মন্ত্রীরা থামছেনই না
‘বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে এক রাতেই বিএনপির সব নেতার মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তবে তারা রাজি হননি।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। তাহলে কি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা, মামলায় গ্রেপ্তার এবং তাদের জামিন পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি সরকারের ইচ্ছায় হয়? এমন প্রশ্ন উঠেছে। এ বক্তব্য দিয়ে তিনি দলকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, আদালতকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা অভিযোগ করে আসছি যে, আদালত পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সে কথাই প্রমাণিত হয়েছে। নেতাদের বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয় তা ভিত্তিহীন। কার বিরুদ্ধে মামলা হবে, কার সাজা হবে তা সরকারের ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল।’
এক রাতেই বিএনপির সব নেতার মুক্তির প্রস্তাবের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশ রূপান্তরের ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন,
‘কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য তার এখতিয়ারের বাইরে। কৃষিমন্ত্রী কোন যুক্তিতে এ কথা বললেন তার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন। তবে আমার মনে হয়, গ্রেপ্তার, আইন-আদালত, সাজা দেওয়া কিংবা মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এ দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের এ বিষয়ে কথা বলা উচিত। অন্যদের এ বিষয়ে কথা না বলাই ভালো।’
ড. আবদুর রাজ্জাক একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘দেশকে স্থিতিশীল রাখার, সহিংসতা বন্ধ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে পুরে রাখা হয়েছে। বিএনপিকে ভোটে আনার সব চেষ্টাই করা হয়েছে। এক রাতেই সব নেতার মুক্তির প্রস্তাবেও রাজি হয়নি দলটি। তারা যদি নির্বাচনে আসে তবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে এমন কথা নির্বাচন কমিশন থেকে বারবার বলা হয়েছে। শুধু নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া নয়, বলা হয়েছিল যে, সবাইকে জেল থেকে মুক্ত করা হবে।’
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আবদুর রাজ্জাক সাহেবের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। ইচ্ছেমতো তারা যাকে খুশি তার বিরুদ্ধে মামলা করেন, যাকে খুশি তাকে ছেড়ে দেন, মুক্তি দেন। দেশে যে আইনের শাসন নেই; আওয়ামী শাসন চলছে তা দেশ-জাতির কাছে স্পষ্ট। দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকারসহ সংবিধানস্বীকৃত কোনো অধিকারই মানুষ ভোগ করতে পারছে না। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে বা যারা খুশি রাখতে পারবেন তারাই শুধু অধিকার ভোগ করবেন। তারা যত অপকর্মই করুক, বিচারের মুখোমুখি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের মহাসমাবেশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে পন্ড করে দিয়েছে এবং মামলা দিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, তা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ। জামিন না দিয়ে এখনো তাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।’
কায়সার কামাল আরও বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে একটা বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে, বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কোনো ভয়ভীতি বা প্রলোভনে তাদের টলানো যাবে না। দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরের মতো দুই-চারজন ছাড়া বাকি সবাই ইস্পাতকঠিন ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ।’
রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের অন্তর্ভুক্ত দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে এতদিন যা ঘটেছে, তা এখন প্রকাশ্যে এসেছে। এসব বিষয় দেশবাসী জানে। এখন কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে, ওনারা বিচার বিভাগের ওপর হাত চালাচ্ছেন। কার বিরুদ্ধে মামলা হবে, কাকে জেলে নেওয়া হবে, কাকে ছাড় দেওয়া হবে তার সবই সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।’