Bangladesh

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে, বন্ধ ৩০০ কারখানা

শ্রমিকদের বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ‘কাজ না করলে মজুরি নেই’ পন্থা নিতে চান মালিকপক্ষ 

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে মিরপুর, আশুলিয়া, চন্দ্রা, গাজীপুর ও অন্যান্য এলাকার অন্তত ৩০০টি পোশাক তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে।    

শ্রমিক-সংক্রান্ত বিষয় তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট বিজিএমইএ’র কর্মকর্তাদের মতে, গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর, চন্দ্রা, কাশিমপুর, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর, শফীপুর ও মিরপুরের প্রায় ২৫০টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। বুধবার তার সাথে আরও ৫০–৬০টি কারখানা যোগ দিয়েছে।   

তবে বন্ধ হওয়া কারখানার সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শ্রমিক বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় কারখানা মালিকেরা ‘কাজ ছাড়া বেতন নেই’ এমন পন্থা অবলম্বন করছেন, তবে এই কৌশলে হিতেবিপরীত হবে এমন আশঙ্কা করছেন মালিকপক্ষের কেউ কেউ।  

বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন আমদানি-রপ্তানির সমস্যা, বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতোন বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, তারমধ্যেই ঘটছে শ্রমিকদের আন্দোলন। 

রপ্তানিকারকরা সতর্কবার্তা দিচ্ছেন যে, দ্রুততর সময়ের মধ্যে এর সমাধান করা নাহলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক খাত, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানিতে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রাখে এই খাত। 

আশুলিয়ায় তিনটি পোশাক কারখানা রয়েছে রেজা গ্রুপের। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এ কে এম শহীদ রেজা বলেন, ‘বুধবার (১ নভেম্বর) আশুলিয়ার সব কারখানার কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে, শ্রমিকরা তাদের টাইম কার্ড ব্যবহার করে প্রবেশ করে, আবার মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেছে।’ 

বুধবার আশুলিয়ায় সরেজমিন ঘরে, সেখানকার প্রায় সকল পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার ঘটনাই দেখেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদক। টানা তিনদিন ধরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ জোরালো আকার ধারণ করায় ইতোমধ্যে কিছু কারখানার মালিকপক্ষ অনির্দিষ্টকাল সাধারণ ছুটি ঘোষণাও করেছেন।

বুধবার ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেডের কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের সাধারণ ছুটির নোটিশ ঝুলতে দেখা যায়। বুধবারে সাধারণ ছুটির ঘোষণার নোটিশ আরও কয়েকটি কারখানার সামনেও দেখা যায়। এসব নোটিশে উল্লেখ ছিল, বৃহস্পতিবারে কারখানা খুলবে।  

নাবা নিট কম্পোজিট লিমিটেডের একজন শ্রমিক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত ৩০ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন করছি। রবি ও সোমবারে কারখানা খোলা ছিল, কিন্তু আজ (বুধবার) কাজে যোগ দিতে আসলে, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের চলে যেতে বলে।’   

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে বলেই মঞ্জুরুলকে জানান কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরমধ্যেই বেশকিছু কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। 

বুধবার আশুলিয়ার শ্রমিক আন্দোলনের সার্বিক চিত্র কিছুটা শান্তই ছিল। এরমধ্যে জামগরা, নিশ্চিন্তপুর ও আশেপাশের এলাকায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ ও বিচ্ছিন্নভাবে মিছিলের চেষ্টা করলে শিল্পাঞ্চল পুলিশ দ্রুতই শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পাঞ্চল পুলিশের একজন কর্মকর্তা টিবিএস’কে বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদে আজকের (বুধবার) পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।’

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘মঙ্গলবারে যেমনটা ছিল, বুধবার তার চেয়ে অনেকটা শান্ত ছিল আশুলিয়ার পরিস্থিতি। কিছু কারখানা খোলা থাকলেও সড়কের দুইপাশের বেশিরভাগ কারখানা বন্ধই ছিল।’  

কাজ না করলে মজুরি নয়: মালিকপক্ষ

এদিকে পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেছেন, তারা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা অনুসরণ করবেন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘কোন প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা বা বিভাগে বে-আইনী ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করিয়া দিতে পারিবেন, এবং এরূপ বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকগণ কোন মজুরী পাইবেন না।’ 

বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন – বিজিএমইএ বুধবার রাজধানীর উত্তরায় তাদের সদরদপ্তরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সাধারণ সভা করে। সেখানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ (কাজ না করলে মজুরি নয়) এ নিয়ম অনুসরণের ঘোষণা দেন। 

চলমান শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান ও মতামত তুলে ধরতে সভায় যোগ দেন প্রায় ২০০ কারখানা মালিক।  

সভায় হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত এলাকা-ভিত্তিক হওয়া উচিত। যেসব এলাকায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুর হবে, সেখানে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। 
এসময় অনেক উদ্যোক্তা এ কে আজাদের সাথে একমত পোষণ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিনও। তিনি বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে যে কয়দিন কারখানা বন্ধ থাকবে, শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতি কার্যকর করা যেতে পারে। এবিষয়ে সবার সম্মতি দরকার। 

বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন: মালিকপক্ষ

সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমরা শতাধিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছে, তাদের কেউই ভাঙচুরের সাথে জড়িত নয়। তাহলে এসব করছে কারা!’

তিনি বলেন, ‘চলমান ভাঙচুর, সহিংসতার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। আড়ালে থেকে যারা বিশৃঙ্খলায় উসকানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা ইতোমধ্যেই এনএসআই, ডিজিএফআই-সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছি।’

সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পোশাক কারখানা ও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অনুরোধও করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

শিল্পাঞ্চলক পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, ‘শ্রমিকেরা যেসব দাবিদাওয়া তুলেছে, সেগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। শ্রমিকরা যদি আন্দোলন করতে রাস্তায় নামে, তাহলে তাদের কারখানায় ফেরানো খুব কঠিন হবে।’

বহিরাগতরা সুবিধা নিচ্ছে, দাবি পোশাকশিল্প নেতাদের

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘পাঁচ বছর পরপর মজুরি বোর্ডের সভা বসে। কিন্তু নির্বাচনের আগে হওয়ায় দেশি-বিদেশি একটি চক্র এই সময়ের সুযোগ নিতে চাইছে; অনেক ষড়যন্ত্র ভর করেছে এই খাতে।’

তিনি বলেন, চলমান সংকটের কারণে অনেক পোশাকমালিক হয়তো তাদের ব্যবসা হারাবেন। অনেকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়বেন। 

সভায় বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি অভিযোগ করেন, বহিরাগতরাই মারামারি ও কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়ার সাথে জড়িত।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ইতিমধ্যে কিছু ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তর করেছি।’ এসব ভিডিও’তে তার কারখানার ভেতরে কর্মীদের ওপর হামলার প্রমাণ আছে। কিন্তু এখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

তিনি জানান, আশুলিয়ায় হা–মীমের চারটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অস্থির সময়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন।

সভায় যোগ দেওয়া বিজিএমইএ নেতা ও কারখানা মালিকেরা সরকারের প্রতি কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d