Trending

মধ্যবিত্তরা ঋণ নিলে নিজেরা নিঃস্ব হয়, উচ্চবিত্তরা নিলে ব্যাংকই নিঃস্ব হয়- এটা কী সত্যি!

এই শতকের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে রুবেল নামে একটি ছেলে সিগারেট বিক্রি করতেন। রীতিমতো একটা ছোটখাটো আলমারি সাইজের লোহার বাক্সে সিগারেটের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা।

খুবই চটপটে ছেলেটার সঙ্গে সেখানে আসা সবারই খাতির ছিল। রুবেলের কল্যাণে একটা মজার ব্যাপার দেখতাম। অনেক টাকা দেনা করে ফেলা এবং দেনা না করে নগদ পয়সার ক্রেতাদের সঙ্গে বিপরীত এবং আপাত অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ। যার ঋণ নেই তার ব্যাপারে রুবেল থাকত খুবই কঠোর। সঙ্গে সঙ্গেই পয়সা চাই। এক পয়সা বাকি হইব না ভাই! কই, টাকা দিলেন না! সেকি হুংকার রুবেলের! মনে হতো শিশুতোষ চেহারার এক জাঁদরেল পুলিশ। জমিদারের কর তুলতে আসা ভাবলেশহীন কর্মচারী। অন্যদিকে, যদি কোনোমতে একবার ঋণের রাস্তা চালু করে ঠেলেঠুলে তিন অংকে নেওয়া যেত, তাহলেই, মার দিয়া কেল্লা!

ভাই, আরও দুইডা সিগ্রেট নিবেন? কোমল স্বরে রুবেল এসে মিনতি করত। আরে নাহ, একটু আগেই তো একটা টানলাম রে, এখন না! আরে খান খান ভাই, সিগ্রেট খাইলে ব্রেন খোলে। লন, এই যে দুইটা রাইখা গেলাম, আপনার বিল বাকি ২৬৭ টাকা।

আচ্ছা যা এইখান থেকে, ভ্যান ভ্যান করিস না। টাকা পরে নিস। ‘ব্রেন খুলে যাওয়া’ খেলাপি ঋণকারীর তখন উল্টো ভাব। আয়েশ করে একটা ধোঁয়া টেনে, বলে, আরও জমুক, ৫০০ হলে একবারে নিস।

তখনকার দিনে ৫০০ টাকার নোটই সর্বোচ্চ। বেচারা রুবেল, তদ্দিনে পাওনাদারের ফাঁদে পড়ে গেছে। তখন একমাত্র স্বপ্ন, সেই বড় নোট। শোনা যায়, বহু লোক ঋণের পরিমাণ অনেকগুলো ৫০০ হলেও দেয় নাই। শেষ রুবেলকে দেখছিলাম ব্যবসাপাতি গুটায়ে মধুর ক্যান্টিনেই বয়ের কাজ করে।

রুবেলের গল্পটা মনে হইলো ফেসবুকে কদ্দিন ধরে চলে আসা একটা ভাইরাল পোস্ট দেখে। ‘এ দেশে মধ্যবিত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে নিজেরাই নিঃস্ব হয়ে যায়, উচ্চবিত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকই নিঃস্ব হয়ে যায়।’

কথাটা তিতা সত্য। রুবেলের ওই ছোট ব্যবসা হোক আর ব্যাংক। ধনীদের আদর তোয়াজ করে মাথায় রাখলেও, মধ্যবিত্ত হওয়ার বড় জ্বালা। রুবেলের বেলায় কড়া কথায় পাওনা আদায় হলেও, ব্যাংকের বেলায় সেই অবস্থাটা একেবারে ত্রাহি মধুসূদন।

দুই চার লাখ টাকা ঋণ নিতে গেলে ব্যাংক রুবেলের মতোই খুব কড়া। কল্পনা করতেই শিহরণ লাগে! 
দেখা গেল, নাম, ধাম, চৌদ্দগুষ্টির ঠিকুজি এগুলো তো আছেই, এনালিস্টরা চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বলে বসতে পারেন, আপনি দুপুরে কি খাইলেন? জ্বি স্যার ভাত। ওহ নো! আপনি ভাত খান! নিশ্চয়ই ভাত ঘুমও দেন। আমাদের অ্যানালাইসিস বলছে ভেতো বাঙালি মানেই অলস। আপনাদের মতো লোকদের তো লোন শোধ দেওয়া পসিবল হবে না। আই কান্ট রেকমেন্ড ফর ইয়োর লোন।

আপনি রীতিমতো অসহায় চোখে তখন বললেন, কিন্তু স্যার, আমি তো দুই লাখ টাকা ঋণের জন্য আমার ভিটাবাড়ি কোলেটারেল হিসেবে রাখতেসি। বাজারে এর দাম ২০ লাখের কম হবে না, আর আমার ব্যবসা ছোট হইলেও সলিড। 
ওয়েল, আপনার কেসটা বেশ রিস্কি। আপনি দেখেন অন্তত অতিরিক্ত সচিব লেভেলের কাউকে গ্যারান্টার হিসেবে রাখতে পারেন কিনা। আমরা তো ব্যাড লোনের রিস্ক নিতে পারি না। আমাদের এইখানে আইনকানুন বেশ কড়া, বেশ গম্ভীর গলায় বললেন অফিসারটি।

এরপর নানা দৌড়াদৌড়ি করে, জুতার তলা আর আয়ু ক্ষয় করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, লতায় পাতায় আত্মীয় এক সচিবের সই নিয়ে আসলেন গ্যারান্টার হিসেবে। এইসব করে এক মাস পর গেলেন, আবারও লোনের আবেদন নিয়ে। এইবারের দৃশ্যপট আবেদন গ্রহীতা এক ছোট অফিসারের সঙ্গে।

ককর্শ স্বরের সেই তরুণ বললেন, আপনার স্থায়ী ঠিকানায় লেখা বড় বাজার, কিন্তু ইংরেজিতে লিখছেন Barabazar. দুইটার উচ্চারণ তো এক হইলো না। ওইভাবেই লিখে ম্যাডাম, সরকারি খাতাতেই আছে। হুম, খুবই সন্দেহজনক, ব্যাংকটার বারোটা বাজাবেন আপনারা, বলে বিরক্তির ভাব ধরলেন তরুণী। এরপর ঋণের জন্য আপনার ৩৩২ পৃষ্ঠার ফরমটি ঠিকঠাক পূরণ হইলো কি-না এই নিয়ে ঘণ্টাখানেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। লাঞ্চের সুদীর্ঘ বিরতির শেষে আবারও ঘণ্টা দেড়েক চেক করার পর আপনার ফরমটা ফিরায়ে দিয়ে ১৪ জায়গায় ভুল আছে দেখাইলেন।

আজকে অফিস আওয়ার শেষ, এই সব নতুন করে ফিলাপ করে আবার আগামীকাল আসেন। ঝাঁজের সঙ্গে বললেন ছোট অফিসার।

ক্লান্ত, শ্রান্ত শরীরে ব্যাংক থেকে বেরোতে গিয়ে দেখেন ম্যানেজার সাহেব তার রুমে এক ভদ্রলোকের সামনে হাত কচলাচ্ছেন, মিহি গলায় স্যার স্যার করছেন। আপনি চিনতে পারলেন, ভদ্রলোক আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী। এখন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর প্রাইভেট সেক্রেটারি। দারুণ রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা ওই ব্যবসায়ীর নাকি শয়ে শয়ে কোটি টাকা ঋণ ব্যাংকে। কানাডা, সিঙ্গাপুরে বিপুল সম্পদ করে ফেলেছেন বলে সংবাদপত্রে প্রায়ই দেখা যায়।

আর আপনার মনে পড়ে রুবেলের গল্প, ফেসবুকের ভাইরাল হওয়া স্ট্যাটাসটি। 

‘এ দেশে মধ্যবিত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে নিজেরাই নিঃস্ব হয়ে যায়, উচ্চবিত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকই নিঃস্ব হয়ে যায়।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d