Science & Tech

মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে পুরনো সমুদ্রের সম্ভাব্য উপকূলরেখার সন্ধান

১৯৭০-এর দশকে নাসার ম্যারিনার ৯ অরবিটারের প্রথম ছবিগুলো মঙ্গলের পানির উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। এরপর থেকে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, লাল গ্রহটিতে অতীতে প্রচুর পানি ছিল।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চীনা ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, চীনের ঝুরং রোভার মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে প্রাচীন সমুদ্রের উপকূলরেখার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। গবেষণাটি পিএনএএস (PNAS) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলের ইউটোপিয়া প্ল্যানিশিয়া অঞ্চলে উপকূলীয় পলির স্তর পাওয়া গেছে। যদি এই গবেষণা সত্য হয়, তবে এটি মঙ্গলের পানির ইতিহাস ও সম্ভাব্য বাসযোগ্য পরিবেশ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

খবর অনুসারে, ১৯৭০-এর দশকে নাসার ম্যারিনার ৯ অরবিটারের পাঠানো ছবিতে মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠে পানির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিরূপ দেখা যায়। এতে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, অতীতে সেখানে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গলের কিছু উল্কাপিণ্ডে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগের পানির অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে। এমনকি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তৈরি হওয়া ক্ষুদ্র ক্রেটারগুলোতে বরফের উপস্থিতিও শনাক্ত হয়েছে।

বর্তমানে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলো—মঙ্গলে কখন পানি এসেছিল, কতদিন ছিল এবং কত পরিমাণ ছিল? বিশেষ করে, মঙ্গলে কোনো সময় মহাসাগর ছিল কি না, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি চীনের ঝুরং রোভার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে একসময়ে একটি মহাসাগর ছিল। চীন ও মার্কিন বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, ঝুরং রোভার যে অঞ্চলে অবতরণ করেছিল, সেখানে প্রাচীন উপকূলরেখার অস্তিত্ব রয়েছে।

গবেষণাটি চীনের গুয়াংঝো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জিয়ানহুই লি-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। চীনের মহাকাশ সংস্থার পাঠানো ঝুরং রোভার ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মঙ্গলে সক্রিয় ছিল এবং এটি ইউটোপিয়া প্ল্যানিশিয়া নামে পরিচিত বিশাল এক অববাহিকায় অনুসন্ধান চালায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝুরং সেখানে একসময় সমুদ্রের উপকূল ছিল বলে ধারণা করছেন।

নাসার পারসিভেরেন্স রোভার বর্তমানে মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে, যা একসময়ের হ্রদের অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। অন্যদিকে, ঝুরং রোভার অনুসন্ধান করেছে এমন এক অঞ্চলে, যা একসময় একটি বিশাল মহাসাগরের অংশ হতে পারে।

মঙ্গলের অতীত জলবায়ু বুঝতে ভূতাত্ত্বিক গঠন বিশ্লেষণ করা জরুরি। ঝুরং রোভার ভূগর্ভস্থ শিলা বিশ্লেষণে গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার (GPR) ব্যবহার করেছে, যা মাটির ১০০ মিটার গভীর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই অঞ্চলে স্তরীভূত পলি রয়েছে, যা পৃথিবীর উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যায়।

মঙ্গলের ইতিহাসকে সাধারণত নোয়াকিয়ান যুগ (৪.১-৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে) এবং হেসপেরিয়ান যুগ (৩.৭-৩ বিলিয়ন বছর আগে)-এ ভাগ করা হয়। নোয়াকিয়ান যুগে প্রচুর পানি ছিল, যার প্রমাণ নদী উপত্যকার গঠন ও খনিজ মানচিত্রে পাওয়া যায়। কিন্তু হেসপেরিয়ান যুগে পানি কমতে শুরু করে এবং গবেষকদের ধারণা ছিল, এই সময়ের পর মঙ্গল ক্রমশ শুষ্ক হয়ে ওঠে।

তবে, ঝুরং রোভারের এই নতুন গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে হেসপেরিয়ান যুগের শেষ পর্যন্ত মঙ্গলে স্থায়ী জলীয় পরিবেশ ছিল। যদি এটি সত্য হয়, তবে এর মানে হলো মঙ্গলের উপকূলীয় অঞ্চল অনেক দিন ধরে বাসযোগ্য ছিল, যা অতীতের গবেষণার তুলনায় দীর্ঘ সময় নির্দেশ করে।

এই গবেষণা মঙ্গলে মহাসাগরের অস্তিত্বের বিষয়ে শক্তিশালী প্রমাণ দিলেও, বিজ্ঞানীরা এখনো দ্বিধায় রয়েছেন। পৃথিবীতে সাগরের ভূতাত্ত্বিক নিদর্শন স্পষ্ট এবং এগুলো মিলিয়ন বছর ধরে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলে সমুদ্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে আরও পর্যবেক্ষণ দরকার।

এই গবেষণা যদি সত্য হয়, তবে এটি মঙ্গলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে এবং সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীদের আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto