মন্ত্রীদের প্রথম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ বাজার নিয়ন্ত্রণ
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/01/16e25e63d2f9ed39ead68e90ef4db153-65a57b1016ee1-780x470.webp)
বাজারে গেলে যে কারোরই মাথায় হাত পড়বে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের দিনই চালের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। এদিকে গত রবিবার নতুন মন্ত্রীরা দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালাবেন তারা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবও জানালেন, মঙ্গলবার থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ‘অ্যাকশন’-এ যাবে সরকার। সুতরাং মন্ত্রীদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট যে বাজার নিয়ন্ত্রণ সেটি এখন পরিষ্কারই বলা যায়।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা পর্যন্ত। বাজারে সব সবজির দাম বেড়েছে। মাছ-মাংসের দামও বাড়তি। কিন্তু প্রশাসনের দৃশ্যমান অ্যাকশন নেই এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজ (গতকাল সোমবার) মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখেন, কালকে থেকে কী হয়। কাল থেকে নিশ্চয়ই কার্যক্রম দেখবেন, আমি আশা করছি।
এর আগে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় সেগুলোর সরবরাহ পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে কাজ করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
সচিব জানান, আগামী রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য ও রোজাসংশ্লিষ্ট পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারসাজি যারা করে তাদের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সামনে আমাদের রমজান মাস। আমাদের খাদ্যপণ্য আমদানি করে সীমিত কয়েকটি গ্রুপ। তারাও এখানে সব সময় একটা খেলা খেলতে চায়। সেই ক্ষেত্রে এখন থেকে আমাদের একটু প্রস্তুতি নিতে হবে। একই সঙ্গে রমজান মাসে যে পণ্যগুলো আমাদের বেশি লাগে সেগুলোর মূল্য যেন ঠিক থাকে এবং সেগুলো যেন বাজারে পাওয়া যায় সরবরাহ যেন ঠিক থাকে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
গতকাল ঢাকা চেম্বারের নেতারা শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে, আগামী রমজানে বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেছেন, রমজানকে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এটি ধর্মীয় বা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।
এদিন সচিবালয়ে অন্য আরেকটি আলোচনা সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘২০২০ সালে কভিড মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর দুস্থ মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে ও রোগী শনাক্তকরণে ৩৩৩ এর ব্যবহার বাড়ানো হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে ৩৩৩ নম্বরকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলো।’
চলতি মাসের মধ্যেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে ৩৩৩-এ অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বাজার ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাঁধে। গত রবিবার প্রথম দিনই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। কেউ কোনো কারসাজি করে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় যাতে কোনো বাধা না থাকে, সেজন্য স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
একই দিনে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন নতুন কৃষিমন্ত্রী। নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে একজোট হয়ে যে চেষ্টা সাধারণভাবে ‘সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে, সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি বের করতে চান নতুন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন তিনি।
গত প্রায় দুবছর ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গত ডিসেম্বরেও মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। যদিও চলতি অর্থবছর সরকারের লক্ষ্যমাত্রা মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার।
অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে না। তার কারণ তিনটি। প্রথমত, উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম কমানো দরকার। সরকারের পক্ষে সেটি কঠিন। দ্বিতীয়ত, আমদানি বাড়িয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানো দরকার; কিন্তু মার্কিন ডলারের সংকটে ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। ডলারের বাড়তি দামের কারণেও খরচ বেড়েছে।
তৃতীয়ত, কিছু কিছু পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক-কর রয়েছে। সেখানেও ছাড় দেওয়া সরকারের পক্ষে সহজ নয়।