেশি বিমানবন্দর থেকেই ফেরত এসেছেন।

এই ৩৫৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি ছদ্মবেশে মালয়েশিয়ায় প্রবেশকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন ১২ জন। এ সময় দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, আটক ১২ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী সেজে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তাঁরা একটি আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শন করেন। যাচাই করে দেখা যায় আমন্ত্রণপত্রটি ভুয়া। এরপর তাঁদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

২৬ জানুয়ারির পর ২১ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করায় ৬৮ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করে মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (একেপিএস)। তাদের মধ্যে ৪৫ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। সে সময় একেপিএসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিরা পর্যটক হিসেবে প্রবেশের দাবি করলেও তাঁরা ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে এগোননি। বরং বিমানবন্দরের খাবারের দোকান ও অন্যান্য জায়গায় ঘোরাফেরা করছিলেন এবং বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। পরে তাঁদের কেএলআইএ ইমিগ্রেশন অপারেশন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে নোটিশ টু লিভ (এনটিএল) দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

২১ ফেব্রুয়ারির পর একই ঘটনা ঘটে গত ১৪ জুলাই। ওই দিন ৯৬ বাংলাদেশিকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এ মালয়েশিয়ান বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি তাঁদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়নি।

এ বিষয়ে বর্ডার কন্ট্রোল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সন্দেহজনক আবাসনের বুকিং, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়া এবং মালয়েশিয়ায় থাকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তাঁদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই ২০৩ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। অভিবাসন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত তহবিল না থাকা, আবাসনের বুকিং না থাকা এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট থাকাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাজা ভোগ করে ফেরত এসেছেন ৭০ জন বাংলাদেশি

ভ্রমণ ভিসায় অবৈধভাবে গিয়ে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর পার হলেও দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযানে তিন শতাধিক বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে ৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এই ৭০ জনকে সাজা শেষেই মালয়েশিয়া সরকার দেশে পাঠিয়ে দেয়।

এই ৭০ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মেয়াদের সাজা শেষে ২৮ জনকে দেশে ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া। দেশটির জোহর রাজ্যের অভিবাসন বিভাগ এক বিবৃতিতে বলে, মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন এবং অভিবাসন প্রবিধান ১৯৬৩-এর পাশাপাশি অন্যান্য এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি আইনের অধীনে বিভিন্ন অপরাধে সাজা পান এসব প্রবাসী। সাজা শেষে তাঁদের নিজ নিজ দেশের দূতাবাস থেকে নাগরিকত্ব যাচাই সম্পন্ন হওয়ার পর আকাশপথে নিজ খরচে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তাঁরা যেন ফের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারেন সে জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

২৩ ফেব্রুয়ারির পর ৬ মার্চ ১১ জন, ১২ মার্চ ৯ জন ও ২১ এপ্রিল ২২ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে দেশে ফেরত আসেন। তাঁদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto