USA

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

দাবানলে ১৫০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্ষতি, ছাড়াতে পারে ট্রিলিয়ন : পুড়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি : নিহত বেড়ে ১০ : দাবানল নেভাতে নামানো হলো কারাবন্দিদের

লস অ্যাঞ্জেলেসের ঐতিহাসিক দাবানলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং প্রায় ১০ হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে। মরুভূমির বাতাস আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল সকালে চতুর্থ দিনের মতো পাঁচটি পৃথক আগুন জ্বলছে। বেসরকারি পূর্বাভাসকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাকুওয়েদার ক্ষয়ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির অনুমান করেছে ১৩৫ বিলিয়ন থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে, যা পুনরুদ্ধার কঠিন এবং বাড়ির মালিকদের বীমা খরচ বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা গত রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন এই এলাকাগুলোতে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে’।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। দুই দিনে ঝোড়ো বাতাসের কারণে প্রচ- বেগে দাবানল ছড়িয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের পশ্চিমাঞ্চলে স্যান্টা মনিকা ও মালিবুর মধ্যবর্তী প্যালিসেইডস এলাকা এবং পূর্বে পাসাডেনার কাছে ইটন এলাকার দাবানলকে ইতোমধ্যে শহরটির ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। দাবানলে ইতিমধ্যে সেখানকার প্রায় ৩১ হাজার একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির মেডিকেল পরীক্ষক বলেছেন, দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ১০ জনে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার রয়টার্সের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। দাবানলে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আরও ২ লাখ মানুষকে সতর্কতার আওতায় রাখা হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা গত রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন এই এলাকাগুলোতে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে’। ‘আমি ভালো খবর আশা করছি না এবং আমরা মৃতের এ সংখ্যা আশা করছি না, আটকা পড়াদের ভয়াবহ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে তিনি বলেন। দাবানলের কারণে শুধু ইটন এলাকাতেই চার-পাঁচ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের বরাতে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যালিসেইডসের দাবানলে আরো ৫ হাজার ৩০০ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারন বলেছেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসার পর মানুষের দেহাবশেষ শনাক্তকারী দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাবে। বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা একিউওয়েদারের হিসাব অনুসারে, দাবানলে ১৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন হবে এবং বাড়ির মালিকদের বীমা খরচ অত্যধিক বেড়ে যাবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে কেনেথ ও ইটন এলাকায় দাবানলে ১০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে অন্য ভবন ও স্থাপনা। এপির খবরে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানা গেছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কয়েকটি জায়গায় দাবানল ছড়িয়েছে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে জ্বলন্ত পাহাড়ের ওপর উড়োজাহাজ থেকে পানি ফেলতে শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিবিসির খবরে জানা যায়, এ পর্যন্ত কেনেথ, হার্স্ট, লিডিয়া, ইটন ও প্যালিসাইডস অঞ্চলে দাবানলের আগুন ছড়িয়েছে।
মাত্র কয়েক ব্লক দূরে অনেক এ-লিস্ট সেলিব্রিটিদের আবাসস্থল অভিজাত প্যাসিফিক প্যালিসেডস পাড়ায় কয়েক ডজন ব্লক ভেঙে ফেলা হয়েছে। অনেকের কাছে, কেবল ঘর এবং তাদের চিমনির কাঠামোই রয়ে গেছে।
প্যারিস হিলটন, অ্যান্থনি হপকিন্স, টিনা নোলস, জন গুডম্যান, ক্যান্ডি স্পেলিং, মিলো ভেন্টিমিগ্লিয়া এবং মাইলস টেলার হলেন তাদের মধ্যে যাদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মিচেলের মেয়ে হাজিম হোয়াইট দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ৬৭ বছর বয়সী অ্যান্থনি মিচেল এবং তার ছেলে জাস্টিন, যার সেরিব্রাল পলসি আছে, তারা অ্যাম্বুলেন্স আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু বের হতে পারেননি। শারি শ কেটিএলএকে বলেন, তিনি মঙ্গলবার রাতে তার ৬৬ বছর বয়সী ভাই ভিক্টর শ-কে বের করে আনার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি আগুনের সাথে লড়াই করতে চেয়েছিলেন। কর্মীরা তার লাশ খুঁজে পান, হাতে একটি বাগানের পাইপ।

দাবানল নেভাতে নামানো হলো কারাবন্দিদের : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে ভয়াবহ দাবানল নেভানোর কাজে নামানো হয়েছে কয়েকশ কারাবন্দিকে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজের জন্য দৈনিক ভাতা হিসেবে মাত্র ৫ দশমিক ৮০ ডলার থেকে ১০ দশমিক ২৪ ডলার করে পান তারা। জরুরি অবস্থা চলাকালে প্রতি এক ঘণ্টার জন্য আলাদা করে এক ডলার দেওয়া হয় তাদের।

লস অ্যাঞ্জেলসে বর্তমানে পাঁচটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। দাবানলে পুড়ছে সেখানকার ১১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার অবকাঠামো পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন জানিয়েছে, পেশাদার ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে অন্তত ৩৯৫ জন কারাবন্দি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।

যদিও এটি স্বেচ্ছাশ্রম। তবে অনেকে মনে করেন বিষয়টি পুরোনো দাস প্রথারই একটি অংশ। যেখানে কারাবন্দিদের দিয়ে খুবই অল্প অর্থের বিনিময়ে ঝুকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল নেভানোর কাজে যে বাহিনী আছে, তার প্রায় ৩০ শতাংশই কারাবন্দিদের নিয়ে গঠিত। কিন্তু বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের ফায়ার ফাইটার হিসেবে আর চাকরি দেওয়া হয় না।
সাধারণ ফায়ার ফাইটাররা আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করলেও; কারাবন্দি ফায়ার ফাইটাররা মূলত হাত দিয়ে কাজ করে। আগুন যেন না ছড়ায় সেজন্য গাছ ও লতাপাতাগুলো সরায় তারা। এতে করে সাধারণ ফায়ার ফাইটারদের তুলনায় তারা চার গুণ বেশি আহত হয়।

কারাবন্দি এসব ফায়ার ফাইটাররা থাকেন মূলত ফায়ার ক্যাম্পে। তাদের অনেকে বলছেন, কম বেতন এবং ঝুকি থাকা সত্ত্বেও ক্যালিফোর্নিয়ার মূল কারাগারে থাকার চেয়ে ফায়ার ক্যাম্পে বন্দি থাকতে চান। কারণ কারাগারে বিভিন্ন অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবে এক বন্দি বলেছেন, “আমাদের আগুন নেভানোর কাজ করতে পাঠানো অন্যায়। আমরা কারাগারেই থাকতে চাই।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor