মঙ্গোলিয়া সফরে গিয়ে গ্রেপ্তার হতে পারেন পুতিন
আগামী সপ্তাহেই মঙ্গোলিয়া সফর করবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে মঙ্গোলিয়া সফরে গেলে দেশটি পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে দায়বদ্ধ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার মঙ্গোলিয়ায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পুতিনের। এমন হলে ২০২৩ সালের মার্চে পুতিনকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেওয়ার পর এটাই হবে আইসিসি সদস্যভুক্ত কোনো রাষ্ট্রে তার প্রথম সফর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। এই অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে—২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে অসংখ্য শিশুকে বেআইনিভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ায় দায় রয়েছে পুতিনের।
এ অবস্থায় পুতিনের সম্ভাব্য সফরকে সামনে রেখে তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মঙ্গোলিয়াকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ইউক্রেন। তবে পুতিন দপ্তর ক্রেমলিন বলছে, এই সফর নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মঙ্গোলিয়ায় আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।’ পুতিনের সফরের সমস্ত দিক নিয়ে রাশিয়া খুব সাবধানতা অবলম্বন করছে বলেও জানান পেসকভ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যভুক্ত একটি রাষ্ট্রে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা না করে পুতিন কীভাবে সফর করবেন—বিষয়টি জানতে এই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল বিবিসি। এ বিষয়ে আদালতের মুখপাত্র ডক্টর ফাদি আল-আবদুল্লাহ বিবিসিকে জানান, আদালত তাঁর সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে মঙ্গোলিয়াসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য আইসিসি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের মতো মঙ্গোলিয়ারও সহযোগিতা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০২৩ সালে পুতিনকে গ্রেপ্তারে যে আদেশ জারি হয়েছিল, সেটিও এই বাধ্যবাধকতার মধ্যে রয়েছে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইউক্রেন থেকে শিশুদের রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুতিন ছাড়াও রাশিয়ার শিশুদের অধিকার কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের পরোয়ানাও জারি করেছে। তবে ইতিপূর্বে মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং গ্রেপ্তারের পরোয়ানাটিকে ‘আক্রোশের কারণে’ বলে চিহ্নিত করেছে।
আইসিসি মুখপাত্র ডক্টর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলো কোনো বিষয়ে অসহযোগিতা করলে আদালতের বিচারকেরা তা খতিয়ে দেখবেন এবং সেই রাষ্ট্রের পরিষদকে অবহিত করবেন।
আন্তর্জাতিক বিচারকার্য পরিচালনা করলেও আইসিসির নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। ফলে কোনো অভিযুক্তকে সরাসরি গ্রেপ্তারের উপায় নেই এই আদালতের। এ ক্ষেত্রে শুধু সদস্য দেশগুলোই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের কাছে তুলে দিতে পারে।
পুতিনের সফরের বিষয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আশা করে—পুতিন যে একজন যুদ্ধাপরাধী এই সত্যটি সম্পর্কে মঙ্গোলিয়া সচেতন। তাই সফরে গেলে পুতিনকে গ্রেপ্তার করে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন।
এর আগে গত বছর গ্রেপ্তারের পরোয়ানা থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্ধারিত একটি শীর্ষ সম্মেলনের সফর বাতিল করেছিলেন পুতিন।